রবিবার- ২০ এপ্রিল, ২০২৫

চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের বাজারে অবরোধের তেজ

আলু প্রতিকেজি ৮০ টাকা, পেঁয়াজ ১১০, রসুন ১৮০, আদা ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে চট্টগ্রামের সবকটি বাজারে। একইভাবে অন্য ভোগ্যপণ্যের দামও বেশ চড়া। যা কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন বিভিন্ন পেশাজীবি শ্রেণির সাধারণ ভোক্তারা।

ভোক্তাদের অভিমত, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা টানা তিনদিনের অবরোধের তেজে আগুন লেগেছে বাজারের ভোগ্যপণ্যে। এই অবরোধের কারণে এক তৃতীয়াংশ বেশি দাম বেড়েছে সবরকম নিত্যপণ্যের। যা কিনতে পকেট পুড়ছে ক্রেতা সাধারণের।

একই কথা ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীদেরও। অবরোধে গাড়িভাড়া বেশি খরচের কারণে সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তবে সবজির বাজার কমতির দিকে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

শুক্রবার (৩ নভেম্বর) দুপুর থেকে নগরীর কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। নগরীর বহদ্দারহাটে কয়েকজন ক্রেতা জানান, বাজারে প্রতিকেজি বরবটি এখন ১০০ টাকা, শিম ১৪০ টাকা, পটল ৮০, মুলা ৮০, মিষ্টি কুমড়া ৫০, ফুলকপি ১০০, ঢেঁড়শ ১০০ ও তিত করলা ৯০, লতি ৬০, চিচিঙ্গা ৬০, ঝিঙ্গা ৯০, টমেটো ১২০, আলু ৮০, পেঁয়াজ ১১০, রসুন ১৮০, আদা ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও এ মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকায়। এছাড়া আরেক জাতের ব্রয়লার মুুরগি বিক্রয় হচ্ছে ৩০০ টাকা দরে। লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩২০ ও সোনালী মুরগি ৩৪০ টাকায়। গরু ও মহিষের মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯০০-৯৫০ টাকায়। অথচ অবরোধের আগে এসব পণ্যের মূল্য অন্তত ৩০ ভাগ কম ছিল।

নগরীর কর্ণফুলী মার্কেটে মাছের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিকেজি নদীর শোল মাছ ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা, বোয়াল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, কৈ মাছ ১ হাজার টাকা, শিং ১ হাজার ২০০ টাকা ও পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়।

এছাড়া প্রতি কেজি রুই ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা, কাতলা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের শিং ৪৫০ টাকা, মাগুর ৫০০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, টেংরা ৬০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকা ও তেলাপিয়া ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ১ কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সরোয়ার আলম নামে এক ক্রেতা বলেন, সপ্তাহে একদিন ভালো-মন্দ বাজার করি। জানি তারা দাম একটু বেশি রাখছে মাছের। কি করবো, খেতে তো হবে। দেশটাকে যে যার ইচ্ছেমতো চালাচ্ছে। কোনো মনিটরিং নেই। কিছু অভিযান হয়, তবে সেটা লোক দেখানো। এখন সব কিছুর দাম বাড়তি। কোনটা রেখে কোনটা কিনবো সেটা নিয়ে মাঝেমধ্যে চিন্তায় পড়ে যাই।

কর্ণফুলী মার্কেটে মাছ বিক্রেতা নাসির উদ্দিন বলেন, সামুদ্রিক মাছের দাম একটু বাড়তি। আরও কিছু মাছ ১০ থেকে ২০ টাকা দামে বেশি বিক্রি হচ্ছে। আমাদেরও তো পরিবার আছে। খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে হয়। সবকিছুর দাম এখন বাড়তি। আমাদেরও চাল, ডাল, তেল ও বিভিন্ন কিছু কিনতে হয়। না পোষালে কম দামে কিভাবে বিক্রি করি। তাছাড়া গত তিনদিন ধরে অবরোধ চলছে। এতে পর্যাপ্ত মাছ আসতে পারছে না। তাই দাম কিছুটা বেড়েছে।

কর্ণফুলী কাঁচাবাজারে সবজির দাম নিয়ে আব্দুল হান্নান নামে এক ক্রেতা বলেন, অবরোধ শুরুর পর থেকে আলু প্রতিকেজি বিক্রয় হচ্ছে ৮০ টাকায়। এর আগে ছিল ৫০ টাকা কেজি। পেঁয়াজেরও একই অবস্থা। বাজারের চেয়ে ভ্যানে দাম আরও বেশি রাখে। তাই ১৫ মিনিট হেঁটে এখানে এসে বাজার করি। কিন্তু এখানেও তারা দাম ছাড়ে না।

মুরগি বিক্রেতা জাফর আলম বলেন, মুরগির খাবারের দাম বেশি। তাছাড়া বাচ্চা সরবরাহ নেই। তাই মুরগির দাম বেড়েছে। আর বাংলাদেশে যেটার দাম বাড়ে সেটা যে কমবে তার আশা করা যায় না। আগামী এক মাসেও মুরগির দাম কমার সম্ভাবনা আমি দেখছি না।

রেয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি রশিদ আহম্মদ বলেন, অবরোধে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সবজি সরবরাহ মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল। তবে গাড়ি ভাড়া আমাদের বেশি গুণতে হয়েছে। মুন্সিগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামের রেগুলার ভাড়া যেখানে ১২ হাজার টাকা সেখানে আমাদের ২০ হাজার টাকা গুণতে হয়েছে। এজন্য সবজির দাম একটু বেড়েছে।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস মিয়া বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় এখন পেঁয়াজ-রসুন-আদার আমদানি কম। যা আমদানি করা হচ্ছে তাও মূল্য বৃদ্ধি ও পঁেচ যাওয়ার কারণে পেঁয়াজ-রসুন-আদার দাম বেড়েছে। বিশেষ করে ভারতে বাজার থেকে আমদানি মূল্য কমলে নিত্য প্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম কমবে।

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page