
ঈদের দিন সকাল থেকে টানা তিন দিনে ভয়াবহ তিনটি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ২৪ জন। সবগুলো দুর্ঘটনায় ঘটেছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি বনরেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ের সম্মুখস্থ জাঙ্গালিয়া মাজারটেক এলাকায়।
ফলে জায়গাটি দূর্ঘটনার হটস্পট হয়ে উঠেছে। দূর্ঘটনা কমাতে তাৎক্ষণিকভাবে ওই এলাকায় বসানো হয়েছে গতিরোধক বা র্যাম্বল স্পিড। যা এখন যানবাহন চালক ও যাত্রীদের জন্য নতুন ভয়ের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। চালক-যাত্রী ও স্থানীয়রা বলছেন, গতির কারণে এবং নির্জন এলাকা হওয়ায় এখানে এখন ডাকাতির আশঙ্কা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের হানিফ পরিবহণের বাস চালক, সুপারভাইজার ও যাত্রীদের সাথে আলাপকালে এমন তথ্য মিলেছে। বাস চালক আরিফুল ইসলামের ভাষ্য, দুর্ঘটনাস্থল জাঙ্গালিয়া মাজারটেক একটি নির্জন পাহাড়ি এলাকা। এখানে আগে থেকেই ডাকাতির ভয় ছিল। এ কারণে চালকরা গতি বাড়িয়ে গাড়ি চালাত। এতে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছিল।
গত তিনদিনে তিনটি দুর্ঘটনায় ১৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ২৪ জন। সর্বশেষ ২ এপ্রিল বুধবার রিলাক্স পরিবহণের একটি বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা যাত্রীবাহী একটি মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নারী-শিশুসহ ১০ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর রাতেই সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) দুর্ঘটনা রোধে সেখানে র্যাম্বল স্পিড বা গতিরোধক বসায়।
বাসটির সুপারভাইজার প্রশান্ত স্বপন বলেন, এই গতিরোধকে দূর্ঘটনা কমবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ ডাকাতির হাত থেকে বাচতে হলে চালকদের সেখানে গাড়ির গতি কমানোর কোন সুযোগ নেই। বরং এই গতিরোধকে দূর্ঘটনা আরও বাড়তে পারে। দুর্ঘটনা রোধে নিরাপত্তা বাড়াতে এখানে পুলিশ চেকপোস্ট প্রয়োজন।
আবদুল লতিফ নামে ওই বাসের একজন যাত্রী বলেন, জাঙ্গালিয়া মাজারটেক এলাকায় বসানো গতিরোধকে আরো বেশী দুর্ঘটনা হবে বলে মনে হচ্ছে! সাথে চুরি-ডাকাতি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও দেখা রয়েছে। কারণ এলাকাটি জনশূন্য!
কায়ছার হামিদ তুষার নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, পুলিশ চেকপোস্ট ছাড়া শুধু গতিরোধক স্থাপনের ফলে ডাকাতির ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া অনেকে যাত্রী আশঙ্কা করছেন, নির্জন এই এলাকায় র্যাম্বল স্পিডের কারণে গাড়ির গতি কমাতে বাধ্য হলে, সেই সুযোগে দুষ্কৃতিকারীরা চলন্ত গাড়িতে ডাকাতির চেষ্টা করতে পারে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা এ প্রসঙ্গে বলেন, স্থানীয় বাসিন্দা, গাড়ি চালক, পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা একমত যে, এই এলাকার উঁচু-নিচু এবং অপ্রশস্ত বাঁকগুলো অত্যন্ত বিপদজনক। চালকদের বেপরোয়া গতি, লবণ বা কাদা মিশ্রিত পানিতে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে যাওয়া, সড়কের প্রকৌশলগত ত্রুটি এবং বিশেষ করে ছুটির সময় বহিরাগত চালকদের এই সড়কের সাথে অপরিচিতিই সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাগুলোর কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি জাঙ্গালিয়া মাজারটেক এলাকা চরম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত। এ স্থানে দুর্ঘটনা রোধের চেষ্টায় র্যাম্বল স্পিড বসানো হয়েছে। এই র্যাম্বল স্পিড স্থাপনের ফলে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রিত হবে এবং দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে।
লোহাগাড়ার ইউএনও মো. ইনামুল হাছান বলেন, চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লোহাগাড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরেই একটি দুর্ঘটনাপ্রবণ অঞ্চল। চুনতি অভয়ারণ্যের নিকটবর্তী এই অংশে প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে সড়কটি পাহাড়ি ঢালু এবং এতে বেশ কয়েকটি বিপদজনক বাঁক রয়েছে।
দুর্ঘটনা রোধে সড়ক ও জনপথ বিভাগের এই র্যাম্বল স্পিড স্থাপন নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও চালকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনা কমানোর এই চেষ্টাকে অনেকে স্বাগত জানালেও, নিরাপত্তা নিয়ে নতুন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে মহাসড়কের এই অংশটি অত্যন্ত নির্জন হওয়ায় ভিন্ন আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটিকে অবিলম্বে চার লেনে উন্নীত করতে হবে। আপাতত নতুন স্থাপিত র্যাম্বল স্পিডগুলো দুর্ঘটনা কমাতে কতটুকু সহায়ক হবে এবং তা নতুন কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করবে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়। প্রয়োজন হলে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হবে।
আরাকান সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. মুসা এবং লোহাগাড়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিন খানসহ অনেকেই দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক প্রশস্তকরণ (৪ বা ৬ লেন), বাঁক অপসারণ এবং ডিভাইডার নির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন।