বুধবার- ৩০ এপ্রিল, ২০২৫

পূরোনো ইট-রাবিশ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে কালুরঘাট-চাক্তাই সড়ক!

জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস ঠেকাতে ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক)। কিন্তু এ প্রকল্প নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছে। এতে প্রকল্পটি নড়েবড়ে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, ২ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পে নতুন ইট ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নগরীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙা ভবন ও সড়কের ব্যবহৃত পূরোনো ইট ও রাবিশ দিয়ে এই সড়ক নির্মাণ করছে।

২১ নভেম্বর মঙ্গলবার সকালে সরেজমিন গিয়েও সড়ক নির্মাণে পূরনো ইট ও রাবিশসহ নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করতে দেখা গেছে। পূরনো ইট ও রাবিশের বড় স্তুপ স্তুপ সেখানে জমা করা হয়েছে। এদিকে দফায় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়িয়ে এখনও কাজ শেষ করতে পারেনি প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স।

এ বিষয়ে জানতে গিয়ে জানা যায় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটির পিডি ও চউক নির্বাহী প্রকৌশলী রাজিব দাশ বিদেশ ভ্রমণে রয়েছেন। প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ ভ্রমণে গেলেও র্মূলত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোশকতায় তিনি বিদেশ ভ্রমণ করছেন। এ কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কল্পলোক আবাসিক এলাকার ২ নম্বর রোডের শেষ মাথায় প্রকল্পটির সাইট অফিস। অফিসটির বাম পাশে বিভিন্ন এলাকা থেকে আনা হয়েছে ভবনে ব্যবহৃত পুরাতন ইট। যা বিশাল স্তুপ আকারে রাখা হয়েছে।

সেখানে একদল শ্রমিক ইট ভাঙার মেশিন দিয়ে পুরাতন ইট ভেঙে কংক্রিট তৈরি করছে। আর কেউ ট্রাকে তুলছে। এসব কংক্রিট প্রকল্পের বিভিন্ন ঢালাইয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে জানিয়েছেন সড়ক নির্মাণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্সের প্রকৌশলী ও প্রজেক্ট ম্যানেজার (পিএম) অসিম কুমার হালদার বলেন, পুরাতন ইট দিয়ে কংক্রিট তৈরি করা হচ্ছে ঠিক আছে। এসব কংক্রিট প্রকল্পে ব্যবহার করব না। অন্য জায়গায় ব্যবহার করব। অন্য কোন জায়গা বা কোন প্রকল্পে ব্যবহার করবে তা নিশ্চিত করতে পারেননি।

চউক সূত্র জানায়, জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস ঠেকাতে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী তীরবর্তী কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত চার লেনের সড়ক কাম বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া হয়। ২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। সাড়ে আট কিলোমিটার দীর্ঘ এই বাঁধের ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ২৭৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

প্রকল্পটি তিন বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। তবে প্রায় পাঁচ বছর সময় পার হলেও গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটির কাজ এখনও শেষ করতে পারেনি বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)।

এই সময়ে দুই দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি ৪৭১ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। এতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান, ‘প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ও ঠিকাদাররা যোগসাজশে বারবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ায় মূলত হরিলুট করার জন্য। প্রকল্প নেওয়ার আগেই প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় নির্ধারিত থাকে। সেই অনুসারে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয় না কেন? এমন প্রশ্ন সচেতন মহলের।

ঈশান/সুমি/খম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page