বৃহস্পতিবার- ২৭ মার্চ, ২০২৫

নতুন বছরের শুরুতে খুলেছে এস আলম গ্রুপের সব বন্ধ কারখানা

নতুন বছরের শুরুতে খুলেছে এস আলম গ্রুপের সব বন্ধ কারখানা
print news

তুন বছরের প্রথম দিনে বুধবার সকাল থেকে খুলে দিয়েছে চট্টগ্রাম ভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের সব বন্ধ কারখানা। বছরের শেষ দিন মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এস আলম গ্রুপের মানবস¤পদ ও প্রশাসন বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে কারখানাগুলো খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।

এর আগে ব্যাংকের অসহযোগীতায় কাঁচামাল আমদানি করতে না পারার কারণে গত ২৪ ডিসেম্বর হঠাৎ কারখানাগুলো বন্ধ ঘোষণা করে এস আলম গ্রুপ কর্তৃপক্ষ। কারখানাগুলোতে ১২ হাজারেরও বেশি কর্মী কাজ করেন।

কারখানাগুলো হলো- চিনি প্রক্রিয়াজাত কারখানা এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ, ই¯পাতের পাত প্রক্রিয়াজাত কারখানা এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস ও ইনফিনিটি সি আর স্ট্রিপস ইন্ডাস্ট্রিজ, ঢেউটিনসহ ই¯পাতপণ্য তৈরির কারখানা এস আলম স্টিল, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস নফ, চেমন ই¯পাত ও গ্যালকো স্টিল এবং ব্যাগ তৈরির কারখানা এস আলম ব্যাগ লিমিটেড।

এর মধ্যে ঢাকাভিত্তিক গ্যালকো স্টিল ছাড়া বাকি সব কারখানা চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার কালারপুল ও ইছানগরে কর্ণফুলী নদীর পাড় মইজ্জারটেক এবং বঙ্গোপসাগর উপকুলীয় বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা ইউনিয়ন এলাকায় অবস্থিত।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে ২৪ ডিসেম্বর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা কারখানাগুলো বন্ধের নোটিশ প্রত্যাহার করা হলো। ১ জানুয়ারি থেকে কারখানাগুলো চালুর আদেশ কার্যকর হবে। সেই মোতাবেক নতুন বছরের প্রথম দিন বুধবার সকালে কারখানাগুলোতে কাজে যোগ দিয়েছেন সকল শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারি ও শ্রমিকরা।

বন্ধের নোটিশ দেখে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন শ্রমিকেরা। যারা এখন কাজে যোগ দিতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের শ্রমিক আমজাদ হোসেন এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বন্ধের সময় আমরা খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কারণ আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। কাজ করতে না পারলে তো পেটে খাবার জোটবে না। এখন কারখানা খুলে দেওয়ায় আমি এবং আমার সহকর্মীরা খুব খুশি।

কয়েকজন শ্রমিক বলেন, এস আলম গ্রুপ কী করেছে, সেটার জন্য শ্রমিক-কর্মচারিরা দায়ি নয়। সেটার জন্য সরকার দায়ি। সরকার এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থাই নিক, কারখানাগুলো যেন বন্ধ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ কারখানাগুলো দেশের সম্পদ।

এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের ডিজিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, কারখানা খোলার নোটিশ পেয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। কারখানাগুলো উৎপাদন যাতে ঠিক থাকে আমাদের খেয়াল সেদিকে। তিনি আরও বলেন, এস আলম গ্রুপের বন্ধ হওয়া ছয় কারখানায় নিয়োগপ্রাপ্ত এবং ক্যাজুয়াল মিলে ১২ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী-শ্রমিক রয়েছেন। তাদের দিক বিবেচনা করা সরকারের দায়িত্ব।

তবে এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের উৎপাদন ব্যবস্থাপক নাজিম উদ্দীন বলেন, ব্যাংকের সহযোগিতা না পাওয়ায় কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছিল না। তাই সাময়িকভাবে কারখানাগুলো বন্ধ করা হয়েছিল। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হচ্ছে।

উল্লেখ্য, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক দখল করে নেয়। এরপর আরও একাধিক ব্যাংক ও বিমা দখল করে নামে-বেনামে ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে নেয়। পাশাপাশি গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামেও ঋণ অনুমোদন করা হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এসব ব্যাংক এস আলম মুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলো হলো ন্যাশনাল ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এক সাক্ষাৎকারে বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে সরকারপ্রধানের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় ব্যাংক খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন।

এর মধ্যে বিতর্কিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলম একাই বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি পাচার করেছে। আন্তর্জাতিক মানদন্ডে ব্যাংক ডাকাতির এটাই সবচেয়ে বড় ঘটনা।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page