বৃহস্পতিবার- ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫

হালদায় রেকর্ড পরিমাণ মাছের ডিম সংগ্রহ

print news

দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র ও বঙ্গবন্ধু হেরিটেজ ঘোষিত হালদা নদীতে রেকর্ড পরিমাণ মা মাছের ডিম সংগ্রহ করেছেন জেলেরা। রবিবার মধ্যরাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে কার্প জাতীয় (রুই, কাতল, মৃগেল ও কালবাউশ) মাছের ডিম সংগ্রহ করেন তারা।

ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, উৎসবমুখর পরিবেশে ব্যাপক ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। অনেকের নৌকায় সংকুলানের অভাবে ডিম ফেলে দিয়ে আসতে হয়েছে। আশাতীত ডিম সংগ্রহ করতে পারায় দারুণ খুশি জেলেরা। বর্তমানে হ্যাচারীতে ডিম পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা।

চবির হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ও হালদা গবেষক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদা নদীতে রবিবার দিবাগত রাতে পুরোদমে ডিম ছাড়ে মা মাছ। এর আগে গত দেড় মাস ধরে ডিম ছাড়ার পাঁচটি তিথির মধ্যে পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও অনুকূল পরিবেশের জন্য ডিম আহরণের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে জেলেরা নদী পাড়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন।

অবশেষে শনিবার দুপুরে বজ্রসহ ঝুম বৃষ্টি নামায় রবিবার (১৮ জুন) সকালে হালদা নদীতে পাহাড়ি ঢল নামে। এতে দুপুরের দিকে ডিম ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ সময় হালদা নদীর প্রায় ৯৮ কিলোমিটার এলাকায় তিন শতাধিক নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহ শুরু করে জেলেরা। তবে মা মাছ পুরোপুরি ডিম ছাড়ে ওইদিন রাত ১১টার পর। এতে উৎসবের আমেজে ডিম সংগ্রহ করেন সংগ্রহকারীরা।

আরও পড়ুন :  মাদক বাণিজ্যেরও গডফাদার ষোলশহর রেল জংশনের মাস্টার জয়নাল!

তিনি বলেন, এবার রেকর্ড পরিমাণ ডিম পাওয়া গেছে। তবে মৎস্য ও প্রাণিস¤পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত হালদা নদীর রুই জাতীয় মাছের ডিম ও রেনুপোনার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ সংক্রান্ত কমিটি এখনও মাছের ডিমের পরিমাণ জানাতে পারেননি।

মনজুরুল কিবরিয়া আরো বলেন, সংগ্রহকারীরা এত ডিম সংগ্রহ করেছে, যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। এমন একটি দিনের অপেক্ষায় ছিলাম দীর্ঘ ২৩ বছর। আগে গল্পের মত শুনতাম নৌকাতে সংকুলন না হওয়ায় ডিম ছেড়ে দিয়ে আসতে। এখন নিজের চোখে দেখলাম সংগ্রহকারীরা ডিম ছেড়ে দিয়ে এসেছে। এ সফলতা হালদা নদী রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সকলের।

হালদা গবেষক ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, হালদা নদী মিঠা পানির মেজরকার্প জাতীয় মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল, এবং কালিবাউশ) একটি অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং প্রজননের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটারসমূহ অনুকূলে না থাকায় এতোদিন পুরোদমে ডিম ছাড়েনি তবে রবিবার রাতে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হওয়ার পুরোদমে ডিম ছাড়ে কার্পজাতীয় মা মাছ।

আরও পড়ুন :  মাদক বাণিজ্যেরও গডফাদার ষোলশহর রেল জংশনের মাস্টার জয়নাল!

ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন বলেন, সংগ্রহ করা ডিম নিজস্ব হ্যাচারিতে রাখা হয়েছে। নদীতে তিন শতাধিক সংগ্রহকারী নৌকাভর্তি ডিম পেয়েছে। তবে এর পরিমান কত হবে তা বলা যাচ্ছে না। এটাই বলতে পারি, এবার যে ডিম সংগ্রহ হয়েছে তা বিগত বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে যাবে।

তিনি বলেন, ডিমগুলো হ্যাচারীতে ১৮ ঘণ্টা রাখার পর ডিম থেকে রেণু হবে। এরপর তিনদিন ধরে রেণুগুলোকে নার্সিং করবেন। এতে পোনায় পরিণত হবে সেগুলো। অর্থাৎ সংগ্রহের ৯৬ ঘণ্টা পর মা মাছের ডিম বিক্রয়যোগ্য পোনায় পরিণত হবে।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহিদুল আলম বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র ও বঙ্গবন্ধু হেরিটেজ ঘোষিত হালদা নদী। এই নদীর অমুল্য সম্পদ কার্প জাতীয় মা-মাছের ডিম। এসব মাছের ডিমের এক কেজি রেণুর দাম সাড়ে ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়। এই অমূল্য সম্পদ রক্ষায় উপজেলা প্রশাসন ও নৌ পুলিশের অবদান সবচেয়ে বেশি।

আরও পড়ুন :  মাদক বাণিজ্যেরও গডফাদার ষোলশহর রেল জংশনের মাস্টার জয়নাল!

তিনি বলেন, ডিম সংগ্রহ শেষ হওয়ার পর শুরু হয়ে যাবে রেণু ফোটানোর কাজ। রেণু ফোটানোর জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিটা হ্যাচারী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলেরাও পাত কুঁয়ার মাধ্যমে রেণু ফুটিয়ে থাকেন। প্রায় ৯৬ ঘন্টার পর এই রেণুর পোনা বিক্রয় উপযোগী হবে।

হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে হালদা নদী থেকে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করেন জেলেরা। ২০২১ সালে সাড়ে ৮ হাজার কেজি, ২০২০ সালে হালদা নদীতে রেকর্ড পরিমাণ ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়া গিয়েছিল। ২০১৯ সালে প্রায় সাত হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল।

এছাড়া ২০১৮ সালে স্থানীয়রা ডিম সংগ্রহ করেছিলেন ২২ হাজার ৬৮০ কেজি। ২০১৭ সালে মাত্র ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ (নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়।

আরও পড়ুন

No more posts to show