
আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির মধ্যে চাঙাভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। নতুন কমিটিতে কি পরিবর্তন আসবে, নাকি ঘুরে-ফিরে পুরোনোরাই থেকে যাবেন গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয়-এমন আলোচনা নেতাকর্মীদের মুখে মুখে। নতুন এই প্রত্যাশায় নগর বিএনপির কেউ কেউ খুশি হলেও আবার কেউ কেউ হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
তবে শেষ পর্যন্ত নেতাকর্মীরা তাকিয়ে আছেন কেন্দ্রের দিকে। কবে আসবে কাঙ্খিত ঘোষণা। আবারো কি সেই আহ্বায়ক কমিটি, নাকি পূর্ণাঙ্গ কমিটি পাচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি সেই প্রত্যাশায় প্রহর গুণছেন নেতাকর্মীরা। তবে শীর্ষ নেতারা বলছেন, নতুন কমিটি কেমন হবে এবং কারা আসছেন দায়িত্বে, সে সিদ্ধান্ত স¤পূর্ণ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতেই।
নেতাকর্মীরা জানান, চলতি সপ্তাহের মধ্যে সেই কাঙ্খিত কমিটি ঘোষণার জোর সম্ভাবনার কথা চাউর হচ্ছে দলের অভ্যন্তরে। নেতৃত্ব নিতে নতুন করে একাধিক নেতার দৌঁড়ঝাপও লক্ষ্য করা গেছে। বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের নগর ত্যাগে সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও সাবেক সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করকে কমিটির শীর্ষ পদে বসানোর জোর সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে।
কমিটি ভাঙার পর নিজস্ব বলয়ে আলাদা কর্মসূচি করে তার কিছুটা বার্তাও দিয়েছেন এরশাদ উল্লাহ। তারা ছাড়াও কমিটির শীর্ষ দুই পদের আলোচনায় আছেন-সাইফুল আলম, সাবেক ছাত্রনেতা নাজিমুর রহমান, বিএনপি নেতা ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তির নাম। এছাড়া নগর থেকে দক্ষিণ জেলায় নিয়ে যাওয়া আবু সুফিয়ানের নামও শোনা যাচ্ছে। সুফিয়ান বর্তমানে দক্ষিণ জেলার আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
এর মধ্যে ডাক্তার শাহাদাত ফের সভাপতি হলে স¤পাদক হবেন আবুল হাশেম বক্কর, আবার বক্কর সভাপতি হলে স¤পাদক হতে পারেন নাজিমুর রহমান। আর এরশাদ উল্লাহ সভাপতি হলে স¤পাদক হতে পারেন নাজিমুর রহমান!
তবে দলের একটি অংশ বলছে, হামলা-মামলায় পাশে থাকার কারণে চট্টগ্রামে ডা. শাহাদাত-বক্কর ভক্তের সংখ্যা বেশি। তারা শাহাদাত-বক্করের হ্যাট্রিক চান। আবার অন্যদিকে, এরশাদ উল্লাহ ও নাজিমুর রহমানকে বসাতে চান শাহাদাত বিরোধী কেন্দ্রীয় নেতাদের কয়েকজন। তাদের কেউ কেউ যুবদল সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তিকেও সাধারণ স¤পাদক বানাতে চান।
এ বিষয়ে নাজিমুর রহমান বলেন, আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে নেতাকর্মীরা ইতিবাচক হিসাবে নিয়েছেন। একটা আহ্বায়ক কমিটি তো বছরের পর বছর থেকে যেতে পারে না। তবে ডা. শাহাদাত ও আবুল হাশেম বক্করের অনুসারীরা আহ্বায়ক কমিটি বাতিলে হতাশ হয়েছেন। তারা মনে করেন আহ্বায়ক কমিটি আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তারা শাহাদাত ও বক্করকে নতুন কমিটির নেতৃত্বেও দেখতে চান।
এ বলয়ের একাধিক নেতা জানান, অতীতে আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলেন না, এমন অনেকেই এখন নেতৃত্বে আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তাদের ব্যাপারে কেন্দ্রকে সজাগ থাকতে হবে। অতীতে আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে সক্রিয় ছিলেন এবং তৃণমূলে ভালো গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে-এমন ত্যাগী নেতাকর্মীদের প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে এ কমিটিতে।
এমন আভাস পাওয়া গেছে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক স¤পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের কথায়। তিনি বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবেন সেভাবেই মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি হবে। আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামের বিষয়টি মাথায় রেখে ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের মধ্য থেকে নতুন নেতৃত্ব আসবে, এমনটাই মনে করছি।
সদ্য দায়িত্ব পাওয়া সহ-সাংগঠনিক স¤পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল বলেন, এরই মধ্যে বিএনপির যে পুনর্গঠন হয়েছে, তাতে মাঠ পর্যায়ে যারা সক্রিয় ছিলেন, আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন এবং তৃণমূলে যাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, এ ধরনের নেতাদেরই নিয়ে আসা হয়েছে। আমার মনে হয়, একই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম মহানগর কমিটিও হবে। কর্মীবান্ধব, কর্মঠ, ত্যাগী ও দলের দুঃসময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে যারা মাঠে ছিলেন এবং থাকবেন তাঁদেরই মূল্যায়ন করা হবে বলে আমি মনে করি। অভ্যন্তরীণ জরিপ হয় সবসময়। সেই জরিপ অনুযায়ী মূল্যায়ন হয়ে থাকে।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে চট্টগ্রামে বিএনপির প্রথম সমাবেশ হয়েছে আজ শনিবার (৬ জুলাই)। কমিটি ঘোষণার সময়ে ওই সমাবেশকে মোক্ষম পুঁজি বলে মনে করছেন নগরের পদপ্রত্যাশী নেতারা। সমাবেশ ঘিরে লন্ডনে নিজেদের শক্তির জানান দিতে নিজস্ব বলয়ে আলাদা আলাদা শোডাউন করেছে পদ প্রত্যাশী নেতাকর্মীরা।
আলাপ কালে দলের একাধিক নেতা জানান, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপিতে কেন্দ্রীয় নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমান ও মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনকে ঘিরে আলাদা বলয় রয়েছে। অন্তর্কোন্দল এড়াতে এ তিন বলয়ের মধ্যে সমন্বয় করে নতুন নেতৃত্ব ঠিক করা হতে পারে। আবার আন্দোলন-সংগ্রামে নেতাদের কার কী ভূমিকা ছিল, তাও মূল্যায়ন করা হতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এর আগে ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর ডা. শাহাদত হোসেনকে আহ্বায়ক ও আবুল হাশেম বক্করকে সদস্য সচিব করে ৩৯ সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির নেতৃবৃন্দকে দ্রুততম সময়ে নগরের থানা ও ওয়ার্ড কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশনা দেয় কেন্দ্র। কিন্তু কয়েক দফা উদ্যোগ নিলেও তা সম্ভব হয়নি। ২০২১ সালের অক্টোবরে পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে এসে কেন্দ্রের নির্দেশে তা স্থগিত করা হয়।
এর আগে ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট ডা. শাহাদাতকে সভাপতি ও আবুল হাশেম বক্করকে সাধারণ স¤পাদক করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়, যা পরের বছর ১০ জুলাই ২৭৫ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়। এরও আগে ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সভাপতি এবং ডা. শাহাদাত হোসেন সাধারণ স¤পাদক ছিলেন নগর বিএনপির।