
জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ইস্যুকে কেন্দ্র চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে মাহফুজুল হাসান তারেক (২৮) নামে এক আলেমের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঈদের আগের দিন রবিবার (৩০ মার্চ) দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টার দিকে বাঁশখালী পৌরসভার মিয়ার বাজারে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীরা হামলার এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
মাওলানা মাহফুজুল হাসান তারেক বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। আর এ ঘটনায় পুলিশ প্রথমে মামলা নিতে চাইনি। ভিকটিমের আশঙ্কাজনক অবস্থার খবর পেয়ে গত ১ এপ্রিল থানায় মামলা নেয় পুলিশ। কিন্তু মামলার কোন আসামিকে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।
এমন অভিযোগ ভিকটিম মাওলানা মাহফুজুল হাসান তারেকের ছোট ভাই মাওলানা মঈনুল হাসান হাবিবের। তিনি বলেন, হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী। গত বছর জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আমি ও আমার বড় ভাই তাদেরকে প্রতিহত করেছিলাম। এ নিয়ে তাদের সাথে আমাদের রাজনৈতিক বিরোধ রয়েছে। মূলত সেই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার ভাইয়ের উপর হামলা চালায় তারা। আর এখন আমাকেও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা।
মাওলানা মঈনুল হাসান হাবিব জানান, হামলার দিন রাতে বাঁশখালী চৌধুরী মার্কেটে শাহজাহানের দোকানে মাত্র ১৫০ টাকা দামের একটি চশমা ক্রয়কে কেন্দ্র করে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে বাকবিতন্ডা ও হাতহাতি হয়। মার্কেট কমিটির নেতৃবৃন্দরা বিষয়টি সালিশ বৈঠক করে সমাধান করে দেন। আমার ভাইও একজন ব্যবসায়ী। সেই সূত্রে সংগঠিত ঘটনা মীমাংসার সময় ওখানে ছিলেন।
পরে মিয়ার বাজার থেকে মোটরসাইকেল যুগে জলদি যাওয়ার পথে দক্ষিণ নেয়াজর পাড়া মো. হামেদ (৪৬) খালেদ (৪৯), ফুরকান (২৩), আবু হানিফ মো. নোমান (২০), ওয়াহিদুল ইসলাম (২০), আবু সাইয়েদ মো. শওকত (১৯) এর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ১৪-১৫ জনের সংঘবদ্ধ একটি দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমার ভাইয়ের উপর হামলা চালায়। এতে মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়ে আমার ভাই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। স্থানীয়রা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
তাকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা প্রথমে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। আর এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই থানায় মামলা দায়ের করার জন্য গেলে পুলিশ মামলা নিবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। পরে ভিকটিমের আশঙ্কাজনক অবস্থার খবর পেয়ে ১ এপ্রিল মামলা গ্রহণ করে। মামলা নং-১। মাহফুজুল হাসান তারেক বাঁশখালী পৌরসভার হেফাজতে ইসলামের আমীর ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী বাড়ির আলহাজ মাওলানা হাফিজুর রহমান ছেলে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বাঁশখালী থানার সাব ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) হাফিজের রহমান বলেন, মামলা নিতে চাইনি ঠিক নয়। আর মামলা নেওয়ার দায়িত্ব আমার নয়। তারা মামলা করতে এসেছে একদিন পর। পরে ওসির নির্দেশে ১ এপ্রিল দুপুরে মামলা রেকর্ড করা হয়। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। আসামিরা পলাতক রয়েছে।
তবে এ বিষয়ে ভিকটিমের ছোট ভাই মাওলানা হাবিবের অভিযোগ ভিন্ন। তিনি বলেন, হামলাকারীরা সবাই আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী। তারা সবাই বীরদর্পে বাঁশখালীতে বিচরণ করছে। গত ১৬ বছর ধরে তারা বাঁশখালীতে প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানাভাবে লুটপাট চালিয়েছে। চৌধুরী মার্কেটে ব্যবসায়ীদের জিম্মী করে চাঁদাবাজি করেছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনের পর তারা মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে বিএনপির একাংশের নেতাদের ছত্রছায়ায় আসে। ফলে তাদের প্রভাবে থানায় মামলা গ্রহণে গড়িমসি করে পুলিশ।
ভিকটিম পক্ষের তথ্যমতে, শুনেছি মামলা নেওয়ার কারণে বাঁশখালী পৌরসভা বিএনপির একাংশের আহ্বায়ক রাসেল ইকবাল পুলিশকে বকাঝকা ও গালমন্দ করেছেন। একপর্যায়ে পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার না করার আশ্বাস দিয়ে রাসেল ইকবাল থেকে রক্ষা পায়। ফলে মামলা গ্রহণের পরও পুলিশ কোন আসামিকে গ্রেপ্তার করেননি। পুলিশ আমাদের বলেছেন, বিএনপি-আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপের কারণে আসামিদের ধরতে পারছেন না।
এদিকে এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে চৌধুরী মার্কেটের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের ভয়ে এলাকার মানুষ কথা বলতে সাহস পায় না। তারা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতেন। নানা অনিয়ম ও লুটপাট করেছেন। ব্যবসায়ীরা এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। হামলায় জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তার দাবি জানান তিনি।
এদিকে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে আজ ৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বাদে আসর বাঁশখালী উপজেলা চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বাঁশখালী উপজেলা শাখা। দলটির নেতারা অবিলম্বে ঘটনায় জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, হামলার ঘটনায় আমরা মামলা নিয়েছি। আসামিরা পলাতক থাকায় পুলিশ এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ। এ নিয়ে আমাদের উপর কোন রকম চাপ নেই।
অভিযোগের বিষয়ে বাঁশখালী পৌরসভা বিএনপির একাংশের আহ্বায়ক রাসেল ইকবাল বলেন, এই ঘটনার সাথে আমি কোনভাবেই সম্পৃক্ত নই। ঘটনার দিন আমি ওমরাহ হজ্বে সৌদি আরব ছিলাম। এ নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের সাথে আমার কোন রকম কথা হয়নি। ভিকটিমের ছোট ভাই মাওলানা হাবিব ফোন করে আমাকে ঘটনাটি জানিয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের সাথে আমার কোন রকম যোগাযোগ বা সম্পর্ক নেই।