চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের কাজ ৭৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাস্তবায়নকারী সংস্থার কর্মকর্তারা প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে থাকায় ‘ভালো ফল’ আসবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
সাথে আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন, খাল ও নালায় ময়লা-আবর্জনা জমে যাওয়ার কারণে সুফল আটকে যেতে পারে। এ জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নিজেদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে হবে। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতির এ তথ্য জানান সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে দুই কারণে জলাবদ্ধতা হয়ে থাকে। প্রথমত বৃষ্টির পানি নামতে না পারার কারণে, অন্যটি হলো জোয়ারের পানির কারণে। নগরীর আগ্রাবাদ, হালিশহর এলাকায় জোয়ারের পানির কারণে জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ কম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই এলাকায় মহেশখালে স্লুইসগেট চালু করা হয়েছে। এতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করতে পারবে না।
তবে বাকলিয়া, চকবাজার, চান্দগাঁও এলাকায় জোয়ারের পানিতে জলাবদ্ধতা থাকবে। এসব এলাকায় পানি নামতে না পারার কারণেও জলাবদ্ধতা থাকবে বলে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান। তবে এবার মুরাদপুর ও বহদ্দারহাটে পানি উঠবে না। বৃষ্টি হলেই ষোলশহর দুই নম্বর গেট থেকে মুরাদপুর ও বহদ্দারহাট পর্যন্ত প্রধান সড়কে পানি উঠে যায়। এতে পুরো নগরীর যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এবার সেই দুর্ভোগ হবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কর্মকর্তারা।
তাঁরা বলছেন, ইতিমধ্যে ষোলশহর থেকে শুলকবহর এন মোহাম্মদ পর্যন্ত অংশে খালটি চওড়া করেছি। এতে পানি দ্রুত নেমে যেতে পারবে। তাই এবার আর রাস্তায় পানি ওঠার সম্ভাবনা নেই। তবে পাহাড় কাটা, খালের অবৈধ দখল, খালকে ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করা, অপরিকল্পিত ও অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থাই মূলত জলাবদ্ধতার কারণ। মানুষ সচেতন না হলে জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের সুফল মিলবে না।
সূত্র আরও জানায়, যে বছর বৃষ্টিপাত বেশি হয় সে বছর জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ দেখা দেয়। আবার কখনো কখনো মৌসুমের এক বা দুদিন টানা ভারী বর্ষণ হলে জলাবদ্ধতা হয়। এবার মৌসুম বিলম্বে শুরু হচ্ছে। মূলত জুন-জুলাইতে ভারী বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিলের আচমকা বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। কালবৈশাখীর সাথে ঘণ্টাখানেকের বর্ষণে যে জলাবদ্ধতা হতো এবার তার দেখা মেলেনি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, জলাবদ্ধতা হওয়ার মতো বৃষ্টি সহসা হচ্ছে না।
এবার বৃষ্টি দেরিতে আসছে বলে জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের কাজ করার সময় বেশি পাওয়া গেছে। অন্যান্য বছর এই মৌসুমে আগেই কাজ বন্ধ করে দিতে হয়। বর্ষার কারণে বছরের ছয় মাস এই প্রকল্পের কাজ করা যায় না। প্রকৃতির বর্তমান বৈরি আচরণ মানুষের জন্য দুঃসহ হলেও জলাবদ্ধতা নিরসন কাজের জন্য আশীর্বাদ হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকায় চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্পটি ২০১৭ সালের আগস্টে একনেকে অনুমোদন পায়। সিডিএ এ প্রকল্পটির অনুমোদন পেলেও মাঠপর্যায়ে তা বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ সালের এপ্রিলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে।
২০১৭ সালে অনুমোদিত এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালের জুনে শেষ হয়। তবে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এরপরও কাজ বাকি থাকায় মেয়াদ আরও দুই বছর বৃদ্ধি করা হবে। একই সঙ্গে ব্যয়ও বাড়বে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ১৮ কোটি টাকা। কাজের অগ্রগতি ৭৬ দশমিক ২৫ শতাংশ।
এ প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামের ৫৭টি খালের মধ্যে ৩৬টি খাল সংস্কার ও উন্নয়নকাজ করে সেনাবাহিনী। বাকি ২১টি খাল সিটি করপোরেশন নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করবে এবং এসব খাল নিয়ে সিটি করপোরেশন আলাদাভাবে প্রকল্প নিচ্ছে।