জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে আলোচনার মধ্যে ‘মাইনাস টু’র আশঙ্কাও কাজ করছে অনেক রাজনীতিকের মধ্যে। বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির দায়িত্বশীল কোনো কোনো নেতার বক্তব্যে ‘মাইনাস টু’র শঙ্কার কথা শোনা যাচ্ছে।
২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে দুই প্রধান নেত্রী খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে জেলে নেওয়ার পর ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’র আলোচনা জোরদার হয়েছিল। তখন তাদের দলসহ অনেকেই অভিযোগ করেছিল যে, ‘দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে’, যা পরে ‘মাইনাস-টু ফর্মুলা’ হিসেবে পরিচিতি পায়।
বর্তমান প্রেক্ষাপটেও সেই ফর্মুলা ফের জোরদার হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনীতিকরা। তবে এবার দুই নেত্রী নয়, হতে পারে দুই দল। এর মধ্যে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ এখন একপ্রকার মাইনাস হয়ে গেছে। এর সাথে হয়তো যোগ হতে পারে বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন বলেছেন, মাইনাস টু’র দুরভিসন্ধি করে কোনো লাভ হবে না। বাংলাদেশের সচেতন জনতা এমন অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আর কাউকেই যেতে দেবে না। তবে সরকারের একজন উপদেষ্টা সম্প্রতি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, মাইনাস-টু নিয়ে কোনো চিন্তা বর্তমান সরকারের নেই।
এ বিষয়ে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, মাইনাস টু’র ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দেশের রাজনীতিতে অপরিহার্য। যারা এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেন, তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন। ষড়যন্ত্র করে ওয়ান-ইলেভেনেও লাভ হয়নি, এখনো হবে না।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক আরও বলেন, পতিত স্বৈরাচার তাদের শাসনামলে দেশ থেকে লক্ষ-কোটি হাজার টাকা পাচার করেছে। পাচারকৃত টাকা দিয়ে তারা এখন দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তে লিপ্ত। দেশ স্থিতিশীল করাটাই অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বিএনপি যে কোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। মাইনাস টু’র ষড়যন্ত্র করে কারো লাভ হবে না বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলার বিষয়ে সরকারকে সতর্ক করার পর বিষয়টি নিয়ে দলটির ভেতরে ও বাইরে নানা ধরনের আলোচনা আছে।
মাইনাস টু বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আসলে বিরাজনীতিকীকরণের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করছি। আমরা সব সময় বলে আসছি, সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনের জন্য যাতে দ্রুত জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী গণতন্ত্রে উত্তরণে সম্ভব হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেছেন, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে বিএনপি ও জিয়া পরিবার এক সূত্রে গাঁথা। এখানে মাইনাস ও প্লাস কারো ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় হওয়ার সুযোগ তেমন নেই। বিএনপির একটা প্রিন্সিপাল আছে, যা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী। আর বাংলাদেশের একটা সত্তা আছে, যা সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। তাই মাইনাস আর প্লাস সবকিছুই জনগণের ওপর নির্ভর করবে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ জানিয়েছেন, ‘বিএনপিকে বাদ দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। এখন বিএনপি কেন এমন ভাবছে, তা আমাদের জানা নেই।’
অন্যদিকে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘মাইনাস টু বর্তমান সরকারের কোনো এজেন্ডা নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো চিন্তায় এমন কিছু আপাতত নেই।’
নৌ উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ২০২৫ সালেই জাতীয় নির্বাচন। এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বলছেন, এটা উপদেষ্টার ব্যক্তিগত অভিমত। ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণের সময় এ কথা জানান প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি, তাহলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।’
বিজ্ঞজনের মতে, জাতীয় নির্বাচন কিন্তু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এর সঙ্গে যদি আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও উন্নত করতে চাই, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করতে চাই, তাহলে প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিস্তৃতি ও গভীরতা অনুসারে নির্বাচন কমিশনকে সময় দিতে হবে।
প্রসঙ্গত, জুলাই অভ্যুত্থানে পতন হয় শেখ হাসিনার। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই চলছে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে আলোচনা-সমালোচনা। সেনাপ্রধান থেকে শুরু করে বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে একেকজন একেকটা সময় উল্লেখ করে কথা বলেছেন। তবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সূত্র বলছে, তারা যখন বলবেন নির্বাচন হবে, সেটাই সঠিক দিনক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হবে।