শনিবার- ২৬ এপ্রিল, ২০২৫

হাতি পালার লাইসেন্স নিয়ে পাচার করতেন দাঁত-চামড়া

হাতি লালন-পালনের বৈধ লাইসেন্সধারী আব্দুল মালেক (৬৭)। কিন্তু হাতি দিয়ে তিনি টানাতেন পাহাড়ের চোরাই গাছ। পাচার করতেন হাতির দাঁত, হরিণের চামড়াসহ বন্যপ্রাণীর দেহের মূল্যবান অংশ। হাতিই যেন তার অবৈধ আয়ের একমাত্র মাধ্যম।

দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এসব অপরাধ করে পার পেলেও অবশেষে চট্টগ্রাম মহানগরীর শুলকবহর এলাকায় এসে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েন আবদুল মালেক। এ সময় তার কাছ থেকে হাতির ৪টি দাঁত, ছোট বড় ও মাঝারি আকারের ২০টি দাতের অংশ। যার ওজন মোট ১৪ কেজি। এছাড়া একটি হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়।

শনিবার (২৭ মে) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেন র‌্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. নূরুল আবছার। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন শুলকবহর এলাকার একটি বাড়ীর ৩য় তলার একটি রুমে বন্যপ্রাণী নিধনকৃত হাতির দাঁত ও হরিণের চামড়া সংগ্রহে রেখে বিক্রয় করার চেষ্টা করছেন এক ব্যাক্তি।

গোপন সূত্রে এমন তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৭ এর একটি টিম অভিযান চালায়। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে আব্দুল মালেক পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় শুলকবহর এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তার দেখানো মতে, ভাড়াকরা বসত রুমের খাটের নিচ থেকে সাদা প্লাষ্টিকের বস্তায় মোড়ানো ৪টি হাতির দাঁত, ছোট বড় ও মাঝারি আকারের ২০টি হাতির দাঁতের খন্ডাংশ ও একটি হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আব্দুল মালেক জানান, দীর্ঘদিন যাবত পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পারমিট ব্যতিত বন্যপ্রাণীর (হাতির দাঁত ও হরিণের চামড়া) বিভিন্ন অংশ বিশেষ সংগ্রহ করে পরবর্তীতে তা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে উচ্চ মূল্যে বিক্রয় করে আসছে। উদ্ধারকৃত মালামালের আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। তাকে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, আব্দুল মালেক মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানার বাসিন্দা। তিনি ১৯৭৬ সাল থেকে তার বাবার সাথে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি এলাকায় হাতি দেখভাল করার জন্য আসেন। তার বাবার কয়েকটি হাতি ছিল। ১৯৯৮ সালে তার বাবা মারা গেলে হাতির ব্যবসা দেখভাল করার জন্য তিনি ছয় বছর যাবত রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি থানার মারিশ্যা এলাকায় ছিলেন। তিনি একজন লাইসেন্সধারী হাতির পালক।

২০১০ সালের পরে লাইসেন্স প্রভিশন হলে তিনি পুনরায় লাইসেন্স করেন। তবে তিনি স্থায়ীভাবে তখন বাঘাইছড়ি থাকতেন না, ২-৪ দিন থেকে আবার মৌলভীবাজার চলে যেতেন। তার বৈধভাবে মোট ছোট বড় ১২টি হাতি আছে। তবে স্থানীয় তথ্যানুযায়ী তার আরো ২৪-২৫টি রেজিষ্ট্রেশনবিহীন হাতি রয়েছে যা দিয়ে তিনি বিয়ে বাড়িতে ভাড়াসহ পাহাড়ি এলাকায় চোরাই গাছ টানার কাজ করান। পাহাড়ি এলাকা থেকে অবৈধভাবে দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর চামড়া, হাতির দাঁত পাচারের ব্যবসা করে আসছেন।

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page