
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়া গ্রামে অপহরণের পর খুন হওয়া শিবলী সাদিক হৃদয়ের ঘরে দাওয়াত খান খুনিরা। তুলেন সেলফিও।
সেলফির একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে গত বুধবার রাত থেকে। খুনিদের কৃত্রিম হাসি শিরোনামে ছবিটি পোস্ট করা হয়। খুনিদের মাঝে শিবলী সাদিক হৃদয়কে হাসিমুখে দেখা যায়।
পোস্টে লেখা হয়, পাহাড়ি কিশোরদের সাথে বন্ধুত্বের স্মৃতি ধরে রাখতে মুরগির খামারের কাজের ফাঁকে সেলফি তুলেছিল শিবলী সাদিক হৃদয়। সেই সেলফিতে বন্ধুত্বের ছদ্মবেশ ধারণকারী পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের যে হাসি, সেই হাসিতে যে শত্রুতা ছিল তা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। সহজ সরল নি®পাপ হৃদয়ও কোনো দিন কল্পনা করেনি বন্ধুত্বের ফাঁদে আটকিয়ে তাকে হত্যা করা হবে।
হৃদয়ের মা ও স্থানীয়দের ভাষ্য, রাউজান কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ও ইলিয়াছ পোল্ট্রি ফার্মের কিশোর ম্যানেজার হৃদয় ছিল বন্ধুসুলভ স্বভাবের। ফার্মের কর্মচারী হিসাবে যোগ দেয়া সমবয়সী পাহাড়ি কিশোরদের সাথে গড়ে উঠেছিল তার বন্ধুত্ব। এক সময় খামারের দায়িত্ব পালনে অবহেলাজনিত কারণে ম্যানেজার হিসাবে তাদের সাথে তর্কেও জড়াতে হয়েছিল। অনেকটা এক রোখা মনোভাবাপন্ন পাহাড়িরা এই ইস্যুতে চলে যায় ফার্মের চাকুরি ছেড়ে। পরে মালিকের ডাকে সাড়া দিয়ে তারা আবার খামারে যোগ দেয়।
অতীতের সব ভুল বুঝাবুঝি মিটিয়ে ফেলেছে ভাব করে তারা হৃদয়ের সাথে আবারো আগের মত বন্ধুত্বের স¤পর্ক গড়ে তুলে। এ সুযোগে তারা আগের বিরোধের প্রতিশোধ নিতে যে খুনের পরিকল্পনা করছিল তা বুঝতে পারেনি হৃদয়। সরল মনে হৃদয় তাদেরকে নিজের বাড়িতে নিয়ে দাওয়াতও খাওয়ায়। এ সময় হৃদয় বন্ধুত্বের স্মৃতি ধরে রাখতে নিজের মোবাইলে সেলফি তুলেন।
সর্বশেষ গত ২৮ আগস্ট রাতে ফার্ম থেকে অপহরণ করে হৃদয়কে। এই ঘটনার ১৩ দিন পর তার রক্ত মাংসহীন কঙ্কাল পুলিশ উদ্ধার করে গত সোমবার। হৃদয়ের দাফন হয়ে গেলেও মোবাইলে তোলা সেলফি খুনিদের খুনের নেশাকে সামনে এনে দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, হৃদয়কে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে কদলপুরের পূর্ব পার্শ্বের একটি দুর্গম পাহাড়ের চ‚ড়ায়। অনেকটা নিরিবিলি ওই পাহাড়ি এলাকায় কোনো জনবসতি নেই। যারা সেখানে লাশ উদ্ধারে পুলিশের সাথে ওই পাহাড়ের চ‚ড়া উঠেছেন তারা বলেছেন ওই দুর্গম এলাকায় যে মানুষের বিচরণ রয়েছে সেই আলামত তারা দেখেছেন। তাদের ধারণা পাহাড়ে সক্রিয় সন্ত্রাসীরা নিরাপদ আস্তানা হিসাবে এই জায়গা ব্যবহার করে থাকে।
এদিকে হৃদয় খুনের সাথে জড়িত পাহাড়ি সন্ত্রাসী উমংচিং মারমা গণপিটুনিতে মারা যাওয়ার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার ভয়ে গোটা কদলপুর ইউনিয়নের মানুষ গ্রেফতার আতংকে রয়েছে। বিশেষ করে ঘটনাস্থলের কাছের বাড়ি সমূহের মানুষ পুলিশ আতংকে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছে। স্থানীয়দের মধ্যে কারো কারো অভিযোগ পুলিশ নিরীহ মানুষ ধরে থানায় নিয়ে আপোষ রফার মাধ্যমে ছাড়ছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় রাউজান থানার ওসি আবদুল্লাহ হারুনের সাথে। তিনি বলেন, কদলপুরের গণপিটুনির মামলায় কোনো ব্যক্তিকে আটক করা হয়নি। পুরুষ শূন্য হয়ে পড়ার ঘটনাও ঠিক নয়। মামলা দায়েরের প্রথম দিন গ্রামের কয়েকজনকে পুলিশ আটক করলেও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকে হৃদয়ের কঙ্কাল ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের হাতে দেয়া হলে গ্রামে এনে দাফন করা হয়। একইভাবে গণপিটুনিতে নিহত সন্ত্রাসীর লাশ ময়নাতদন্তশেষে তার পরিবারের সদস্যদের হাতে দেয়া হয়েছে বলে জানান থানার ওসি আবদুল্লাহ হারুন।
ওসি আরও বলেন, হৃদয়ের কঙ্কাল উদ্ধারের পর গ্রামে উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়ি অবরোধ করে আসামি উমংচিং মারমাকে ছিনিয়ে নেয়। এরপর গণধোলাইয়ে নিহত হন উমংচিং মারমা। এ ঘটনায় কারো নাম ও সংখ্যা উল্লেখ না করে থানায় মামলা করা হয়েছে।