
# ভোট ছাড়াই কমিটি
# সমিতির টাকায় মোটাতাজা বিএনপি নেতা
অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় তছনছ হওয়ার মুখে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মোটর মালিক সমিতি। দীর্ঘ ১৭ বছর একনায়কতন্ত্রের পর এখন আরেক স্বৈরতন্ত্র জন্ম দিয়েছে নতুন অনিয়ম, দুর্নীতি আর রাজনৈতিক আঁতাতের। সমিতির শীর্ষ দুই পদ— সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক— দখল হয়েছে আগের মতো কোনোরকম ভোট ছাড়াই।
সাধারণ সদস্যদের অভিযোগ, গত বছরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে একটি প্রভাবশালী চক্র এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেছে। ১৭ বছর ধরে সমিতি দখলে রাখা সৈয়দ হোসেন কোম্পানী রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও বিএনপি নেতার আশ্রয়ে থেকে বিনা ভোটে সভাপতি রয়ে গেছেন।
যাদের দিয়ে ২১ সদস্যের কার্যকরী পরিষদকে রাতারাতি ২৩ সদস্যে উন্নীত করা এবং টার্মিনাল ভরাটসহ নানা কাজে বিবিধ ব্যয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এতে মোটাতাজা হচ্ছে বিএনপির সেই প্রভাবশালী নেতা।
সদস্যরা জানান, চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মোটর মালিক সমিতির মোট সদস্য ২৫৭ জন। চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরে এই সমিতির প্রধান কার্যালয়। এর অধীনে চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটি রুটে পাহাড়িকা গাড়ি চলে ২৬টি, দ্রুতযান গাড়ি চলে ১৬টি। অন্যদিকে রাউজান থেকে মুরাদপুর রুটে দ্রুতযান গাড়ি চলে ৪২টি এবং তকির হাট থেকে মুরাদপুর রুটে ছয়টি গাড়ি চলে। এছাড়া ঢাকা থেকে রাঙামাটি রুটে চারটি রিল্যাক্স ও তিনটি এভারগ্রিন গাড়ি মিলিয়ে মোট সাতটি গাড়ি এবং রাঙামাটি থেকে বান্দরবান রুটে একটিমাত্র গাড়ি চলে।
অভিযোগ রয়েছে, বিবিধ ব্যয় দেখিয়ে সমিতির রাতারাতি ১৫ লাখ টাকা তুলে এক বিএনপি নেতার হাতে তুলে দেওয়া হয়। এছাড়া রাউজান বাস টার্মিনালের মাটি ভরাটের নামে ২৮ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়, অথচ বাস্তবে ৫-৬ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়নি।
সদস্যদের অভিযোগ, টাকা ছিটিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের ‘ম্যানেজ’ করে আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ হোসেন কোম্পানী ভোট ছাড়াই চট্টগ্রাম রাঙামাটি মোটর মালিক সমিতির সভাপতি পদে বহাল রয়ে যান। অন্যদিকে রাউজান পৌরসভা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী আনিসুর জামান সোহেলও ভোট ছাড়াই সাধারণ সম্পাদক বনে যান। রাউজান গহিরা ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আনিসুর জামান সোহেল বিএনপি নেতা গিয়াসউদ্দিন কাদেরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় যথাক্রমে ৯ ও ১২ নম্বর আসামি।
গত ২৪ মে অনুষ্ঠিত (২০২৫–২০২৮) মেয়াদের এই ত্রি–বার্ষিক নির্বাচনে ২১ সদস্যের পরিষদে ১৯টি পদে সরাসরি ভোট হয়। সমিতির শীর্ষ দুই পদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কোনো ভোট হয়নি। ক্ষমতার দাপটে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কাউকে মনোনয়ন সংগ্রহ করতে দেওয়া হয়নি, ফলে তারা বিনাভোটেই পদগুলো দখল করে নেন।
সর্বশেষ নির্বাচনে সরাসরি ভোটে নির্বাচিতরা হলেন— কার্যকরী সভাপতি পদে সাইফুল ইসলাম শাকিল, সিনিয়র সহসভাপতি পদে আবদুর রহমান, সহসভাপতি পদে দিদারুল আলম ও মনছুর রহমান চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক পদে শাহ আলম মাস্টার, সহ সম্পাদক পদে বিভাষ কান্তি সাহা ও ইমতিয়াজ উদ্দিন, অর্থ সম্পাদক পদে জামাল উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ইমরান হোসাইন হীরা, দপ্তর সম্পাদক পদে টিটু চৌধুরী, অডিট সম্পাদক পদে জাবের আহম্মদ, প্রচার সম্পাদক পদে সাইফুল্লাহ আহম্মদ নির্বাচিত হন। এছাড়া কার্যকরী সদস্য নির্বাচিত হন গিয়াস উদ্দীন, হারুন উর রশিদ, জাহেদুল আলম চৌধুরী, জানে আলম, আব্দুল মালেক, দিদারুল আলম ও জসীম উদ্দীন।
সমিতির বিভিন্ন স্তরের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির পদ স্থগিত নেতা গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী ভোটের আগে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা লোকজনকে নির্দেশ দেন, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে ভোট হবে না। কারণ দুজনেই তার লোক। এ কারণে এই দুই পদে কাউকে ফরম দেওয়া হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে সমিতির এক সদস্য অভিযোগ করেন, ‘সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ বিনা ভোটে না হলে সমিতির প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোরশেদুল আলম কাদরী মাত্র এক সপ্তাহ আগে নির্বাচন স্থগিত করার হুমকি দেন। ওপরের নির্দেশের কথা বলে ওই দুই পদে তিনি কাউকে ফরমও দেননি। পরে বাধ্য হয়ে সদস্যরা বাকি পদগুলোর ভোটে সম্মতি দেন।’
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কাউকে মনোনয়ন ফরম দিতে দেওয়া হয়নি— এমন অভিযোগের বিষয়ে সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক কাজী আনিসুর জামান সোহেল বলেন, ‘এগুলো সত্য নয়। প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলে তো আমরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবোই।’
তহবিল লোপাটের অভিযোগ
সদস্যরা জানান, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরীর ছত্রচ্ছায়ায় সমিতির একটানা সভাপতির পদে থাকা সৈয়দ হোসেন কোম্পানী এককভাবে সমিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। নামমাত্র কমিটি থাকলেও অন্তত ১৭ বছর ধরে সৈয়দ কোম্পানীর একক ইচ্ছাতেই পুরো সমিতি চলতো।
এ সময় সমিতিতে চলমান ‘একনায়কতন্ত্রের’ বিরুদ্ধে সাধারণ সদস্যরা একজোট হয়ে মামলা করলে আদালত সমিতির অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেন। সাধারণ সদস্যদের মধ্য থেকে অভিযোগ উঠেছে, এই নিষেধাজ্ঞা জারির পরপরই সৈয়দ কোম্পানী সমিতির তহবিল থেকে ‘বিবিধ ব্যয়’ দেখিয়ে ১৫ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকা তুলে রাউজানের এক প্রভাবশালী বিএনপি নেতার হাতে তুলে দিয়ে তাকে ‘হাত করে’ নেন।
সমিতির গত জানুয়ারির আয়-ব্যয় হিসাব বিবরণীতেও ‘বিবিধ ব্যয়’ বাবদ ১৫ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, ‘মামলা খরচ’, ‘বিশেষ খরচ’, ‘দান-অনুদান-চাঁদা’র নামে আরও প্রায় ১৩ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়। সাধারণ সদস্যদের অনেকে বলেছেন, এই টাকা মূলত তাদের হয়রানি করার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সৈয়দ কোম্পানী বিএনপি নেতা গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে ভিড়ে যান। রাউজান সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ–সভাপতি সৈয়দ কোম্পানী এভাবেই রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই বিএনপির ছায়াতলে আশ্রয় নেন।
এলাকায় এমনও গুঞ্জন আছে, সৈয়দ কোম্পানি রাউজানে তার ইটভাটার ব্যবসা চালু করার স্বার্থে গিয়াস কাদের দুবাই থেকে দেশে ফেরার পর তার ঢাকার ফ্ল্যাটে ৩২ লাখ টাকার ফার্নিচার কিনে দিয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সোহেলের সঙ্গে সৈয়দ কোম্পানীর সম্পর্ক ছিল খুব খারাপ। বছরখানেক আগে গিয়াস কাদেরের মধ্যস্থতায় সমঝোতা হয় তাদের মধ্যে।
সৈয়দ হোসেন কোম্পানীর সঙ্গে সখ্যতার বিষয়ে তার একসময়কার ‘ঘোর বিরোধী’ বিএনপি নেতা কাজী আনিসুর জামান সোহেল বলেন, ‘ব্যবসার কারণে তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিলেন। এখনও ওইভাবেই আরেকটা পক্ষের সঙ্গে আছেন।’
২১ সদস্যের কমিটি হঠাৎ ২৩!
সদস্যদের অভিযোগ, নির্বাচনের পরপরই কমিটিতে ‘নিজেদের লোক’ ঢোকানোর জন্য সহ–সভাপতি ও কার্যকরী সদস্য পদে আরও দুটি পদ রাতারাতি তৈরি করা হয়। এই দুই পদে বসানো হয় নির্বাচনে বিপুল ভোটে পরাজিত সালাউদ্দীন ও ইখতিয়ার উদ্দীনকে। সালাউদ্দীন সহ–সম্পাদক পদে এবং ইখতিয়ার উদ্দীন দপ্তর সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটে হেরে যান।
সদস্যদের ভাষ্য, ২১ সদস্যের কমিটিকে ২৩ সদস্যবিশিষ্ট করার এই পুরো প্রক্রিয়াটি বিএনপি নেতা আনিসুর জামান সোহেলের একক ইচ্ছায় করা হয়েছে। ভোট ছাড়াই পরাজিতদের এভাবে পদে বসানো ‘নজিরবিহীন’ এবং মূলত ‘অফিস দখলের’ জন্যই রাঙামাটির সালাউদ্দীন ও রাউজানের ইখতিয়ারকে বসানো হয়েছে।
জানা গেছে, নতুন করে কার্যকরী সদস্য পদ পাওয়া ইখতিয়ার উদ্দীন রাউজান সদর ইউনিয়ন ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং সাবেক এমপি ফজলে করিমের বিশেষ বিবেচনায় ‘সিলেক্টেড’ ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সদস্যরা আরও অভিযোগ করেন, ইখতিয়ারের ভাগ্নে রেহান রাউজানের শীর্ষ সন্ত্রাসী, যার বিরুদ্ধে অন্তত ১৭টি মামলা রয়েছে এবং তিনি সাম্প্রতিক যুবদল নেতা আলম হত্যা মামলারও ৪ নম্বর আসামি।
সমিতির জ্যেষ্ঠ সদস্য এমদাদুল হক বলেন, ‘সমিতিকে একটি রেজিস্ট্রেশনের অধীনে যাওয়া উচিত। তা না হলে সমিতিতে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতি হতেই থাকবে।’ তিনি বলেন, বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত প্রতিনিধি আসা দরকার। তাছাড়া পরাজিত প্রার্থী কিভাবে কমিটিতে ঢুকতে পারে?’
নির্বাচনে পরাজিত দুজন প্রার্থী কিভাবে কমিটিতে ঢোকানো হল— এমন প্রশ্নে আনিসুর জামান সোহেল বলেন, ‘বিভিন্ন তদবিরে তাদের কো-অপ্ট করা হয়েছে। যেমন সালাউদ্দিনের জন্য রাঙামাটি জেলা বিএনপি নেতারা তদবির করেছেন। ইখতিয়ারও কমিটিতে থাকার জন্য আমাদের কাছে নানাভাবে তদবির করেছেন।’
নতুন নেতৃত্বের স্বেচ্ছাচারিতা
অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সমিতির বিভিন্ন প্রকল্প ও তহবিল পরিচালনা নিয়েও। এর মধ্যে রাউজান বাস টার্মিনালের মাটি ভরাটের নামে ২৮ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়, অথচ বাস্তবে ৫-৬ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়নি বলে বেশিরভাগ সদস্যেরই বিশ্বাস। এমনকি আওয়ামী লীগ আমলে টার্মিনালের নামে যে স্থানে মাটি ভরাট করা হয়, সেটাও সেটাও মালিক সমিতির জায়গা নয়। জোর করে দখল করা হয়েছিল। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এখন জায়গাটির মূল মালিকরা দখল বুঝে নিচ্ছেন। এতে মাটি ভরাটের ৫-৬ লাখ টাকাও পানিতে গেছে।
সাধারণ সম্পাদক কাজী আনিসুর জামান সোহেলের বিরুদ্ধে সমিতির সদস্যদের অভিযোগের অন্ত নেই। সদস্যরা অভিযোগ করেন, তিনি ঠিকাদারি ব্যবসা করেন এবং তার ঠিকাদারি ব্যবসার যাবতীয় কাজ চলে চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরে সমিতির প্রধান কার্যালয় থেকে। অথচ তিনি প্রতিদিন অফিসে যাতায়াতের নামে ভাতা ও বিভিন্ন সভার নামেও ভাতা নিচ্ছেন।
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ১৭ বছর পর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, রাউজান থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টাফ যাতায়াতের জন্য রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সপ্তাহে পাঁচদিন সমিতির অন্তর্ভুক্ত পাহাড়িকার ১০০টি গাড়ি পালাক্রমে চলবে। সদস্যরা অভিযোগ করেন, এই সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে সেখানে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আনিসুর জামান সোহেলের গাড়িটিই এককভাবে গত চার মাস ধরে চলে আসছে। সাধারণ সম্পাদক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ওই রুটে শুধুমাত্র তার গাড়িই চলবে।
সদস্যরা অভিযোগ করেন, ক্ষমতার দাপটে সমিতির শেয়ারধারী ১১৪ জন মালিকের তিনটি এভারগ্রিন ট্রান্সপোর্টের গাড়ি ঢাকায় ‘অফ’ রেখে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক তার ব্যক্তিমালিকানায় কেনা গাড়ি গত ২৭ অক্টোবর থেকে ঢাকা থেকে রাঙামাটি রুটে এবং গত ২৮ অক্টোবর থেকে রাঙামাটি থেকে ঢাকা রুটে চালিয়ে যাচ্ছেন। সদস্যরা বলছেন, অথচ তার গাড়ি সেখানে চলার কোনো সুযোগই নেই। জানা গেছে, সাধারণ সদস্যদের চাপের মুখে গত সোমবার থেকে সোহেলের গাড়িটি কক্সবাজার-রাজশাহী লাইনে দেওয়া হয়।
এর মধ্যেই গত অক্টোবরের মাঝামাঝিতে অভিযোগ ওঠে, সমিতির মালিক সদস্য ও বর্তমান দপ্তর সম্পাদক টিটু চৌধুরীর কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে তার একটি গাড়ি (নম্বর ঢামেব ১৪-১৮৬১) পাহাড়িকা সার্ভিসে সংযোজন করার চেষ্টা চলছে। বর্তমান কমিটির এক নেতা এমন কাজকে সম্পূর্ণ অবৈধ ও ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, সৈয়দ কোম্পানী ও আনিসুর জামান সোহেল ছাড়াও এতে ইন্ধন দিচ্ছেন সহ–সভাপতি মনসুর রহমান, অর্থ সম্পাদক জামাল উদ্দীন ও শ্রমিক লীগ নেতা খোরশেদুল আলম।
আনিসুর জামান সোহেল এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে পাহাড়িকা রোটেশনে মোট গাড়ি ১০০টি। অবৈধভাবে টিটু চৌধুরীর গাড়ি যদি সেখানে ঢোকানো হয়, তাহলে গাড়ি হবে ১০১টি। এতে রোটেশনে আরও একদিন বেড়ে যাবে, যা সমিতির নির্ধারিত পাহাড়িকা গাড়ি ও সাধারণ মালিকদের জন্য ‘অশনিসংকেত’। এসব ঘটনায় অন্য বাসমালিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বাসমালিক বলেন, ‘আমরা তো চেয়েছিলাম মালিকের স্বার্থরক্ষা ও যাত্রীদের সেবার মান বাড়াতে। কিন্তু চেয়ারের কাড়াকাড়িতে তার কিছুই হচ্ছে না। আমরা মালিকবান্ধব সমিতি চেয়েছিলাম। গত ১৭ বছরে ৩৬ লাখ টাকার ঘাপলা আছে। কোনো হিসাব ছাড়াই খরচ করা হয়েছে। এগুলোর সুরাহা হয়নি। এখন আরও ঘাপলা তৈরি হচ্ছে।’
সমিতির প্রবীণ সদস্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবু তাহের বলেন, ‘আগে আওয়ামী লীগ আমলে কর্তৃত্ব সমিতির সবকিছু চলতো সাবেক এমপি ফজলে করিমের কথায়। বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন ছিল তার ভোটব্যাংক। উনার অনুগত লোকদের সমিতির নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দখলে রাখতো। ভোট ছাড়া কমিটি গঠন করে দেওয়া হতো এমপির ইচ্ছায়। বর্তমানে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ইচ্ছায় সবকিছু হচ্ছে।’
তিনি বলেন, যে সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারির কোনো বৈধতা নেই, ভোট ছাড়া চেয়ারে বসেছেন, সেই সমিতির কাছে কিছু আশা করে লাভ নেই। আমরা সাধারণ সদস্যরা সমিতির টাকা তছরূপ ও আত্মসাতের তদন্ত ও প্রতিকার চাই।









































