মঙ্গলবার- ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

রংবেরঙের ফুল আর গানে মাতাল চট্টগ্রাম ডিসি পার্ক

রংবেরঙের ফুল আর গানে মাতাল চট্টগ্রাম ডিসি পার্ক
print news

দোলছে রংবেরঙের রকমারি ফুল। সাথে প্রিয় ব্যান্ড তারকাদের মনজোড়ানো গান। দুইয়ে মাতাল এখন চট্টগ্রাম ডিসি পার্ক। যেখানে শুধু ছুটছে তরুণ-তরুণি, শিশু-কিশোর ও বয়োজেষ্ঠ্য সবাই। এতে আয় বাড়ছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের।

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে এমন তথ্য জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার ও ডিসি পার্ক প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ডিসি পার্কে মাসব্যাপী ফুল উৎসব চলছে। যা ৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে।

তিনি জানান, ডিসি পার্কে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এই সময়ে ৫ লাখ ৩০ হাজার দর্শনার্থী এসেছে। উৎসবে আগত দর্শনার্থীর কাছে এ পর্যন্ত টিকিট বিক্রি করে প্রায় আড়াই কোটি টাকারও বেশি আয় হয়েছে। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালবাসা দিবস পর্যন্ত এই আয় তিন কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. আলাউদ্দিন।

তিনি বলেন, বঙ্গোসাগরের পাড়ে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট এলাকার ১৯৪ একরের এই ভুমি এক সময় অবৈধ দখলে ছিল। যেখানে ছিল মাদকের আখড়া। ২০২৩ সালে জানুয়ারি মাসে তৎকালীন জেলা প্রশাসক কঠোর হস্তে এই ভুমি উদ্ধার করে দুবাইয়ের মিরাক্কেল গার্ডেনের আদলে ডিসি পার্ক নামে ফুলের রাজ্য গড়ে তোলেন। গড়ে তোলেন লেক। যেখানে নৌকা ভ্রমণসহ নানা বিনোদনের সুযোগ তৈরী হয়।

আর দর্শনার্থী আকর্ষন করতে প্রতিবছর ৪ জানুয়ারি থেকে মাসব্যাপী ফুুল উৎসবের আয়োজন করা হয়। বর্তমানে এই পার্কে দেশি-বিদেশি ১৩৬ প্রজাতীর রংবেরঙের ফুল থোকায় থোকায় দুলছে। যা আকৃষ্ট করছে ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

এছাড়া দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে বর্ণিল ফুলের পাশাপাশি নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সেই সঙ্গে রয়েছে পিঠা উৎসবও। ফলে ফুল উৎসব ছাড়াও ছুটে আসছেন দর্শনার্থী। গত ৪ জানুয়ারি থেকে চলমান ফুল উৎসবে উপচে পড়া ভিড় জমছে ডিসি পার্কে।

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এই পার্কে ২৫ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে। যা গতকাল বৃহস্পতিবারের চেয়ে ১০ হাজার বেশি বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক।

এদিকে দর্শনার্থীরা জানান, ভিড়ের কারণে পার্কে প্রবেশে প্রচুর সমস্যা হচ্ছে। অনলাইনে টিকিটের ব্যবস্থার মাধ্যমে দর্শনার্থীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছেন তারা। তবে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে টিকিট কাউন্টার বাড়িয়েছেন বলে জানিয়েছেন পার্ক কর্তৃপক্ষ।

ডিসি পার্ক ঘুরে দেখা যায়, পার্কজুড়ে দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড়। আগত দর্শনার্থীদের এক-তৃতীয়াংশ এসেছে পরিবার-পরিজন নিয়ে ফুলের সৌন্দর্য দেখতে। নানা বর্ণের ফুলের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ ও বিমোহিত তারা। পার্কটির সামনে রয়েছে বিশাল বঙ্গোপসাগর। সেই সাগরের বাতাসের ঢেউ আছড়ে পড়ছে পার্কে। আর বাতাসে দোল খাচ্ছে রংবেরঙের ফুল। ফুলে ফুলে সাজানো নানা ধরনের শিল্পকর্ম।

Ctg Dc perk 31.01 4

ডিসি পার্কের সৌন্দর্য দেখে অনেকটা আবেগাপ্লুত আগত দর্শনার্থী সৈয়দ সরওয়ার আলম। তিনি জানান, একসময় সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য ছিল এই স্থান। যেখানে সন্ধ্যা নামলেই বসত মাদকের আসর। তৎকালীন জেলা প্রশাসকের আন্তরিকতায় তা উদ্ধারের পর গড়ে তোলা হয়েছে ফুলের বাগান। যেখানে ১৩৬ প্রজাতির ফুলের সমারোহ দেখে আনন্দের পাশাপাশি অনেকটাই বিস্মিত তিনি।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

অন্যদিকে সপরিবার চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা থেকে পার্কে ঘুরতে আসা চাকরিজীবী তয়ন কুমার ক্রিপুরা বলেন, শুক্রবার বিকেলে ফুলমেলা দেখতে তিনি স্ত্রী, সন্তানসহ পার্কে এসেছেন। কিন্তু অতিরিক্ত দর্শনার্থীর চাপ থাকায় মূল ফটক পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতে হিমশিম অবস্থায় পড়তে হয়েছে তাঁকে।

তিনি বলেন, দর্শনার্থীর অতিরিক্ত ভিড়ের চাপে ফুলের সৌন্দর্য মনমতো উপভোগ করতে পারেননি তাঁরা। অনলাইনে টিকিটের ব্যবস্থার মাধ্যমে দর্শনার্থীর চাপ কিছুটা কমানো গেলে আগতরা সবাই ফুলের সৌন্দর্য ভালোভাবে উপভোগ করতে পারতেন।

কথা হয় আশফা ইসলাম নামের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তিনি বলেন, একটা ছবি তোলার জন্য ১০ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছিলেন। দর্শনার্থীর এত চাপ যে ভালো করে একটি ছবি তোলা যাচ্ছিল না। পার্কে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে দর্শনার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ জন্য অনলাইনে অগ্রিম নির্দিষ্টসংখ্যক টিকিটের ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।

পার্শ্ববর্তি সীতাকুন্ড উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আগত দর্শনার্থীর পদভারে মুখর ডিসি পার্ক। বন্ধের দিন ছাড়া অন্য দিনগুলোতেও পার্কে দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড় রয়েছে। তবে শুক্র ও শনিবার বন্ধের দিন এই ভিড় বাড়ছে মাত্রাতিরিক্ত।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

এর পরও অনেক দর্শনার্থী কাজের চাপ এবং বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে এখনো ফুল উৎসবে আসতে পারেনি। তাদের কথা বিবেচনা করে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে ফুল উৎসব। ফুল উৎসব ঘিরে পার্কে তিনটি বিনোদন কেন্দ্রের পাশাপাশি ৪২টি দোকান বসেছে। উৎসবের টিকিটের মূল্য দর্শনার্থীপ্রতি ৫০ টাকা।

তিনি জানান, পার্কে বর্ণিল ফুলের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্টানেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। গত বুধবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হওয়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, পূর্ব তিমুর, ভুটান, মিয়ানমার, কম্বোডিয়াসহ ১৬টি দেশের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দেশের পোশাকে তুলে ধরেছেন তাঁদের দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।

একইভাবে বৃহ¯পতিবার ডিসি পার্কের ফুল উৎসব মাতিয়েছেন শিরোনামহীন ব্যান্ডের শিল্পীরা। পাশাপাশি আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি ফুল উৎসব ঘিরে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম মাতাবেন দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড নগর বাউল, আর্বোভাইরাস, আর্টসেল, শিরোনামহীন, অ্যাভয়েডরাফা, তীরন্দাজ ও কাকতাল ব্যান্ডের শিল্পীরা।

ডিসি পার্কে আগত দর্শনার্থীদের ওই অনুষ্ঠানে যেতে হলে ফুল উৎসবের টিকিটের পাশাপাশি টাকা দিয়ে আলাদা টিকিট কিনতে হবে। সামনের সারির টিকিটের দাম ৫০০ টাকা এবং পেছনের সারির ৩০০ টাকা।

ঈশান/মখ/মসু

আরও পড়ুন

No more posts to show
error: Content is protected !!