শনিবার- ২৬ এপ্রিল, ২০২৫

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হচ্ছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা!

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হচ্ছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা!

গামী ১৬ এপ্রিল ভোট গ্রহণের দিন ধার্য্য ছিল চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বি কোন প্রার্থী না থাকায় ভোট গ্রহণ পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রয়োজন পড়ছে না প্রার্থীদের। সবকটি পদেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন প্রাথীরা। যাদের সবাই হচ্ছেন বিএনপি ও জামায়াতপন্থী আইনজীবী।

শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির মূখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা তারিক আহমদ বলেন, ‘সম্পাদকীয় এবং সদস্য পদসহ ২১ পদের বিপরীতে আজ মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিনে ২১ জনের মনোনয়ন বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বি নেই। আনুষ্ঠানিকভাবে আগামীকাল তাঁদের বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি। সেই সময় সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ ১৩ পদে জয় পেয়েছিল বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ঐক্য পরিষদ। আর আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ সহসভাপতিসহ ৭ পদে জয় পেয়েছিল। স্বতন্ত্র পেয়েছিল ১টি পদ। তবে এবার আওয়ামী এবং বাম ঘরানার কেউই মনোনয়ন ফরম কিনেননি!

বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত বাংলাদেশ ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল যৌথভাবে আইনজীবী ঐক্য পরিষদ নামে যৌথ প্যানেল ঘোষণা করেছিল। অপরদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ নাম বদলে এবার স্বতন্ত্র হিসেবে ‘রশিদ-জাবেদ-মাহতাব পরিষদ’ রাখা হয়।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণের তারিখ ঘোষণার পরও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন হয়নি। ভোটের মাত্র ৬ দিন আগে ৪ ফেব্রুয়ারি সেই সময়ের নির্বাচন কমিশনের ৫ সদস্য পদত্যাগ করেছিলেন। পদত্যাগপত্রে বিভিন্নভাবে ‘হেনস্তা, ভয়ভীতি ও হুমকির সম্মুখীন’ হওয়ার কথা উল্লেখ করেছিলেন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা।

এরপর ১০ ফেব্রুয়ারি সমিতির নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সমিতির সাধারণ সভায় ৫ সদস্যের একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। পরদিন ১৭ ফেব্রুয়ারি অ্যাডহক কমিটিকে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির বিধান অনুসারে ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

নির্বাচন উপলক্ষে গত ১৮ মার্চ নির্বাচন কমিশন গঠন করে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটি। তফশিল অনুযায়ী, ১০ ফেব্রুয়ারি সমিতির লাইব্রেরি থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার শেষ দিন ছিল। আর আজ অর্থাৎ ১১ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন প্রত্যাহার ও বৈধ প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ, ১২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন প্রত্যাহার ও চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল।

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সভাপতি পদে আবদুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক পদে মোহাম্মদ হাসান আলী চৌধুরী, সহসভাপতি পদে আলমগীর মোহাম্মদ ইউনূস, সহসাধারণ সম্পাদক পদে মো. ফজলুল বারী, অর্থ সম্পাদক পদে মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, পাঠাগার সম্পাদক পদে তৌহিদুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে আশরাফি বিনতে মোতালেব, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ম. মঞ্জুর হোসেন এবং তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক পদে আবদুল জব্বার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারা সকলেই আইনজীবী ঐক্য পরিষদ প্যানেলের।

এছাড়া ১১টি সদস্য পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন আহসান উল্ল্যাহ মানিক, আসমা খানম, বিবি ফাতেমা, হেল উদ্দিন, মেজবাহ উল আলম আমিন, মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী, মো. রুবাইয়াতুল করিম, মো. শাহেদ হোসেন, মোহাম্মদ মোরশেদ, রাহিলা গুলশান এবং সাজ্জাদ কামরুল হোসেন।

চট্টগ্রামের আওয়ামী সমর্থিত আইনজীবীরা বলছেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সবকটি পদে নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা সমিতির ১৩২ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হলে দায়িত্বপ্রাপ্তদের প্রতি সম্মান থাকে না বলেও মত দিয়েছেন কেউ কেউ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সাধারণ আইনজীবী বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলেও বিএনপি ও জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা হেনস্তার শিকার হয়েছেন।

বাধা প্রসঙ্গে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার বলেন, ‘আমরা ২১ জন ফরম নিয়েছি। অন্যরা ফরম নিতে না এসেই কুৎসা রটনা করছে। তাদের সৎ সাহস নেই। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সময় যারা ছাত্র-জনতার ওপর লাঠি নিয়ে হামলা করেছিল, তারাই এসব প্রচার করছে।’

একই প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের মূখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা তারিক আহমদ বলেন, ‘লাইব্রেরিতে মনোনয়ন ফরম দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কী হয়েছে তা আমরা জানি না।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page