মঙ্গলবার- ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

রেল ট্রানজিটে পাল্টে যাবে আন্তযোগাযোগ, লাভবান হবে বাংলাদেশ

রেল ট্রানজিটে পাল্টে যাবে আন্তযোগাযোগ, লাভবান হবে বাংলাদেশ
print news

বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের ট্রেন চলবে। এ নিয়ে সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারকও সই হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের ভেতরে নতুন রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বাড়ানো হচ্ছে রেলপথের সক্ষমতাও। সংস্কারও করতে হবে বিদ্যমান রেলপথেরও।

আর এই রেল ট্রানিজট চালু হলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। তবে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন। সমীক্ষা হলে বোঝা যাবে কত কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করতে হবে, কোথায় কোথায় সক্ষমতা বাড়াতে হবে, সংস্কার করতে হবে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ খাত বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশের ভেতরে যে রেলপথ দিয়ে আন্তর্দেশীয় যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণ করতে চায়, সেটির জন্য পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা করা দরকার। এতে বোঝা যাবে এই রেলপথ কতটা ব্যবহারের উপযোগী, কতটুকু সারপ্লাস আছে, আর সেই সারপ্লাস আমরা পরবর্তী সময়ে সর্বোচ্চ কতটা ব্যবহার করতে পারব।’

বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, মোট ১২টি রুট দিয়ে ভারতের ট্রেন বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। এই রুটগুলোতেই মূলত নতুন রেলপথ নির্মাণ ও সংস্কার করে সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে এসব রেলপথ নির্মাণে অর্থায়নের বিষয়টি এখনো ভারত-বাংলাদেশ কোনো পক্ষ থেকেই পরিষ্কার করা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বালুরঘাট (ভারত)-হিলি-পার্বতীপুর-কাউনিয়া-লালমনিরহাট-মোগলহাট-গীতালদহ (ভারত) ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রেলপথে ১৪ কিলোমিটার হবে নতুন রেললাইন এবং ১৮ কিলোমিটারের গেজ পাল্টানো হবে। বালুরঘাট (ভারত)-গীতলদহ-বামনহাট-সোনাহাট-গোলকগঞ্জ-ধুবরির (ভারত) দৈর্ঘ্য হবে ৫৬ কিলোমিটার, যার মধ্যে ৩৮ কিলোমিটার হবে নতুন রেললাইন এবং ১৮ কিলোমিটার হবে গেজ রূপান্তর।

এ ছাড়া বালুরঘাট (ভারত)-হিলি-গাইবান্ধা-মহেন্দ্রগঞ্জ-তুরা-মেন্দিপাথর (ভারত) রুটে ২৫০ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হবে। মঙ্গুরজান (ভারত)-পীরগঞ্জ-ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়-হলদিবাড়ি (ভারত) রুটে ৬০ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হবে।

ডালখোলা (ভারত)-পীরগঞ্জ-ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়-হলদিবাড়ি (ভারত) রুটে ৮০ কিলোমিটার নতুন রেললাইন হবে। রাধিকাপুর (ভারত)-বিরল-পার্বতীপুর-কাউনিয়া-গীতলদহ (ভারত) রুটের দৈর্ঘ্য হবে ৩২ কিলোমিটার, যার মধ্যে ১৪ কিলোমিটার নতুন রেললাইন এবং ১৮ কিলোমিটার হবে গেজ রূপান্তর।

বেলোনিয়া (ভারত)-ফেনী-চট্টগ্রাম রুটের দৈর্ঘ্য হবে ১৩১ কিলোমিটার, যার মধ্যে ৩৮ কিলোমিটার নতুন রেললাইন এবং ৯৩ কিলোমিটার হবে গেজ রূপান্তর। গেদে (ভারত)-দর্শনা-ঈশ্বরদী-টঙ্গী-ভৈরববাজার-আখাউড়া-আগরতলা (ভারত) রুটে ১০০ কিলোমিটার গেজ রূপান্তর করতে হবে।

এছাড়া পেট্রাপোল (ভারত)-বেনাপোল-নাভারন-যশোর-রূপদিয়া-পদ্মবিলা-লোহাগাড়া-কাশিয়ানী-শিবচর-মাওয়া-নিমতলা-গেন্ডারিয়া ঢাকা-টঙ্গী-ভৈরববাজার-আখাউড়া-আগরতলা রুটে ১২০ কিলোমিটার গেজ রূপান্তরের প্রয়োজন হবে। বালুরঘাট (ভারত)-হিলি-পার্বতীপুর-কাউনিয়া-লালমনিরহাট-মোগলহাট-গীতালদহ (ভারত) রুটটি ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ। এখানে ১৪ কিলোমিটার বরাবর ট্র্যাক স্থাপন করতে হবে এবং বাকি ১৮ কিলোমিটারের জন্য গেজ রূপান্তর করতে হবে।

বালুরঘাট (ভারত)-হিলি-গাইবান্ধা-মহেন্দ্রগঞ্জ-তুরা-মেন্দিপাথারের মতো কয়েকটি রুট আছে, যেখানে ২৫০ কিলোমিটারের পুরো অংশে নতুন রেল ট্র্যাক স্থাপন করতে হবে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিকল্প রুটের মধ্যে ফোর্বসগঞ্জ-লক্ষ্মীপুর সেকশনে ১৭ দশমিক ৬০ কিলোমিটার নতুন রুট হবে। ঠাকুরগঞ্জ (ভারত)-ছাত্তারহাট সেকশনে নতুন রুট হবে ২৪ দশমিক ৪০ কিলোমিটার। কুমেদপুর (ভারত)-আম্বারি ফালাকাটা নতুন রুটে ১৭০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের প্রয়োজন হবে।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

ভারতকে বাংলাদেশ এর আগেও ট্রানজিট দিয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো ‘অভ্যন্তরীণ নৌ-ট্রানজিট ও বাণিজ্য’ প্রটোকল স্বাক্ষর হয়েছিল। এর অনেক পরে ২০০৭ সালে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়েতে যুক্ত হতে চুক্তি করে বাংলাদেশ। প্রাথমিকভাবে এই রেলপথের লক্ষ্য ছিলো ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তোলা। তবে সেই সময়ই বলা হয়, কালক্রমে এই রেলপথে যুক্ত হবে মায়ানমার, চীন। এই রেল নেটওয়ার্কটিকে বিবেচনায় রেখে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ ও কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ তৈরি করা হয়। তবে শীঘ্রই এই রেল পথের সঙ্গে চীন ও মায়ানমারকে সংযুক্ত করার সম্ভাবনা নেই। এটি এখন শুধু বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেই সীমিত হয়ে পড়েছে।

নেপাল ও ভুটান যথাক্রমে ১৯৭৬ ও ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশের সাথে ট্রানজিট চুক্তি করেছিলো। কিন্তু ভারতের ভূ-খণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের মালবাহী গাড়ি চলাচল করতে না পারায় সেটি কার্যকর হয়নি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে আন্তদেশীয় চুক্তি স্বাক্ষরের পর নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনা জেগেছে বলে মন্তব্য করেছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ূন কবির বলেন, ‘আপনি যখন বিমসটেক (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন), ট্রান্স এশিয়ান নেটওয়ার্ক আর বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল নিয়ে উপআঞ্চলিক সংযুক্তি-বিবিআইএন নিয়ে যখন কথা বলছি, সেই নেটওয়ার্ক বা রুট কিন্তু কেবল একটি দেশের রুট ব্যবহার করে বাস্তবায়ন সম্ভব না। আমরা চুক্তি বাস্তবায়নের সময় বলছি ভারতের ট্রেনটি গেদে স্টেশন থেকে দর্শনা, আব্দুলপুর, চিলাহাটি হয়ে হলদিবাড়ি, ডালগাও পর্যন্ত যাবে। পরে আমাদের অনুরোধে পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলার হাসিমারা সীমান্ত পর্যন্ত রেল চালানোর অনুমতি মিলেছে। এতে আমরা ভুটান সীমান্তের কাছাকাছি যেতে পারব।’

রেলপথ সচিব বলেন, ‘বিরল-রাধিকাপুর হয়ে ভারতের যোগবাণী পর্যন্ত রেল চলবে। সেখান থেকে নেপালের বিরাটনগর সীমান্ত কাছে। নেপালের পাথর এ রুটে আসছে বাংলাদেশে। এই পথে যদি পণ্যবাহী রেল আমরা পরিচালনা করতে পারি তবে বাংলাদেশ রাজস্ব আরও বেশি আয় করবে। চুক্তি অনুযায়ী আমরা ভারতের বর্তমান রেলপথ ব্যবহার করতে পারব।’

এখন প্রশ্ন উঠেছে, ১২টি রেলপথে আন্তদেশীয় সংযোগ স্থাপন করার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ কিভাবে হবে। এ প্রশ্নে রেলওয়ে মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ‘দুই দেশের একটা কমিটি হবে। এখন স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) তৈরি করতে হবে। ট্যারিফ প্ল্যান করতে হবে। সবে তো চুক্তি হল। কারা কিভাবে অর্থ লগ্নি করবে সেটি আসবে তারপর। ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট দু ধরনের পলিসির কথাই চুক্তিতে আছে। এখন নেপাল, ভুটানে কিভাবে পণ্য যাবে, কিভাবে আমরা লভ্যাংশ পাব সেটি নির্ধারণ করবে কমিটি। এতে কোনো এক দেশ এককভাবে লাভবান হবে এমন কোনো কথা নেই।’

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

পরিবহনে ভারতের পথ কমবে ১১০০ কিলোমিটার, সময় বাঁচবে ২৬ ঘণ্টা :
ভারতের ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের মালবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেন কলকাতা থেকে নিউ জলপাইগুড়ি-গুয়াহাটি হয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার দূরত্ব ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার। কিন্তু যদি কলকাতা-টঙ্গী-আখাউরা-আগরতলা রুট ব্যবহার করলে দূরত্ব হবে মাত্র ৫০০ কিলোমিটার।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বর্তমানে আগরতলা-কলকাতা রুটে যাত্রীবাহী ট্রেনের সময় লাগে ৩৬ ঘণ্টা। কিন্তু বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রস্তাবিত রুটে ট্রেন চললে লাগবে ১০ ঘণ্টার কম। সমঝোতা অনুযায়ী, ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশ নেপালে পণ্য পরিবহন করতে পারবে।

এদিকে ভারতের ট্রেন বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে চলাচল করলে অভ্যন্তরীণ রেল যোগাযোগব্যবস্থায় প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা। এতে ‘অপারেশনাল ডিজরাপশনের’ আশঙ্কা করছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে বুয়েটের অধ্যাপক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ‘নতুন ট্রেন যখন ঢুকবে বাংলাদেশে, তখন বাংলাদেশের নিজস্ব ট্রেনগুলোর চলাচল নিয়ে ভাবতে হবে। এই করিডরে চলাচলকারী রেলগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে আগে, তারপর নতুন ট্রেনের জন্য সম্ভাব্য সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে বুয়েটের এই অধ্যাপক বলেন, ‘অন্য একটি দেশের ট্রেন যখন দেশে ঢুকবে, তখন কিন্তু অপারেশনাল ডিজরাপশন তৈরি হবে। তারপর সিকিউরিটির জন্য খরচ আছে। আবার অবকাঠামো অবচয় কত হবে, প্রতিবছর সেটি হিসাব করতে হবে। এ ছাড়া রেলপথের ভবিষ্যৎ অবকাঠামো ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনা যেন বিনষ্ট না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।’ তবে বিশ্লেষকরা বলেছেন, এই খরচ উঠানোর কৌশল গ্রহণ করলে উল্টো অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্রডগেজ রেলপথগুলোর সর্বোচ্চ ভার বহনক্ষমতা (এক্সেল লোড) ২২ দশমিক ৫ টন। ভারতের ব্রডগেজ রেলপথগুলোয় এ সক্ষমতা ২২ দশমিক ৮২ টন। অর্থাৎ ভারতের রেলপথের চেয়ে বাংলাদেশের রেলপথের ভার বহনক্ষমতা কম। এখন প্রশ্ন আসবে, নতুন রেলপথে কোন রেক দিয়ে ট্রেন চালানো হবে। ভারতীয় রেক দিয়ে ট্রেন চালালে সেই মোতাবেক রেল ট্র্যাকও তৈরি করতে হবে। দর্শনা-চিলাহাটি রেলপথে সক্ষমতার চেয়ে বেশি ট্রেন চালাচ্ছে রেলওয়ে। এখন ভারতের মালবাহী ট্রেনগুলো বাংলাদেশের রেলপথের দুর্বল অংশগুলোয় গতি কমিয়ে চলে, তাহলে বাংলাদেশের রেল যোগাযোগব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে।’

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

রেল ট্রানজিট পাওয়ায় ভারত যে এত সুবিধা পাচ্ছে, তাতে বাংলাদেশের লাভ কী তা নিয়েও নানা আলোচনা চলছে। এ ক্ষেত্রে এখনো সরকারের পক্ষ থেকে প্রাপ্তি সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ‘ভারত থেকে মালবাহী বা প্যাসেঞ্জার যে ট্রেনই চলুক না কেন, আমরা একটা রাজস্ব পাব। ট্যারিফ কমিশন একটা ভাড়া ঠিক করে দেবে। তাতে রাষ্ট্র আর্থিকভাবে লাভবান হবে। এখানে একতরফাভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ নেই। তবে যাত্রীবাহী ট্রেন থেকে মালবাহী ট্রেনে আমাদের সাত-আট গুণ বেশি লাভ হয়।’

রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ রেলওয়েতে ব্রডগেজ ক্যারেজের সংকট আছে। তাই রাজশাহী-কলকাতার রুটের ট্রেনটি ভারতীয় ক্যারেজ সংযোজন করে চলাচল করতে পারে।

এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ‘আমাদের যে ইঞ্জিন আছে তা দিয়ে আমরা সপ্তাহে একটা-দুইটা ট্রেন দুই দিন বা তিন দিন চালাব। আমাদের ব্রডগেজ কোচস্বল্পতা আছে। এখন ভারতের রেলওয়ের সঙ্গে আমরা আলোচনা করছি যদি তাদের ব্রডগেজ কোচ এনে সংযোজন করা যায়। রাজশাহী থেকে দর্শনার যে দূরত্ব… দর্শনা থেকে গেদে বা কলকাতার দূরত্ব কম। এখানে রাজস্ব আয় আমরা বেশি পাব।’

নিরাপত্তা নিয়ে নানা শঙ্কা :
রেল ট্রানজিট দেওয়ার ফলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ারও আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ। তাদের আশঙ্কা, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমন করতে ভারত বাংলাদেশের ভেতরের এই রুট ব্যবহার করতে চাইতে পারে। এতে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে বাংলাদেশ।

এ প্রসঙ্গে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যেসব রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে অস্থিরতা বিরাজ করছে, সেসব অঞ্চলে ভারত হয়তো এই রেলপথ ব্যবহার করতে চাইবে। এসব রাজ্যে অতীতে ভারতীয় নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সংঘাতও হতে দেখা গেছে। অন্যদিকে চীন-ভারত সীমান্তেও বিভিন্ন সময় সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হতে দেখা গেছে।’

তৌহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘এমন সংঘাতময় পরিস্থিতিতে বা দুঃসময়ে ভারত অবশ্যই এসব ট্রানজিট রুট ব্যবহার করতে চাইবে এবং সেটিই দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তার সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে উঠতে পারে।’

বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবির বলছেন, ট্রানজিট দেওয়ার পর সেটির ওপর বাংলাদেশ কতটুকু নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবে, সেটির ওপরেই নিরাপত্তা হুমকির বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করবে। ট্রানজিটে যদি শুধু পণ্য পরিবহনের কথা বলা থাকে, তাহলে সেটি ছাড়া ট্রেনে অন্য কিছু আনা-নেওয়া করা হচ্ছে কি না, সেটি যদি ঠিকমতো না দেখা হয় বা সেটির নিয়ন্ত্রণ যদি বাংলাদেশের হাতে না থাকে, তাহলে তো সমস্যা হতেই পারে।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show
error: Content is protected !!