
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় স্বপ্নে পাওয়া তিন মাজার ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় সুন্নী জনতা। এতে নেতৃত্বে দেন আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের স্থানীয় নেতারা। এই তিন মাজারকে তারা অস্তিত্বহীন ভন্ড মাজার বলে অভিহিত করেছেন।
শুক্রবার (২ মে) দিনগত রাতে এই তিন মাজার ভেঙে গুড়িয়ে দেয় বলে জানান রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজানগর ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম তালুকদার।
শনিবার (৩ মে) সন্ধ্যায় এ তথ্য জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দুই মহিলার স্বপ্নে পাওয়া তিন মাজার গুড়িয়ে দেওয়ার খবর শুনেছি। ভন্ড এই মাজারকে কেন্দ্র করে অনৈসলামিক কর্মকান্ড পরিচালনায় স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। ফলে ক্ষুব্দ হয়ে সুন্নী জনতা এই ভন্ড মাজার ব্যবসা প্রতিহত করতে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার রাজানগর ইউনয়নের হালিমপুর বাইশ্যেরডেবা গ্রামে রাতারাতি তিনটি মাজার গজে উঠে ২০১৭ সালের দিকে। স্বপ্নে পাওয়া কল্পিত মাজারের প্রতিষ্ঠাতা ওই গ্রামের মৃত জালালের স্ত্রী জানু আকতার। তিনি নিজ মাটির ঘরে গিলাপ মুড়িয়ে খাজা বাবার আস্তানা বলে দাবি করেন।
অপর দুটি মাজারের প্রতিষ্ঠাতা গ্রামের পাশ্ববর্তি মহিলা শেলী আকতার। তিনি নিজের ঘরের খাটের নিচে কলিমুল্লাহ হুজুর ও হালিমশাহ হুজুর নামে দুটি মাজার পান স্বপ্নে। এরপর এ মাজারকে কেন্দ্র করে তারা পানি পরা, তাবিজ-কবজ, ঝাড়ফুঁক শুরু করেন।
তাছাড়া গত ৬-৭ বছর ধরে তারা মাজার হিসেবে মাইক বাজিয়ে, কুরআান তিলওয়াত, কাউয়ালী গানের মাধ্যমে কল্পিত ওরশ করে আসছে। এভাবে তারা গ্রামের সহজ সরল ধর্মান্ধ মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করে আসছে। সম্প্রতি জানু আকতার তার মাটির ঘরের ওই মাজার পাকা করে স্থায়ী অবকাঠামো গড়ে তোলতে শুরু করে। কিন্তু এলাকার সুন্নী জনতা বিষয়টির খোঁজ খবর নিয়ে এসব মাজার ভন্ড বলে একমত হন।
একপর্যায়ে শুক্রবার আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত নেতা মাওলানা মোজাম্মেল হোসাইনের নেতৃত্বে মাজারগুলো ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। এ সময় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের হাফেজ মাওলানা আনোয়ার, মাওলানা সাইদুল হক, সেনা নেতা জমির উদ্দিন, ব্যাংকার রবিউল ইসলামসহ শতাধিক সামাজিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত নেতা মাওলানা মোজাম্মেল হোসাইন বলেন, কিছুদিন পর পর ওরশ আয়োজনের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থান হতে মহিলারা একত্রিত হতো। এতে এলাকার কারো স¤পৃক্ততা নেই। অনেকে দাবী করেন যে, এখানে মাজারের অস্তিত্ব কোন সময় ছিল না।
জনৈক মহিলা স্বপ্নে দেখেছেন বলে দাবী করে তার মাটির ঘরকে মাজার বলে দাবী করে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি দেখা গেছে মাটির ঘরকে ভেঙে তিনি উক্ত স্থানে লোহা, ইট, বালু সিমেন্ট দ্বারা কথিত মাজার স্থায়ীভাবে নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়।
তিনি বলেন, ইসলামে ভন্ডামীর কোন স্থান নেই। কল্পিত মাজারের নামে ভন্ডামি বন্ধ করার জন্য রাঙ্গুনিয়া উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে জানু আক্তার ও শেলী আকতারের সাথে অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তারা গা ঢাকা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এমনকি তাদের ইউনিয়ন পরিষদে আসার খবর দিলেও আসেননি বলে জানান ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান মুঠোফোনে বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নই, আমার কাছে কেউ কমপ্লেন করেনি। তবে ফেসবুকে এ বিষয়ে একটা স্ট্যাটাস দেখেছি। আপনি যখন বলেছেন, আমি খোঁজ নিচ্ছি।