মঙ্গলবার- ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

মুক্তি পেলেন খালেদা জিয়া, দেশে ফিরছেন তারেক রহমান

মুক্তি পেলেন খালেদা জিয়া, দেশে ফিরছেন তারেক রহমান
print news

প্রায় ৫ বছর কারাবাসের পর অবশেষে মুক্তি পেলেন বিএনপি চেয়ারপারসন এবং তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার এক আদেশে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। এর আগে রাষ্ট্রপতির প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। এছাড়া ১লা জুলাই থেকে ৫ই আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও বিভিন্ন মামলায় আটকদের মুক্তি দেয়া শুরু হয়েছে এবং এরইমধ্যে অনেকে মুক্তি পেয়েছেন।

দুর্নীতি দুই মামলায় ২০১৮ সালে ৮ই ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। করোনার প্রকোপ শুরু হলে ২ বছরেরও বেশি সময় কারাবাসের পর বাসায় থেকে চিকিৎসা ও বিদেশে না যাওয়ার শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়। পরে কয়েক দফায় সেই মেয়াদ বাড়ানো হয়।

খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কটাপন্ন হলে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে দফায় দফায় জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হলেও বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হয়নি। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দেয়া হলেও পরে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ বাতিল চেয়ে করা আপিলে সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন উচ্চ আদালত।

বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বেগম খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসাধীন আছেন তিনি এখনই বাসায় ফিরবেন কিনা সেটা চিকিৎসকদের উপর নির্ভর করছেন। এদিকে সকালে সংবাদ সম্মেলনের বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়ার পাঠানো বার্তায় বলেন, ম্যাডাম সবাইকে প্রথম থেকেই সবাইকে শান্ত থাকতে বলেছেন। এখানে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি যেন না হয় যাতে অর্জিত বিজয় কেউ ছিনিয়ে নিয়ে না যায়।

সূত্র জানায়, রাজনীতি থেকে দুরে সরিয়ে রাখতেই প্রতিহিংসার কারনে আদালতকে ব্যবহার করে প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে সাজা দিয়ে রাজনীতি থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছিলো বেগম খালেদা জিয়াকে। বিভিন্ন সময়ে ৩৭ টি মামলা দেওয়া হয়েছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর নামে। ৩৫ মামলার জামিন হলেও দুই মামলায় সাজা ভোগ করছেন গুরতর অসুস্থ প্রবীন এই রাজনীতিবিদ।

৩৫টি মামলায় জামিনে ছিলেন খালেদা জিয়া। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের সাজা ভোগ করছেন তিনি। ১৩টি মামলা হয়েছে ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে জরুরী শাসনকালে। মামলাগুলোর মধ্যে পাঁচটি দুর্নীতি মামলা, চারটি মানহানির মামলা ও একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা রয়েছে। বাকি মামলাগুলো হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার অভিযোগে। হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত রয়েছে ১৩টি মামলার কার্যক্রম। তার বিরুদ্ধে ঢাকা, কুমিল্লা ও খুলনায় বেশির ভাগ মামলা হয়েছে।

জিয়া অরফানেজ :

ট্রাস্টের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে ৩ জুলাই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া হাইকোর্টে আপিল করলে তা খারিজ হয়ে যায়। একইসঙ্গে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাজার পরিমাণ বাড়িয়ে ১০ বছর কারাদণ্ড দেয় হাইকোর্ট।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর রায় ঘোষণা করেন পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। রায়ে খালেদা জিয়াসহ অন্য তিন আসামিকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ ছাড়া প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া আপিল করলে ২০১৯ সালের ৩০শে এপ্রিল তা শুনানির জন্য গ্রহণ করে অর্থদণ্ড স্থগিত করে হাইকোর্ট।

রাজধানীর গাবতলী বালুর মাঠ ও মিরপুর মাজার রোড সংলগ্ন এলাকায় ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত যানবাহন ভাঙচুর, পুলিশের কাজে বাধাদান’সহ নাশকতার অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দারুসসালাম থানায় ১১টি মামলা হয়। ঢাকার বকশীবাজারে বিশেষ জজ আদালতে মামলাগুলো বিচারের জন্য উঠলেও হাইকোর্টের আদেশের ফলে এর কার্যক্রম বর্তমানে রয়েছে স্থগিত।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

২০১৫ সালের জানুয়ারিতে পেট্রোল বোমা দিয়ে চারজনের গায়ে অগ্নিসংযোগ, হত্যা ও হতাহতের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট চারটি মামলা করা হয়। এ মামলাগুলোও হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত হয়ে আছে।

২০১৫ সালের ২৫শে জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামের হায়দারপুল এলাকায় একটি কাভার্ড ভ্যানে অগ্নিসংযোগ ও আশপাশের বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি চৌদ্দগ্রাম থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে এবং নাশকতার অভিযোগে দুটি মামলা হয়। ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে এ মামলায় কুমিল্লার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। খালেদা জিয়াসহ ৩২ জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়। এর একটিতে তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিনে আছেন, যা পরে আপিলে বহাল থাকে। আরেকটি মামলায় হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন শুনানি অবস্থায় রয়েছে। একই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন (৩ ফেব্রুয়ারি) চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান বাদী হয়ে ৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হলেও বিচারকার্য এখনও শুরু হয়নি।

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী। ঢাকার বকশীবাজারে বিশেষ জজ আদালতে চলমান এ মামলার কার্যক্রম হাইকোর্টের নির্দেশের কারণে স্থগিত রয়েছে।

কানাডার জ্বালানি কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের চুক্তি করে রাষ্ট্রের প্রায় ১০,০০০ কোটি টাকা ক্ষতি করার অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে দুদক। ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুদক। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এ বিচারাধীন।

ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে গ্লোবাল অ্যাগ্রো ট্রেড কোম্পানি লিমিটেডকে (গ্যাটকো) ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াসহ ১৪ জনকে আসামি করে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় গ্যাটকোকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকা ক্ষতির অভিযোগ করা হয়। মামলাটি ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন।

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে কয়লা উত্তোলন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম এবং রাষ্ট্রের ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতি ও আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় এ মামলা করা হয়। ওই বছর ৫ অক্টোবর খালেদা জিয়াসহ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২-এ অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য রয়েছে।

২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের মিছিলে হামলার ঘটনায় খালেদা জিয়াকে প্রধান আসামি করে ১৪ জনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতা ইসমাইল হোসেন। ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি পুলিশের প্রতিবেদন দাখিলের অপেক্ষায় রয়েছে।

শ্রমিক দিবসে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় বক্তব্য দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে ‘মিথ্যা’ বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকার বিচারিক আদালতে বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী মানহানির মামলা করেন, যা বর্তমানে পুলিশের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া সজীব ওয়াজেদ জয়ের অ্যাকাউন্টে ৩০ কোটি ডলার রয়েছে বলে ‘মিথ্যা’ বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে ২০১৬ সালের ৩ মে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’-এর মুরাদনগর উপজেলা কমিটির সভাপতি শরিফুল আলম চৌধুরী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেন। কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষমান।

২০ দলীয় জোটের আন্দোলনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে মারা যাওয়া ৪২ জনকে হত্যার অভিযোগ এনে ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াসহ দলটির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে পুলিশের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়ার অভিযোগ তুলে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন জজ কোর্টে মামলা করা হয়।

২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর খালেদা জিয়ার এক বক্তব্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানুষ ও বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও জাতিগত বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগ ওঠে। পরে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা হয়।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে নড়াইলে একটি মামলা হয়। মামলার ঘটনা ঢাকায়। ওইদিন বেগম জিয়া এক অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা এবং বঙ্গবন্ধুর নাম উল্লেখ না করে বক্তব্য রাখেন। এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে নড়াইলের কালিয়ার চাপাইল গ্রামের রায়হান ফারুকী ইমাম বাদী হয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। ২০১৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর নড়াইলের জেলা জজ আদালতে তিনি এ মামলা করেন। এ মামলাটিতেও পুলিশের প্রতিবেদন জমা পড়েছে।

১৫ই আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনকে ভুয়া অভিযোগ করে ২০১৬ সালের ৩০শে আগস্ট ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটিতে পুলিশের প্রতিবেদন আমলে নিয়েছেন আদালত। তবে নিম্ন আদালত থেকে এ মামলায় খালেদা জিয়া জামিনে আছেন।

বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার অভিযোগে ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়।

২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন অভিযোগ করে তার বিরুদ্ধে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মানহানির মামলা করা হয়।

খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা দাবি করেছেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এবং সাজা দিয়ে খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই তার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা ও হয়রানির মূলক মামলা করা হয়েছে। বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ হয়ে এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী

দেশে ফিরছেন তারেক রহমান :

এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান অতি দ্রুতই দেশে ফিরছেন বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য জানান। মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা জানেন আমাদের নেতা তারেক রহমান,তাকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করা হয়েছে। তিনি এ আন্দোলনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন, তাকে অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

২০০৭ সালের ৭ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয় তারেক রহমানকে। এরপর তারেক রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল। তারেক রহমান এবং বিএনপির তরফ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছিল যে, রিমান্ডে তার উপর ‍‍অমানুষিক নির্যাতন‍‍` চালানো হয়েছে।

আদালতে দেয়া তারেক রহমানের বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে বিদেশি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছিলো ২০০৮ সালের ১০ জানুয়ারি, রিমান্ডের সময় আমাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘণ্টাই হাত ও চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল, আমাকে বেঁধে রুমের ছাদের সাথে ঝুলিয়ে আবার ফেলে দেয়া হয় এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়।’ কারাগারে থাকা অবস্থায় তারেক রহমানের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তখন বেশ জোরালোভাবে দলের পক্ষ থেকে তোলা হয়েছিল।

মুক্তি পাওয়ার পর তারেক রহমান ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন পরিবারের সদস্যদেরকে সাথে নিয়ে। আর ওইদিনই কারাগার থেকে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। মুক্তি পাওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই চিকিৎসাধীন ছেলেকে দেখতে খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে যান। প্রায় দুই ঘণ্টা ছেলের পাশে অবস্থান করেন তিনি।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা একটি বড় বিজয়,বড় সাফল্য পেয়েছি। সে সাফল্যকে ধরে রাখতে নিজেরা সংযমের পরিচয় দেই, ক্রোধ-ঘৃণা বা প্রতিহিংসার বশবর্তী না হয়ে কাউকে আক্রমণ না করি, কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি না করি। বিশেষ করে আমাদের ধর্মীয় সংখ্যালঘু ভাইদের যেন আক্রমণ না করি। সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, তাদের রক্ষা করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। আমি আমাদের দলের সবার প্রতি আহ্বান জানাই, যে প্রবণতা দেখা দিয়েছে- দুর্বৃত্তদের সে সুযোগ দেবেন না, যে সুযোগে দুর্বৃত্তরা অন্যদের ওপর আঘাত হানে।

এর আগে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি মহাসচিব বলেন, অর্থনীতিকে ধ্বংসপ্রাপ্ত করেছে, রাজনীতিকে ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগ। সবমিলে দেশকে তারা ধ্বংস করে দিয়ে চলে গেছে। আজকে এই ভয়াবহ দানবীয় হাত থেকে জাতি ও দেশ আজকে মুক্তি পেলো। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই, দেশপ্রেমী সেনাবাহিনীকে। তারা আজকে উপযুক্ত সময়ে পদক্ষেপ নিয়েছেন। পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে তারা আলোচনা করার জন্য এখানে (বঙ্গভবন) ডেকে নিয়েছেন। আন্দোলনের মূল ছাত্র নেতাদেরও নিয়ে এসে কথা বলেছেন। তারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলে কতগুলো মৌলিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরমধ্যে সংসদ ভেঙে দিয়ে অতিদ্রুত একটি অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন করা হবে, অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হবে।

অবিলম্বে সংসদ ভেঙে দিয়ে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। এর আগে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠক করেন।

রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, আমরা আশা করব আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনি সংসদ ভেঙে দেবেন। অন্যথায় দেশে একটি রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমানসহ আরও অনেকে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

এরই মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। এসময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস উপস্থিত ছিলেন। সোমবার রাতে সাক্ষাৎ করেন তারা।

এর আগে বঙ্গভবনে তিন বাহিনীর প্রধানদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন করা হবে। আর বর্তমানে যে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সেটি স্বাভাবিক করতে সেনাবাহিনী পদক্ষেপ নেবে। এ ছাড়া সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে অনতিবিলম্বে মুক্তির সিদ্ধান্ত হয়।

জানা গেছে, সভায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে শোক প্রস্তাব গ্রহীত হয় এবং তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করা হয়। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে এবং সম্প্রতি বিভিন্ন মামলায় আটক বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন কোনোভাবেই বিনষ্ট না হয় সে ব্যাপারেও সভায় আলোচনা হয়।

এদিকে রাজধানীতে আজ বুধবার (৭ আগস্ট) সমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। বেলা ২টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় দলের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিতে জানানো হয়, সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও জাতীয় নেতৃবৃন্দরাও বক্তব্য দেবেন। যথাসময়ে দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণকে সমাবেশে যোগদানের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

ঈশান/মখ/সুপ

আরও পড়ুন

No more posts to show
error: Content is protected !!