মঙ্গলবার- ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

লাভজনক হওয়ার পরও বন্ধ হয়ে গেল কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন

লাভজনক হওয়ার পরও বন্ধ কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন
print news

লাভজনক হওয়ার পরও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রুটে চলাচল করা কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন বন্ধ করে দিয়েছে রেলওয়ে। এতে ক্ষুব্দ হয়েছেন চট্টগ্রামের সাধারণ যাত্রীরা। 

বৃহস্পতিবার থেকে ট্রেন বন্ধ রাখতে বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে (ডিআরএম) চিঠি দিয়েছে রেলওয়ের যান্ত্রিক বিভাগ। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত ৮ এপ্রিল থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের বিশেষ ট্রেনটি চালু করেছিল কর্তৃপক্ষ।

যাত্রী চাহিদা ও স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে ট্রেনটি চালু রাখার সময়সীমা ৩০ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছিল। বন্ধের চিঠিতে বলা হয়, ইঞ্জিন ও কর্মী সংকটে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী একমাত্র ও বিশেষ ট্রেনটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর দাবি, বাস মালিকদের প্রেসক্রিপশনে কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন বন্ধ করে দিয়েছে রেলওয়ে। এই প্রেসক্রিপশনে হয়তো ও কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

তিনি প্রশ্ন রাখেন,শুধু রাজধানীবাসীকে সুবিধা দেওয়ার জন্য কি ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রেলপথটি নির্মাণ করা হয়েছে? এই রেলপথ নির্মাণে চট্টগ্রাম, দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের জনগণের জমিজমা, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, নদী-নালা, খাল-বিল বিলীন হয়েছে। অথচ এই ট্রেন সার্ভিস চালুর পর থেকে তারা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে যাতায়াতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এতে স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পূর্বাঞ্চল রেলের পাঁচজন কর্মকর্তা বলেন, কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনটি দেশের সবচেয়ে লাভজনক ছিল। ট্রেনটি চালানোর মতো সব রকমের প্রস্তুতি তাঁদের রয়েছে। তারপরও রেল কেন চালাচ্ছে না, সেটি তাঁরা বুঝতে পারছেন না।

তারা বলেন,চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে আলাদা ট্রেন দরকার। অন্য কোনো ট্রেনকে চট্টগ্রামে স্টপেজ দিয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত নিয়ে গেলে চট্টগ্রামের যাত্রীরা কোনো সুফলই পাবে না। কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনটি স্থায়ীভাবে চলাচল করলে চট্টগ্রামের মানুষ উপকৃত হত।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনটি দেশের সবচেয়ে লাভজনক ছিল। ট্রেনটি না চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এতে আমাদের কিছু করার নেই।’ এখানে কোন প্রেসক্রিপশন নেই।

পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্যিক বিভাগ জানায়, ট্রেনটিতে প্রতি মাসে আয় ছিল ৬৫ লাখ টাকার বেশি, যা দেশে চলা অন্যান্য ট্রেনের চেয়ে বেশি। চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেন, সুবর্ণসহ অন্য আন্তনগর ট্রেনের সঙ্গে তুলনা করলে এই কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনের আয় বেশি।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) তারেক মো. ইমরান বলেন, কক্সবাজার স্পেশাল ৯ / ১০ ঈদ উপলক্ষে মাত্র চলেছে ১৮ দিন। এই সময়ে ট্রেনটি থেকে আয় হয়েছে ৪২ লাখ টাকা। ট্রেনটি গত ৮ এপ্রিল থেকে চলাচল শুরু করে। ৮ এপ্রিল থেকে ২৮ এপ্রিলের (১১,১৫ ও ১৬ তারিখ বন্ধ ছিল) হিসেবে দেখা যায়, প্রতিদিনই যাত্রীদের চাপ ছিল।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

তারেক মো. ইমরান বলেন, চট্টগ্রামের স্পেশাল ট্রেনটি ১০ / ২০ লোড নিয়ে চলাচল করেছে। ট্রেনটিতে সিট ছিল ৪৩৮টি। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির সিট ৫৪টি, প্রথম শ্রেণির চেয়ার ৫৪ ও শোভন ৩৩০টি। এটি চট্টগ্রামের ষোলোশহর, জানালীহাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা ও রামুতে থামত।

উল্লেখ্য, প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ১০১ কিলোমিটার রেলপথ গত বছরের ১১ নভেম্বর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ডিসেম্বর থেকে দুই ধাপে ঢাকা থেকে কক্সবাজার রুটে দুটি বিরতিহীন আন্তনগর ট্রেন চালু করে রেলওয়ে।

ঈশান/মখ/সুপ

আরও পড়ুন

No more posts to show
error: Content is protected !!