
কক্সবাজার জেলার বিআরটিএ কার্যালয়ের সহকারী মোটরযান পরিদর্শক হিসেবে টানা ৬ বছর কর্মরত ছিলেন আরিফুল ইসলাম টিপু। তৃতীয় শ্রেণির এ কর্মচারী সর্বসাকুল্যে বেতন-ভাতা পেতেন প্রায় ২৫ হাজার টাকা। অথচ এই কর্মচারীর একাউন্টেই লেনদেন হয়েছে দুই কোটি টাকারও বেশি অর্থ।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে মিলেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। ইতোমধ্যে এ কর্মচারীর একাউন্টে থাকা প্রায় দেড় কোটি টাকা অবরুদ্ধকরণের (ক্রোক) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (৩০ মে) সকালে দুদক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
দুদক সূত্র জানায়, অনুসন্ধানের শুরুতেই আরিফুল ইসলামের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স ঘাসফুল ট্রেডার্স’ নামে ডাচ বাংলা ব্যাংকের কক্সবাজার শাখার একটি একাউন্টে ২ কোটি ২ লাখ ৬৬ হাজার ৯৬৪ টাকার লেনদেনের তথ্য পায় দুদক। এরমধ্যে বর্তমানে একাউন্টটিতে ১ কোটি ৪৯ লাখ ৪৮ হাজার ৬০৭ টাকা স্থিতি রয়েছে। এসব অর্থের উৎসের সঠিক কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি আরিফ।
সরকারি চাকরিজীবী হয়েও ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকার লেনদেন সন্দেহজনক হওয়ায় স্থিতি থাকা টাকা উত্তোলন বন্ধ করতে আদালতের দ্বারস্থ হয় দুদক। দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে কক্সবাজার সিনিয়র দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল আরিফুল ইসলামের একাউন্টে থাকা ১ কোটি ৪৯ লাখ ৪৮ হাজার ৬০৭ টাকা অবরুদ্ধকরণের নির্দেশ দেন। গত ২৫ মে এ নির্দেশনা দিলেও গতকাল আদালতের নির্দেশনার চিঠিটি পৌঁছায় ব্যাংক ও দুদকের কাছে।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে এসব টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও আরিফুল ইসলামের বিষয়ে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। কমিশনের নির্দেশে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় কক্সবাজার বিআরটিএ কার্যালয়টিতে দীর্ঘ সময় ধরে নিজস্ব বলয় তৈরি করে ‘ঘুষ’ বাণিজ্য চালিয়ে আসছিলেন আরিফুল ইসলাম। নির্দিষ্ট দালালের মাধ্যমে ব্যাংকে ঘুষের অর্থ সংগ্রহ করতেন তিনি। পরবর্তীতে পদ ভেদে অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে ঘুষের টাকা বন্টন করতেন আরিফ। গেল বছর বিষয়টি প্রকাশ হলে ‘দায় সারতে’ আরিফুল ইসলামকে নোয়াখালী কার্যালয়ে বদলি করা হয়।
আরিফুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘আমাকে হয়রানি করার জন্য একটি পক্ষ দীর্ঘদিন ধরেই এমন কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। আর একাউন্টে যে অর্থ রয়েছে, তা আমার নয়। সবগুলোই আমার পারিবারিক ব্যবসার টাকা। কোন অবৈধ অর্থ তাতে নেই।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আরিফুল ইসলাম টিপু বর্তমানে নোয়াখালী জেলার বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) কার্যালয়ে একই পদে কর্মরত আছেন। তিনি কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলার এস এম পাড়ার ফজলুল হকের ছেলে। তার বিরুদ্ধে দুদক কক্সবাজার কার্যালয়ে ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। কার্যালয়টির সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নাছরুল্লাহ হোসাইন এ অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন।