মঙ্গলবার- ২১ জানুয়ারি, ২০২৫

রেলওয়ের প্রকল্প থেকে তমা ও ম্যাক্সের ৩৫০০ কোটি টাকা লুট!

রেলে তমা ও ম্যাক্সের সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি
print news

রেলওয়ের লাকসাম-আখাউড়া ডুয়েল গেজ রেলপথ প্রকল্পে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা ও ম্যাক্স গ্রুপের সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠে গত দেড় বছর আগে। এর মধ্যেও এই দুর্নীতির অনুসন্ধান শেষ করতে পারেনি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের জুনে। কিন্তু প্রতিবছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। সেই সঙ্গে বাড়ে নির্মাণব্যয়। তিন দফা মেয়াদ বাড়ানোয় প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যায় প্রায় হাজার কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছরের জুলাইয়ে লাকসাম-আখাউড়া ডাবল রেললাইন উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। তবে উদ্বোধনের ছয় মাস আগেই প্রকল্পে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা লুটের অভিযোগে গত বছরের জানুয়ারিতে অনুসন্ধান শুরু করেন দুদক কর্মকর্তারা।

গত জুন পর্যন্ত অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এমই (মেমো অব এভিডেন্স) আকারে কমিশনে একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন পেশ করা হয়েছে। কমিশন তথ্য-উপাত্ত দেখে প্রয়োজন মনে করলে মামলা করার পক্ষে সিদ্ধান্ত দিতে পারে, অথবা আরও তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের নির্দেশনাও দিতে পারে বলে জানিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা।

দেশের বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির বেশ কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছরের ১৫ জানুয়ারি অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এর মধ্যে তমা ও ম্যাক্স গ্রুপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ রেলওয়ে ছাড়াও সড়ক ও জনপথ, বিআইডব্লিউটিএ, গণপূর্ত, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, ক্রীড়া পরিষদ, সিভিল অ্যাভিয়েশনসহ বিভিন্ন দপ্তরের হাজার হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের টেন্ডার বাগিয়ে নেওয়া এবং হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।

এসব অভিযোগ অনুসন্ধানে একাধিক কমিটিও গঠন করে দুদক। এর মধ্যে লাকসাম-আখাউড়া ডুয়েল গেজ রেলপথ প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কারসাজি ও এই প্রকল্পে অন্তত সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য দুদকের তৎকালীন উপপরিচালক ও বর্তমান পরিচালক মোনায়েম হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়। অন্য দুই সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমান ও মো. রুহুল হক।

অনুসন্ধানের দায়িত্ব পেয়ে দুদক কর্মকর্তারা গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওই প্রকল্পের ডিপিপি ও সংশোধিত ডিপিপির সব কাগজপত্র চেয়ে রেলওয়ে মহাপরিচালককে চিঠি দেন। চিঠিতে প্রকল্প পরিচালক সাগর কৃষ্ণ, এস এম লিয়াকত আলী, মো. মোজাম্মেল হক, ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার, মো. কামরুল আহসান ও মামুনুল ইসলামের দায়িত্ব পালনের সময় প্রকল্পকাজের ডেভিয়েশন (রূপান্তর বা বিচ্যুতি), সময় বাড়ানো, বিওকিউর আইটেমভিত্তিক রূপান্তর ও এর পরিমাপের অনুমোদনসংক্রান্ত সব তথ্য-উপাত্ত চাওয়া হয়। কয়েক দফায় এসব তথ্য সংগ্রহ করেন দুদক কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে গত প্রায় দেড় বছরে রেলওয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে কুমিল্লার লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন হয়। ২০১৫ সালে তমা ও ম্যাক্স গ্রুপকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০১৬ সালের নভেম্বরে শুরু হয় প্রকল্পের কাজ। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের জুনে।

কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়। সে অনুযায়ী ২০২১ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর করে আরও দুই দফা বাড়ানো হয়। সর্বশেষ অর্থবছরে ব্যয় বাড়ানো হয় ৪০০ কোটি টাকা। বর্ধিত মেয়াদ অনুযায়ী ২০২৩ সালের জুনে কাজ শেষ দেখানো হয়। সে অনুযায়ী জুলাই মাসে উদ্বোধন ও ট্রেন চলাচল শুরু হয়। তবে প্রকল্পসংক্রান্ত অনেক কাজ বাকি ছিল। রেলওয়ে সূত্র জানায়, এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। সেগুলো চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।

এদিকে তমা-ম্যাক্স গ্রুপের বিরুদ্ধে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডুয়েল গেজ রেলপথ প্রকল্পের টেন্ডার ছিনতাই, চীনা কোম্পানি চায়না লিমিটেডের কর্মকর্তাদের অপহরণ ও বিভিন্ন দুর্নীতির বিষয়ে ২০১৮ সালে আরেকটি অভিযোগের অনুসন্ধান করে দুদক। সেটি অনুসন্ধানে দুদকের তৎকালীন পরিচালক এ কে এম জায়েদ হোসেন খানকে প্রধান করে তিন সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটি প্রায় দুই বছর অনুসন্ধান শেষে তমা ও ম্যাক্স গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন চেয়ে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করলেও সেটি ফাইলবন্দি আছে বলে জানা গেছে।

ঈশান/মখ/সুপ

আরও পড়ুন

No more posts to show