শনিবার- ২৬ এপ্রিল, ২০২৫

মহাভূমিকম্পের আভাস জাপানের, ৩ লাখ মানুষের মৃত্যুর শঙ্কা

মহাভূমিকম্পের’ আভাস, ৩ লাখ মানুষের প্রাণহানির শঙ্কা

সাত দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে লণ্ডভণ্ড মিয়ানমার। শুক্রবারের এই ভূমিকম্পে ইতোমধ্যে ২৭০০ মানুষের প্রাণহানির খবর এসেছে। দিন যতই যাচ্ছেন মৃতের তালিকা ততই লম্বা হচ্ছে। ধ্বংসস্তুপের মধ্যে এখনো চাপা পড়েন আছেন অনেকে।

এমন অবস্থার মধ্যে এবার ‘মহাভূমিকম্প’ এবং সুনামির আশঙ্কার কথা জানাল এশিয়ার দেশ জাপান। জাপান সরকার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ‘মহাভূমিকম্প’ হলে কম্পনের মাত্রা রিখটার স্কেলে ৮ থেকে ৯ হতে পারে। সম্ভাব্য ‘মহাভূমিকম্প’-এর কারণে ১২.৩ লাখ মানুষ অর্থাৎ সে দেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

তীব্র ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বাণী করে সোমবার (৩১ মার্চ) করা ওই প্রতিবেদনে জাপান সরকার আশঙ্কা প্রকাশ করে জানায়, ‘মহাভূমিকম্প’ এবং তার ফলে সৃষ্ট সুনামির কারণে জাপানে প্রায় তিন লাখ মানুষ মারা যেতে পারেন। আর্থিক ক্ষতি হতে পারে দুই লক্ষ কোটি ডলারের, যা সে দেশের মোট জিডিপির অর্ধেক!

২০২৪ সালে ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল দক্ষিণ জাপানে। সেই ভূকম্পনের পরেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে এই সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

জাপান সরকারের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘মহাভূমিকম্প’ হলে কম্পনের সম্ভাব্য উৎস হবে ‘নানকাই ট্রফ’ নামে সমুদ্রের তলদেশের একটি এলাকা। ‘নানকাই ট্রফ’ হলো শিজুওকা থেকে কিউশু পর্যন্ত ৮০০ কিলোমিটার বিস্তৃত সমুদ্রতলের চ্যুতি। ২০২৪ সালের আগস্টে সমুদ্র-তলদেশের ওই এলাকা নিয়ে প্রথম বার সতর্কতা জারি করেছিল জাপান।

২০১১ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্প, সুনামি এবং ফুকুশিমা পারমাণবিক বিপর্যয়ের পর থেকেই ‘মহাভূমিকম্প’ আসতে পারে কি না তা নিয়ে আগাম সতর্কতা জারি করার নিয়ম চালু হয়েছে জাপানে। কিন্তু ‘মহাভূমিকম্প’ হওয়া নিয়ে এত নিশ্চিত কীভাবে হচ্ছে জাপান? কেনই বা তাড়াহুড়ো করে রিপোর্ট প্রকাশ করল টোকিয়ো? টোকিয়োর যুদ্ধতৎপরতা দেখানোর কারণ, অস্থির টেকটোনিক পাতের কার্যকলাপ।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ফিলিপিন্সের সমুদ্রপ্লেট ইউরেশিয়ান প্লেটের নিচে নেমে এসেছে এবং ৯.১ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি করার শক্তি সঞ্চয় করেছে। জাপান সরকারের অনুমান অনুযায়ী, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে নানকাই খাদে ৮-৯ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা ৭০-৮০ শতাংশ।

অন্যদিকে ইতিহাস সাক্ষী যে, প্রতি ১০০-২০০ বছর অন্তর বড় ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয় জাপান। জাপানে নানকাই খাদের কারণে মহাভূমিকম্প শেষ বার ঘটে ১৯৪৬ সালে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এখন ‘মহাভূমিকম্প’ হলে ৩০-৩৪ মিটার উচ্চতার ঢেউ শিজুওকা, কোচি এবং ওয়াকায়ামার মতো উপকূলীয় এলাকাগুলোকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, নানকাই খাদে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ‘টেকটোনিক স্ট্রেন’ (পৃথিবীর ভূগর্ভস্থ প্লেটগুলির বিকৃতি, যা টেকটোনিক চাপের কারণে ঘটে) জমেছে, যা ধারাবাহিকভাবে বড় বড় ভূমিকম্পের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

তোহোকু এবং কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় সতর্ক করা হয়েছে, ‘নানকাই ট্রফ’-এ ৭-এর বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে এক সপ্তাহের মধ্যে স্বাভাবিকের চেয়ে ১০০-৩৬০০ গুণ ভূমিকম্প তৈরি হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই আতঙ্ক এবং উদ্বেগ দেখা দিতে শুরু করেছে জাপানের নাগরিকদের মনে। আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরাও।

টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূকম্পনবিদ নাওশি হিরাতা সতর্ক করেছেন, ‘প্রস্তুতির সময় এখনই। যখন মাটি কাঁপতে শুরু করবে তখন নয়। সূত্র: আনন্দবাজার।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page