বৃহস্পতিবার- ১৫ মে, ২০২৫

মিথিলার রিয়েক্ট

মিথিলার রিয়েক্ট

বিয়ে করেছেন সংগীতশিল্পী তাহসান খান। অন্যদিকে কাটাছেঁড়া হচ্ছেন গায়কের প্রাক্তন স্ত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা। বিভিন্ন অপমানজনক ও আপত্তিকর বিশেষণে বিশেষায়িত করা হচ্ছে তাকে। মিথিলাকে সামাজিক ভাবে এমন হেনস্তার প্রতিবাদে লেখা একটি দীর্ঘ পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

লেখাটি শেয়ার করেছেন অভিনয়শিল্পী অর্চিতা স্পর্শিয়া, শ্যামল মওলা রুনা খান. তসলিমা নাসরিণসহ আরও অনেকে। পোস্টটি হুবহু তুলে দেওয়া হলো— বাংলাদেশে আপনারা যাকে বাজারের মেয়ে বলে ভাবেন সেই মেয়েটাই একটি বিশ্ব বিখ্যাত এনজিও ব্র্যাকের অন্যতম একজন কর্ণধার।

যে মেয়েটির চরিত্র খারাপ বলে আপনারা গালাগাল করেন সেই মেয়েটি পৃথিবীর ১১ টি দেশে মা ও শিশুদের নিয়ে কাজ করে। যার ছবি দেখে আপনারা এখনো হা হা রিয়েক্ট দেন সেই মেয়েটির মাস্টার্সের ডিগ্রি হচ্ছে দুটো, যার একটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যটি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের।

গত পাঁচ বছর ধরে আপনারা যে অভিনেত্রীকে নিয়ে তুমুল সমালোচনায় মত্ত, সেই মেয়েটি এই পাঁচ বছরে পিএইচডি ডিগ্রি নিচ্ছে। আগামী বছর সে পিইচডি ডিগ্রিধারী হবে। কিন্তু আপনারা যারা সমালোচনা করেছেন তারা কে কি অর্জন করেছেন একটু নিজের চেহারায় দেখে বলবেন কি?

আপনার চারপাশে অসংখ্য সুন্দরী মেয়ে হয়তো দেখেছেন। এদের কেউ সুন্দরী কিন্তু সে মেধাবী ছাত্রী নয়। আবার সুন্দরী+মেধাবী হলে আবার সে গান গাইতে পারে না। গান গাইতে পারলেও অনেকেই আবার নাচতে পারে না। কিন্তু একটি মেয়ে যখন একজন ভালো চাকুরিজীবী, মেধাবী ছাত্রী, গায়িকা ও নায়িকা এবং তার পাশাপাশি সে ছবিও আঁকতে পারে তবে বুঝতে হবে সৃষ্টির স্বর্গীয় সৌন্দর্য নিয়ে এই মেয়েটি পৃথিবীতে এসেছে। সে পৃথিবীতে শুধু খাওয়া আর ঘুমের জন্য জন্ম নেয়নি, এই পৃথিবীতে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখতে তার জন্ম হয়েছে।

ঢাকা শহরে প্রতি ঘণ্টায় তিনজন নারী ডিভোর্সের শিকার হন। এর মানেই যে সব নারীর চরিত্র খারাপ আর সব পুরুষ সাধু বিষয়টি এমন নয়। একটি সংসারে দু’জন মানুষের বিচ্ছেদের পর দুটো মানুষের মাঝেই শূন্যতা বিরাজ করে। সেই অভিনেত্রীর সেই স্থানটা দখল করেছে আরেকজন পুরুষ। এতে আপনি অভিনন্দন না জানিয়ে বাজে মন্তব্য করে আপনার জাত চিনিয়ে দেন। পুরুষ দশটা বিয়ে করলেও আপনার কিছু যায় আসে না। আর নারী কোথাও সুখ খুঁজতে গেলে সে বাজারের পতিতা হয়ে যায়! আপনার যেমন শরীর আছে, নারীদেরও আছে। আপনার যেমন হৃদয় আছে, নারীদেরও আছে। আপনার ক্ষেত্রে ১৬ আনা হলেও নারীর ক্ষেত্রে তা চার আনাও নয়। কারণ পৃথিবীর আদিকাল থেকেই পুরুষ নিজেকে মানুষ ভেবেছে আর নারীকে ভেবেছে তাদের গোলাম। পুরুষ যেমন রাজা হয়ে রাজ্য শাসন করতে পারে ঠিক তেমনি পৃথিবীর ইতিহাসে অসংখ্য নারীও যোগ্যতার সাথে রাজ্য শাসন করেছে।

আমি মিথিলার কথা বলছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করা এবং ছোটবেলা থেকেই লোকনাট্য থিয়েটারে কাজ করে আজকের একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী হওয়া এসবের পেছনে তার নিজের একটা গল্প থাকে। আমরা শুধু অভিনয়ের মানুষটাকে দেখি কিন্তু তার ভেতরের মানুষটাকে দেখিনা। মেরলিন মনরোর হাজারটা প্রেমিক ছিলো কিন্তু এখনও সে আমাদের চোখে মনরো হয়ে আছে। সালমান খান এখনো বিয়ে করেননি কিন্তু শাহরুখ খান তার চেয়ে একবছরের বড় মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমরা ভূলে যাই শাহরুখ ও সালমান দিনশেষে আমাদের মতোই মানুষ। প্রতিটি মানুষের একটা নিজস্ব জগৎ আছে। আমাদের সবার উচিত পরিশ্রম করে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করা এই মানুষগুলোকে নিজেদের শ্রদ্ধার আসনে বসিয়ে নিজেদের তাদের মতো করে তৈরি করা।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page