রবিবার- ২০ এপ্রিল, ২০২৫

আমদানি কমায় কর্মহীন সহস্রাধিক লাইটার জাহাজ

ঋণ খেলাপি হচ্ছে মালিকরা

ডলার সংকটের কারণে আমদানি কমে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম ব্ন্দরের বহি:নোঙরে পণ্য খালাসে নিয়োজিত হাজারো লাইটারেজ জাহাজ। এতে ভয়াবহ অর্থ সংকটে পড়েছে লাইটার জাহাজের মালিকরা। যারা শত কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ছে।

বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে এ তথ্য জানিয়েছেন লাইটারেজ জাহাজ মালিকদের নেতা শেখ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো নয়। বন্দরে আমদানি কমে নেমেছে অর্ধেকে। ফলে পণ্য খালাসে নিয়োজিত লাইটার জাহাজ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ জাহাজ কর্ণফুলী নদী ও সাগরে অলস ভাসছে।

ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ডলার সংকটের কারণে বৈশ্বিক পরিস্থিতি এই সেক্টরটিকে একেবারে খাদের কিনারে এনে দাঁড় করিয়েছে বলে জানান শেখ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।

লাইটার জাহাজের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) একজন কর্মকর্তা বলেন, পরিস্থিতি আসলেই খারাপ। এই সেক্টর চরম দুঃসময় পার করছে। অলস জাহাজের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। জাহাজ মালিকেরা নাবিকদের বেতনভাতা যোগাতে হিমশিম খাচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ডলার সংকট যে পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে তাতে সহসা আমদানি বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আমদানি না বাড়লে লাইটারেজ জাহাজ ভাড়া পাবে না।  ভাড়া না পাওয়ায় জাহাজ মালিকেরা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না। এতে খেলাপি ঋণের পরিমান বাড়ছে। সংকট ক্রমান্বয়ে প্রকট হয়ে উঠলে জাহাজ কেটে স্ক্র্যাপ করে ফেলার ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। এ অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ এই খাতটি চরম অস্তিত্ব সংকটের মুখে দাড়িয়ে আছে।

 সূত্র মতে, দেশের আমদানি বাণিজ্যের ৯০ শতাংশই হ্যান্ডলিং করা হয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। এই ৯০ শতাংশ পণ্যের ৫২ শতাংশ হ্যান্ডলিং হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। বাকি ৪৮ শতাংশ হ্যান্ডলিং হয় বহির্নোঙরে। বন্দরের প্রায় সমান পণ্য বহির্নোঙরে খালাস হয়ে লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ নৌ রুটে হ্যান্ডলিং করা হয়। আর এই পণ্যের পুরোটাই হ্যান্ডলিং হয় লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে।

সূত্র জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গম, ভুট্টা, ডাল, চিনি, লবণসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, সার, সিমেন্ট ক্লিংকার, কয়লা, স্টোনসহ রকমারি পণ্য নিয়ে আসা বড় বড় মাদার ভ্যাসেলগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে না। এসব জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করে। বহির্নোঙরে অবস্থানকারী মাদারভ্যাসেল থেকে লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে পণ্য খালাস করে কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন ঘাটসহ দেশের নানা অঞ্চলে সরবরাহ দেয়া হয়। বিভিন্ন সময় চট্টগ্রাম বন্দরে বার্থিং নেয়া জাহাজের ওভার সাইড থেকেও লাইটারেজ জাহাজে পণ্য খালাস করে দেশের নানা অঞ্চলে সরবরাহ দেয়া হয়।

আর এই পণ্য খালাসকে ঘিরে চট্টগ্রাম বন্দরে গড়ে উঠে লাইটার জাহাজের বড় খাত। প্রায় দুই হাজার লাইটার জাহাজ এই খাতে নিয়োজিত। আর কোটি কোটি টাকা দাম এক একটি লাইটার জাহাজের। এসব জাহাজের অধিকাংশই ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে। এসব জাহাজ দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ রুটে পণ্য পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর এসব লাইটারেজ জাহাজের অধিকাংশই ভাড়ার অভাবে সাগরে বা কর্ণফুলী নদিতে অলস সময় পার করছে।

সূত্র আরো জানায়, প্রতিদিন ভাড়ার জন্য গড়ে ৫০০’টির মতো লাইটারেজ জাহাজ চট্টগ্রামে অবস্থান করলেও ২০-২২টির বেশি ভাড়া পায় না। বাকি জাহাজগুলো অলসভাবে নদী এবং সাগরে ভাসছে।প্রতিমাসে এক ট্রিপ ভাড়া পাচ্ছে না এমন জাহাজের সংখ্যাও অনেক। ফলে চরম অর্থ সংকটে পড়েছে জাহাজের মালিকরা।

এরপরও বসিয়ে বসিয়ে নাবিকদের বেতন ভাতা যোগানোর পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের সুদ যোগাতে গিয়ে নাজুক অবস্থায় পড়েন বহু জাহাজ মালিক। ফলে কয়েক হাজার কোটি টাকার এই সেক্টরে ইতোমধ্যে বিপুল অর্থ খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে। বিদ্যমান সংকট লাগাতার হলে এই সেক্টর অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলেও আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page