বৃহস্পতিবার- ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫

বিমানবন্দরে নাটকীয়তার পর ধরা, যা বললেন নায়িকা নিপুণ

বিমানবন্দরে নাটকীয়তার পর ধরা, যা বললেন নায়িকা নিপুণ
print news

শেখ সেলিমের সঙ্গে গোপন শারীরিক সম্পর্কসহ নানা ইস্যুতে আলোচিত সমালোচিত ঢাকাই চলচ্চিত্রের নায়িকা নাসরিন আক্তার নিপুণ কৌশলে দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টার গুঞ্জন লোকমুখে শোনা যাচ্ছিল গেল ৫ আগস্টের পর থেকেই। অতি সম্প্রতি সিলেট সীমান্ত হয়ে তার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার গুজবও নানা মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য ছিল তিনি দেশেই আছেন।

কুমিল্লার মেয়ে নিপুণ দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকায় বসবাস করার সুবাদে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বদলে সিলেট অঞ্চল দিয়ে পালানোর আলোচনাটা অনেকেই বিশ্বাস করতে চাননি। প্রথম ধাপে পালানোর গুঞ্জন সিলেটে মিথ্যাখবর হিসেবে ভেসে বেড়ানোয় এ সুযোগটাকেই কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন হয়তো নিপুণ।

তবে সীমান্তপথে নয়, সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে পালাতে গিয়ে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) সকালে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে ধরা পড়তে হয় অভিনেত্রী নিপুণকে। বাস্তব জীবনে অভিনয় শিল্পী হলেও বিমানবন্দরে তার নানা কৌশল ও অভিনয় সহজেই নজর কাড়ে গোয়েন্দাদের। পরিচয় গোপন করলেও ধরা পড়ে যান ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যেই।

বাংলাদেশ বিমানের সকালের একটি ফ্লাইট বিজি-২০১ এ করে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা করার কথা ছিল নিপুণের। লন্ডন থেকে আবার ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ বিমানের অন্য আরেকটি ফ্লাইট বিজি- ২০২ তে করে দেশে ফেরার ফিরতি টিকেটও করেছিলেন তিনি। ফিরতি টিকেট করার উদ্দেশ্য ছিল, যাতে কেউ সন্দেহ না করেন, এমনটিই মনে করছেন গোয়েন্দারা।

তার পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঢাকার একটি বেসরকারি এজেন্সি থেকে গত ৪ জানুয়ারি ই-টিকেট কেটেছিলেন তিনি। টিকেট নম্বর- ৯৯৭৯৫৮৭৮২২৩২৯। টিকেট নম্বর অনুযায়ী তিনি বিজনেস ক্লাসের যাত্রী ছিলেন। কিন্তু ঢাকা থেকে টিকেট কিনে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সহজে যাত্রা না করে তিনি সিলেটে এসে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করায় কিছুটা সন্দেহের নজরে আসেন বলে জানান গোয়েন্দারা।

শুক্রবার ব্যক্তিগত গাড়িতে করে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন নায়িকা নিপুণ। বিজনেস ক্লাস বা প্রথম শ্রেণীর যাত্রী এবং একজন পরিচিত অভিনেত্রী হলেও নিজেকে আড়াল করতে সাধারণ ইকোনোমিক ক্লাসের যাত্রীদের ভিড়ে মিশে সকাল ৮ টা ৩২ মিনিটে ভেতরে ঢোকেন নিপুণ। ভেতরে ঢুকে ৫ মিনিটে তিনি নিজেকে আরও একটু আড়াল করতে তার পরিহিত পোশাক দেখে নেন। সকাল ৮ টা ৩৮ মিনিটে তিনি বিমানবন্দরের চেকিং কাউন্টারের সামনে আসেন। এসময় তার কাঁধে একটি কালো রঙের ভ্যানিটি ব্যাগ এবং হাতে গোলাপি রঙের ছোট একটি লাগেজ ছিল। সেখান থেকে বোর্ডিং পাস সংগ্রহ করে নেন নিপুণ। কিন্তু তার আচরণ ছিল নজরে পড়ার মতো। বোর্ডিং পাস নেয়ার পর আরও ৫ মিনিট সময় পর তিনি ইমিগ্রেশনে পৌঁছান সকাল ৮ টা ৪৩ মিনিটে।

ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢোকার সময়ই তিনি কালো রঙের বড় একটি চশমা পরেছিলেন। সঙ্গে সাদা রঙের একটি মাস্ক এবং হিজাবসহ একটি মাফলার। তার মুখমন্ডল যাতে দেখা না যায় সে চেষ্টাই করেছিলেন। এসবের বাইরেও উঁচু কোনো জুতা না পরে তিনি স্নিকার জাতীয় নিচু সাধারণ ধরনের জুতা পরেন। গায়ে ভারী জ্যাকেট এবং ঢিলেঢালা প্যান্ট, বিমানবন্দরের ভেতরে ঢুকেও তার কালো চশমা তিনি খোলেননি। দীর্ঘ সময় ধরে তার এমন চলাফেরা ও বসে থাকা নজরে আসে গোয়েন্দাদের।

সকাল ৮ টা ৪৩ মিনিটে তিনি বোর্ডিং পাস ও পাসপোর্ট নিয়ে ইমিগ্রেশনের সামনে এলে তার যাবতীয় আচরণ ও প্রবেশ থেকে বিস্তারিত তথ্য ইমিগ্রেশন অফিসারের কাছে পৌঁছে দেন গোয়েন্দা সদস্যরা। পাসপোর্টে তিনি তার নাম নাসরিন আক্তার পর্যন্তই উল্লেখ করেন। নিপুণ নামটি তিনি কাগজপত্রে ব্যবহার না করলেও বোর্ডিং পাস এবং পাসপোর্টের নাসরিন আক্তারকে ছবিতে দেখে নায়িকা নিপুণের মতোই লাগছিল কর্মকর্তাদের কাছে। এরপরই জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সদস্যরা তার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা থাকার বিষয়টি ইমিগ্রেশন পুলিশকে জানালে আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে বসিয়ে রাখা হয়।

ইমিগ্রেশন পুলিশ কর্মকর্তাদের হাতে প্রাথমিকভাবে নায়িকা নিপুণ আটকের বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমেও খবর চলে আসে। একই ফ্লাইটে যাত্রা করার কথা ছিল সিলেটের আরও এক যাত্রী লিটনের। তাকেও এসময় আটক করেছিল ইমিগ্রেশন পুলিশ। তার বিরুদ্ধে প্রতারণা সংক্রান্ত অভিযোগে সিলেটের শাহপরাণ থানায় মামলা ছিল। দু‘জন আটকের বিষয়ের সঙ্গে একটি মামলা নম্বরও ছড়িয়ে পড়ে। তবে নিপুণের বিরুদ্ধে কোনো থানায় লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ফেরৎ পাঠানো হয়। জানা যায়, আটক অপর যাত্রী লিটনের বিরুদ্ধে শাহপরাণ থানায় মামলা রয়েছে, তাই তাকে থানা পুলিশে সোপর্দ করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। এদিকে নায়িকা নাসরিন আক্তার নিপুণ ছাড়া পেয়ে সকাল ১০ টা ৩৩ মিনিটে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।

এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশ জানায়, গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে তার বিদেশ যাত্রায় মৌখিক নিষেধাজ্ঞা থাকার বিষয়টি জানতে পেরেই তাকে বিমানবন্দর থেকে ফেরৎ পাঠানো হয়েছে।

এদিকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিপুণ পুরো বিষয়টিকেই ভুয়া খবর বলে দাবি করেছেন। পুলিশ হেফাজতে কাটানোর বিষয়টি অস্বীকার করে অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি বনানীর বাসায় আছি। এই খবর ভুয়া। তিনি বলেন, আমি তো কোন অপরাধ করিনি। আমাকে আটক কেন করা হবে। আমি আটক হয়নি। এর বাইরে আমি আর কোনো কথা বলতে চাই না। ফালতু সব বিষয়।

শিল্পী সমিতির তথ্যমতে, চিত্রনায়িকা তকমা লাগিয়ে খুব অল্প সময়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন নিপুণ আক্তার। ২০১৬ সালে রাজধানীর বনানীতে ‘টিউলিপ নেইলস অ্যান্ড স্পা’ নামের এ পার্লার খুলে বসেন তিনি। উদ্বোধন করেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শেখ সেলিম। অনেকেই বলেন, এই পার্লারটি শেখ সেলিম উপহার হিসেবে দিয়েছেন স্বামীহারা নিপুণকে। এর পেছনে রয়েছে শেখ সেলিমের সাথে গোপন শারীরিক সম্পর্ক।

শুধু পার্লার নয়, নিত্য নতুন গাড়ি, বিদেশ ভ্রমন, মেয়েকে বিদেশে পড়াশোনা সবকিছুই নাকি আসতো রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাত দিয়ে। বছরের বেশির ভাগ সময় কাটাতেন বিদেশের মাটিতে। দেশে থাকলেও সিনেমার কোনো কাজে খুব একটা দেখা যেত না তাকে। যে সময়টা বিএফডিসিতে থাকতেন, সারাটা সময় চলত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পদচারণা। যা নিয়ে তোলপাড় চলছে।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

জনপ্রিয়