চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপকুলে অবস্থিত সবকটি শিপইয়ার্ডে বাড়ছে দুর্ঘটনা। ঘটছে প্রাণহানী। মালিকদের লোভের কারণে এসব দূর্ঘটনায় প্রাণবলী হচ্ছে বলে মন্তব্য বিজ্ঞমহলের।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) তথ্যমতে, ২০১৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে চট্টগ্রামে সীতাকুন্ড উপকুলে গড়ে উঠা শিপইয়ার্ডে মৃত্যু হয়েছে ১২৯ জনের। চলতি বছর দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩২টি। প্রাণহানী ঘটেছে সাত জনের। আহত হয়েছেন ৩৭ জন।
বিলসের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক তথ্যকেন্দ্রের সমন্বয়ক ফজলুল কবির মিন্টু এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মালিকপক্ষের সাময়িক লাভের লোভে এ ধরনের দুর্ঘটনার বড় কারণ।
তিনি বলেন, ‘জাহাজ ভাঙা শিল্পে দুর্ঘটনার পেছনে মূলত পাঁচটি বিষয় রয়েছে। প্রথমত শ্রমিকরা স্থায়ীভাবে চাকরি না পাওয়া। দ্বিতীয়ত এক ঘণ্টা পর পর ১৫ মিনিটের বিশ্রাম না দেওয়া। তৃতীয়ত নির্দিষ্ট সময়সীমার আগে শ্রমিকদের লোভ দেখিয়ে জাহাজ কাটতে বাধ্য করা। চতুর্থত ইয়ার্ডগুলোতে যোগ্য সেফটি অফিসার না রাখা এবং পঞ্চমত প্রয়োজন অনুযায়ী পরামর্শদাতার নিয়োগ না দেওয়া।’
ফজলুল কবির মিন্টু বলেন, ‘শিপইয়ার্ডগুলোর মধ্যে বর্তমানে চারটি ইয়ার্ড গ্রিন সাটিফাইড হয়েছে। নতুন বছরে আরো ১২ থেকে ১৪টি গ্রিন সার্টিফাইড হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু অবকাঠামোগত কমপ্লায়েন্স মেনটেইন করার পাশাপাশি তারা যদি সোশাল কমপ্লায়েন্স মেনটেইন করার কথা ভাবে তাহলে দুর্ঘটনা কমে যাবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স এসোসিয়েশনের সহকারী সচিব নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্ঘটনার তথ্যগুলো সঠিক নয়। সেপ্টেম্বরে একটি ইয়ার্ডে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে; এটা ঠিক। এসব দূর্ঘটনা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত এবং দুঃখজনক। আমরা কোনো ধরনের দুর্ঘটনা যেন না হয়, সে ব্যাপারে গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছি।’
জানতে চাইলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য এবং জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের আহ্বায়ক তপন দত্ত বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে কারো কারো সঙ্গে আমাদের কথা হয়। কিন্তু আমাদের অনুষ্ঠানে বা এ ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে মালিকপক্ষ তেমন সাড়া দেন না।
সম্প্রতি তারা খুবই লো-প্রোফাইলের লোকজনকে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানে। মালিকদের মনোভাব এমন হলে সমস্যার সমাধান বের করা কঠিন হয়ে পড়বে।’
দুর্ঘটনা এড়াতে কী কী করণীয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্থায়ীভাবে নিয়োগ না দিয়ে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক দিয়ে কাজ করালে দুর্ঘটনার শঙ্কা বেশি। অভিজ্ঞ শ্রমিক হলে দুর্ঘটনা অনেক কমে যায়।’
বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আবু তাহেরের সঙ্গে যোগোযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে শিপইয়ার্ডে মালিকদের মধ্যে প্রগতি স্টিলসের জাফর আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও বক্তব্য দিতে রাজি হননি।