পারমাণবিক জ্বালানি ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল বা ইউরেনিয়ামের ঐতিহাসিকভাবে হস্তান্তরের মাধ্যমে পারমাণবিক শক্তির যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ। এতে স্থান পেল বিশ্বের ৩৩তম ইউরেনিয়াম ব্যবহারকারী দেশের তালিকায়।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বিকেল ৩টা ৫২ মিনিটে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে অনলাইনে উপস্থিতিতে ঐতিহাসিক ইউরেনিয়াম হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক মিঃ রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসি।
হস্তান্তর উপলক্ষে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আয়োজন করা হয় গ্রাজুয়েশন সেরিমনি। দুই দেশের সরকার প্রধানের অনুমতিতে সেখান পারমাণবিক জ্বালানির একটি নমুনা রেপলিকা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের হাতে হস্তান্তর করেন রুশ পরমাণু শক্তি করপোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক (ডিজি)আলেক্সি লিখাচেভ। এটি হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হলো বাংলাদেশ।
পারমানবিক জ্বালানি হস্তান্তর সার্টিফিকেট ও মডেল প্রদান ও গ্রহণে যথাক্রমে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অনুমতিক্রমে রোসাটমের ডাইরেক্ট জেনারেল কর্তৃক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর নিকট পারমাণবিক জ্বালানি সার্টিফিকেট ও মডেল হস্তান্তর করা হয়। এসময় পারমাণবিক জ্বালানি মডেলসহ একটি সুসজ্জিত নৌকা নিয়ে প্রবেশ করেন রাশিয়ান সাংস্কৃতিক দল পরে সেটি বহন করে নিয়ে আসে বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দল।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আলী হোসেন। সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।
অনুষ্ঠানে পাবনা ৫ আসনের সংসদ সদস্য সহ পাশবর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে আমন্ত্রিত সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া স্থানীয় মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ, সকল সরকারি বে- সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জেলা, উপজেলা, ঢাকা সহ দেশের বাহিরে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে এসে পৌঁছায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জ্বালানির প্রথম চালান। পরেরদিন ২৯ সেপ্টেম্বর বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় জ্বালানি নেওয়া হয় প্রকল্প এলাকায়।
উল্লেখ্য, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের সবচেয়ে আলোচিত ও বৃহৎ প্রকল্প। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে সরকারের ব্যয় ২২ হাজার ৫২ কোটি ৯১ লাখ ২৭ হাজার টাকা। আর রাশিয়া থেকে ঋণ সহায়তা হিসেবে আসছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৪ সালের প্রথম দিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করবে দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। আর ২০২৬ সালের মাঝামাঝি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিট চালু হতে পারে। দুটি ইউনিট চালু হলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। প্রথম ইউনিটের ভৌত এবং অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়ে গেছে ৯০ শতাংশের বেশি। আর দ্বিতীয় ইউনিটের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ।
এদিকে রুপপুরে পারমাণবিক জ্বালানি আসার খবরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যপক উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে তারা আনন্দ মিছিল মিষ্টি বিতরণসহ প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়নের ছবি দিয়ে বিলবোর্ড ব্যানার টানিয়ে প্রকল্প এলাকাতে সৌন্দর্যবর্ধন করেছে।