
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে পোস্টার-ব্যানার ও হ্যান্ডবিল তৈরীতে চট্টগ্রামের ছাপাখানায় ২০০ কোটি টাকার ব্যবসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
প্রতীক পাওয়ার পর থেকে নগরীর আন্দরকিল্লায় ছাপাখানাগুলোতে সকাল-সন্ধ্যা কাজ করছেন ছাপাখানার শ্রমিকরা। ছাপাখানা শ্রমিকরা বলছেন, কাজের ব্যস্ততার কারণে খাবার খাওয়ার সময়ও মিলছে না। সকালের খাবার খেতে হচ্ছে দুপুরে। দুপুরের খাবার সন্ধ্যায়। রাতের খাবার জুটছে শেষ রাতে।
ছাপাখানা ব্যবসায়ীরা জানান, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তেমন উল্লেখযোগ্য ব্যবসা করতে পারেননি তারা। যদিও গত দুই নির্বাচনকে ঘিরেও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিলেন ছাপাখানা মালিকরা। কিন্তু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে ব্যবসা হওয়ার কথা ছিল, সে রকম কোনো ব্যবসা করতে পারেননি তারা। অনেক ব্যবসায়ী পুঁজি হারাতে বসেছিলেন। কারণ সম্ভাব্য নির্বাচনী ব্যস্ততাকে ঘিরে আগে থেকেই অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে রেখেছিলেন। কাগজ ও কালি কিনে রেখেছিলেন।
তবে এবার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পোস্টার, ব্যানার, স্টিকার, হ্যান্ডবিল তৈরির চাহিদা বেড়েছে। নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে বিপরীতে ১২১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, সুপ্রিম পার্টি, তরিকত ফেডারেশনসহ বিভিন্ন দলীয় প্রার্থী রয়েছেন ১০৩ জন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ১৭ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অধিকাংশই হেভিওয়েট, যার প্রভাব পড়েছে ছাপাখানাগুলোতে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই বেশি অর্ডার দিচ্ছেন ব্যানার-পোস্টার ছাপানোর।
আন্দরকিল্লার রাজাপুকুর লেনের নাদিরা প্রিন্টার্সে দেখা গেছে ছাপাখানার সর্বত্র পোস্টার রাখা। স্থানসংকুলান করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে শ্রমিকদের।
প্রেস বাজারের এম খান প্রিন্টার্সের শ্রমিকরা জানান, কয়েকদিন ধরে ছাপাখানা বন্ধ করা হয়নি। সব শ্রমিক ওভারটাইম করছেন। এ ছাড়া রাতে-দিনে দুই ভাগ হয়ে কাজ করছেন শ্রমিকরা। শুধু এম খান প্রিন্টার্স নয়, আন্দরকিল্লার প্রতিটি ছাপাখানাতেই একই চিত্র দেখা গেছে।
নাদিরা প্রিন্টার্স ছাপাখানার শ্রমিক হ্নদয় চৌধুরী বলেন, ‘বেশ কয়েকদিন বাসায় যেতে পারছি না। নির্বাচন উপলক্ষে ছাপার কাজ বেড়েছে। এমনকি আমরা ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করারও সময় পাচ্ছি না। এ চাপ নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত চলবে।’
এই ছাপাখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে সপ্তাহখানেক আগে ৩০ লাখ টাকার পিভিসি পেপার নিয়ে এসেছিলাম। দুই দিনে সেগুলো সব বিক্রি হয়ে গেছে। আবার অর্ডার দিয়েছি। এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রচুর অর্ডার পাচ্ছি।’
চট্টগ্রাম প্রেস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল হারুণ বলেন, ‘এবার প্রায় ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে মনে করছি। গত দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছাপাখানায় সরগরম ছিল না। অনেক ব্যবসায়ীকে লোকসান গুনতে হয়েছিল। এবারে নির্বাচনি মাঠে প্রার্থী বেশি থাকায় ব্যানার, পোস্টার, লিফলেট, স্টিকার ছাপানো হচ্ছে বেশি। তাই আমাদের এবার আশানুরূপ ব্যবসা হবে।’
চট্টগ্রাম প্রেস মালিক সমিতির তথ্যমতে, প্রিন্টার্স সমিতিতে ৫০০ সদস্য রয়েছেন। এর বাইরেও বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আরও ৫০০ ব্যবসায়ী ব্যবসা করছেন। এসব ছাপাখানায় কাজ করছেন প্রায় ১ লাখ শ্রমিক।
প্রেস মালিকরা জানান, প্রতিটি পোস্টার ৪ টাকা, লেমিনেটিং করা পোস্টার ৯ থেকে ১০ টাকা, লিফলেট ১ টাকা, পিভিসি প্রিন্ট প্রতি বর্গফুট ১১ থেকে ১৪ টাকায় ছাপাচ্ছেন। সরকারের নীতিমালা মেনেই ছাপানো হচ্ছে ব্যানার পোস্টার লিফলেট ও স্টিকার।
ছাপাখানাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার যে ১৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন, তারাও আগের তুলনায় বেশি লিফলেট ও পোস্টার ছাপাচ্ছেন। আগের দুটি নির্বাচনের বছর ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছিল, এবার ১৮০ থেকে ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে।
এইচজে সলিউশনের মালিক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমি দুই থেকে তিন কোটি টাকার ব্যবসা করতে পারব। এবারের মতো জমজমাট ব্যবসা আগে হয়নি। কারণ আমরা বিগত দুই নির্বাচনে কোনো ধরনের ব্যবসা করতে পারিনি।’
ঈশান/মউ/সুম













































