মঙ্গলবার- ২১ জানুয়ারি, ২০২৫

সীতাকুন্ড এম এ কাশেম রাজা উচ্চ বিদ্যালয়

প্রধান শিক্ষিকা তাসলিমার অস্তিত্ব নিয়ে খেলছেন রাজা কাশেম

প্রধান শিক্ষিকা তাসলিমার অস্তিত্ব নিয়ে খেলছেন রাজা কাসেম
print news

ট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে এম এ কাশেম রাজা উচ্চবিদ্যালয় থেকে বেআইনিভাবে বিতাড়িত প্রধান শিক্ষিকা তাসলিমার অস্তিত্ব নিয়ে খেলছেন বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এম এ কাশেম রাজা প্রকাশ রাজা কাশেম ওরফে ভুমিদস্যু রাজা কাশেম ওরফে লুচ্ছা কাশেম রাজা।

বিদ্যালয় থেকে প্রধান শিক্ষিকাকে শুধু বিতাড়িত করেনি, তার নামে নানা কুৎসা রটিয়ে বেড়াচ্ছেন রাজা কাশেম। এমনকি ওই শিক্ষিকার কন্যা নিয়েও কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলে বেড়াচ্ছেন। এর মুলে ওই শিক্ষিকা চাকরি ফিরে পেতে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এমনকি প্রতিকার চেয়ে মামলা করেছেন উচ্চ আদালতেও।

পক্ষান্তরে বিদ্যালয়ের সভাপতি রাজা কাশেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ মুখে আনতেও শিউরে উঠছেন প্রধান শিক্ষিকা তাসলিমা। তাসলিমা শুধু বলে যাচ্ছেন, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) দেয়া একজন শরীরচর্চা শিক্ষককে বিদ্যালয়ে যোগদান করতে দেননি সভাপতি রাজা কাশেম। এ কারণে সভাপতিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় এনটিআরসিএ। এরপর আমার ওপর ক্ষিপ্ত হন রাজা কাশেম।

কিন্তু বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকরা বলছেন, প্রকৃত ঘটনা তা নয়, সভাপতি রাজা কাশেম প্রকৃতপক্ষে একজন নারীলোভি মানুষ। তার একাধিক নারীঘটিত ঘটনা রয়েছে। তম্মধ্যে দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন, গৃহকর্মী। তাকে ধর্ষণের ঘটনায় বিয়ে করতে বাধ্য হন। পরে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বানিয়ে ঘরে তুলেন। এ ঘটনায় তার বড় স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে আলাদা বসবাস করছেন। এরপরও তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষিকাদের উপর খারাপ নজর ছাড়েননি।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে গুদাম থেকে রেলের মূল্যবান সরঞ্জাম উধাও!

এছাড়া প্রধান শিক্ষিকাকে তিনি নিজের মত করে পরিচালনার চেষ্টা করেছেন। যাতে বিদ্যালয়ের অর্থ লোপাট করা যায়। এতে সম্মতি না দেওয়ায় রাজা কাশেমের রোষানলে পড়ে প্রধান শিক্ষিকা তাসলিমা। এছাড়া তার কুনজরে পড়ে তারই গাড়ির ড্রাইভারের গর্ভবতি স্ত্রীর মৃত্যু হয়।

শিক্ষকরা জানান, রাজা কাশেম একজন কুখ্যাত ভুমিদস্যু। এম এ কাশেম রাজা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নামে তিনি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে শীতলপুরে বিস্তীর্ণ মূল্যবান জায়গা দখল করে। যেখানে তিনি নানা ধরণের গাছপালা ও দোকানপাট, ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করছেন।

শুধু তাই নয়, সীতাকুন্ডের উপকুলীয় এলাকায় শিপ ইয়ার্ডের নামে জালিয়াতি করে বনভুমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ১৮৯ একর জমি লীজের নামে দখল করে। যা পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা বেলার মামলায় উচ্চ আদালত লীজ খারিজ করে দেয়।

আর এ সংক্রান্ত নানা অপকর্ম মুখে বলতেও ভয় পাচ্ছেন প্রধান শিক্ষিকা তাসলিমা। শিক্ষিকা হিসেবে তিনি যেমন ভদ্র, তেমনি তার বাড়ি বরিশাল হওয়ায় রাজা কাশেমের বিরুদ্ধে কোন রকম অভিযোগ মুখে না বলে শুধু চাকরি ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

সূত্র জানায়, প্রধান শিক্ষিকা তাসলিমা ১৭ বছর ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৭ সালের ৫ আগস্ট বিদ্যালয়ের সভা চলাকালে সভাপতি এম এ কাশেম রাজা তাঁকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন। একপর্যায়ে সভাপতি তাঁর মুঠোফোন কেড়ে নেন। হাতব্যাগ কেড়ে নিয়ে তা তল্লাশি করেন। পরে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্র লিখিয়ে তাতে সই নেন।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে গুদাম থেকে রেলের মূল্যবান সরঞ্জাম উধাও!

সূত্র আরও জানায়, ওই ঘটনার পরপর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সভাপতি পরিচালনা কমিটির সভা ডেকে বিভিন্ন দপ্তরে প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছায় পদত্যাগের বিষয়টি জানিয়ে দেন। ওই সালের ১৩ আগস্ট শনিবার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন বিষয়টি তদন্ত করতে বিদ্যালয়ে যান। কিন্তু টাকার লোভে পড়ে তিনি সভাপতি রাজা কাশেমের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি।

একইভাবে বিষয়টি জানতে পেরে শিক্ষক সমিতির নেতারাও বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। এ বিষয়ে সীতাকুন্ড উপজেলা শিক্ষক সমিতির তৎকালীন সভাপতি মো. হাবিব উল্লাহ বলেন, ওই শিক্ষককে ভয়ভীতি দেখিয়ে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে পদত্যাগপত্র লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু সভাপতির ভয়ে এখন কোনো শিক্ষক মুখ খুলছেন না।

এরপর ৮ আগস্ট এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত আবেদন করেন পদচ্যুত প্রধান শিক্ষিকা তাসলিমা। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক মৃনাল কান্তির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে মৃণাল কান্তির প্রতিবেদনে রাজা কাশেমের অনৈতিক কর্মকান্ডের বিষয়টি উঠে আসে। এতে তাসলিমাকে প্রধান শিক্ষিকা পদে বহাল রাখার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু পরে তৎকালীন বোর্ড চেয়ারম্যানও এ বিষয়ে আর কোন পদক্ষেপ নেননি।

ফলে প্রধান শিক্ষিকা তাসলিমা বর্তমানে উচ্চ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। যা শুনানির অপেক্ষায় সিরিয়ালে রয়েছে। তাসলিমা বলেন, বিদ্যালয় থেকে পদচ্যুত করার পর থেকে আমার বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। এতে আমার জীবন-যাপন করা অনেকটা কষ্ঠসাধ্য হয়ে উঠেছে। এছাড়া সভাপতি রাজা কাশেম আমি এবং আমার মেয়ে নিয়ে নানা রকম কুরুচি পূর্ণ কথাবার্তা বলে বেড়াচ্ছে। এতে আমি সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপ্রন্ন হচ্ছি। তিনি আমার অস্তিত্ব নিয়ে খেলা করছেন। আমি এর প্রতিকার চাই।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে গুদাম থেকে রেলের মূল্যবান সরঞ্জাম উধাও!

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এম এ কাশেম রাজা বলেন, ওই মহিলা এখানে অনেক অনিয়ম করেছেন। ওই দিন (৫ আগস্ট) সভা চলাকালে তিনি মোবাইলে কথা রেকর্ড করছিলেন। তখন আমি মুঠোফোন কেড়ে রেখে দিয়েছি। এরপর তাঁর স্বামী এসে আমাকে গালিগালাজ করে। আমি পরে পুলিশ ডাকি। একপর্যায়ে তাসলিমা স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্র লিখে চলে যায়।

রাজা কাশেম বলেন, ওই মহিলার চরিত্র খারাপ। তার মেয়ের চরিত্রও খারাপ। তার মেয়ে বিদ্যালয়ে এসে এক শিক্ষকের সাথে ফষ্টি-নষ্টি করে। এ ঘটনায় ওই মেয়েকে বিদ্যালয়ের কক্ষে ৮ ঘন্টা আটকে রাখা হয়েছিল। পরে আমি এসে ছেড়ে দিই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাসলিমার স্বামী বলেন, ঘটনার দিন আমি ঘরের চাবির জন্য স্কুলে যাই। তখন সভাপতি আমাকে দেখে দুর্ব্যবহার করেন। একপর্যায়ে আমাকে লাঞ্ছিত করেন। এমনকি আমার পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলার হুমকি দেন সভাপতি। আর আমার স্ত্রী ও মেয়ে নিয়ে তিনি সব মিথ্যা কথা বলছেন।

উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সালে সীতাকুন্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের শীতলপুর এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশ ঘেষেই প্রতিষ্ঠা করা হয় এম এ কাশেম রাজা প্রাথমিক বিদ্যালয়। এরপর গড়ে তোলা হয় এম এ কাশেম রাজা উচ্চ বিদ্যালয়।

ঈশান/খম/সুপ

আরও পড়ুন

No more posts to show