বাবার বাড়ি পটিয়া। মসজিদের চাকুরির সুবাদে সন্তানহীন এক নারীর কাছে পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাই হিসেবে আবদার করে কিছু জায়গার। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মৃত্যু অবদি নিঃসন্তান নারীকে দেখভাল করার। ফলে ওই নারী ৪.৬৭ শতক বসত ভিটার জায়গা দান করেন। কিন্তু নিঃসন্তান বৃদ্ধা নারীকে বোকা বানিয়ে প্রতারণা করে লিখে নেন আট শতক বসত ভিটা।
প্রতারণার শুরু এখানেই। যার সাথে ডিজিটাল প্রতারণা যোগ করে প্রতারক বাবার যোগ্য সন্তান ভুঁইফোড় হলুদ সাংবাদিক আব্বাস হোসাইন ওরফে আব্বাস উদ্দিন আফতাব। একনিষ্ট অনুসারী হিসেবে ব্যবহার করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ক্ষমতাও।
আশ্রয়দাতা সেই নারীর বোকামীর শাস্তি এখন ভোগ করছে ভাইয়ের পুরো পরিবার। যাদের জিম্মি করে একের পর এক তিনটি মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে বছরের পর বছর দখলীকৃত জমির উপর গড়ে তুলেছে পাকা বাড়ি। তখন হাছান মাহমুদের নির্দেশে থানার বড় দারোগারাও এই ভুঁইফোড় হলুদ সাংবাদিকের পক্ষে লাঠি ও কলম চালিয়েছিল।
এমন ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সৈয়দবাড়ি পৌর এলাকার পশ্চিম সৈয়দবাড়ি এলাকায়। জবরদখলকারী সেই হলুদ সাংবাদিক আব্বাস হোসাইন এই সময়ে দৈনিক প্রথম আলো ও দৈনিক বীর চট্টগ্রাম মঞ্চের রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি ছিল। তার সাথে সহযোগী হিসেবে ছিল ফ্যাসিস্ট হাছান মাহমুদের লালিত আরও ১০-১২ জন দালাল সাংবাদিক।
যারা রাঙ্গুনিয়া প্রেসক্লাবের নামে শক্ত সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। আব্বাস হোসাইনসহ এদের অধিকাংশরই পড়ালেখার দৌড় কোনোমতে মাধ্যমিক পর্যন্ত। আর এলাকার সেই অসহায় নারীর ভাইয়ের ভুক্তভোগী সন্তানরা হলেন প্রবাসী নাজিম উদ্দিন ও সিএনজি অটোরিকশা চালক রহিম উদ্দিন।
তারা জানান, আব্বাস হোসাইনের বাবা মৌলভি ছাবের আহমেদের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন রোহিঙ্গা বংশোদ্ভুত। যার মধ্যে মৌলভি ছাবের আহমদের দাদা কক্সবাজার হয়ে পটিয়ার পাহাড়ি এলাকায় বসতি গড়ে তুলেন। সেখান থেকে মৌলভি ছাবের আহমদ ৮০ দশকের আগে পশ্চিম সৈয়দবাড়ি জামে মসজিদে মোয়াজ্জিনের চাকরি নেন। সেখান থেকে পরে ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান।
একপর্যায়ে দাদার সন্তানহীন বোনের কাছে পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাই হিসেবে আবদার করে কিছু জায়গার। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মৃত্যু অবদি নিঃসন্তান দাদিকে দেখভাল করার। ফলে দাদি ৪.৬৭ শতক বসত ভিটার জায়গা দান করেন। কিন্তু মৌলভি ছাবের আহমদ ও তার সন্তানেরা নিঃসন্তান দাদীকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে দান হিসেবে ৪.৬৭ শতক ভিটার স্থলে হাতিয়ে নিয়েছেন আট শতক বসত ভিটা। আর মৃত্যুকালে তার সাথে করেছেন প্রতারণা।
যার জন্য এওয়াজ নামীয় ভাগ বাটোয়ারা করার মাধ্যমে নিস্পত্তির আবেদন করা হয় আদালতে। অথচ তারা আমাদের জায়গার উপর দিয়ে চলাচল করে আবার প্রচার করে আমরা নাকি চলাচলের পথ বন্ধ করেছি। মূলতঃ এ মামলায় হল কালশত্রু।
প্রথম আলোর নাম ভাঙিয়ে হাছান মাহমুদের ক্ষমতায় প্রভাব বিস্তার করে পরপর তিনটি হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে নিজেদের উচ্ছেদ ঠেকাতে আমাদেরকে ২০২২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আদালতের দ্ধারে দ্ধারে ঘুরতে হচ্ছে। আমাদের সত্তরোর্ধ বাবাকেসহ অসুস্থ শরীর নিয়ে মামলায় হাজিরা দিতে হয়েছে।
তারা আরও জানান, মৌলভি বাবার প্রতারণাকে পাকাপোক্ত করতে আমাদের জমিদখল করে। দখলী জমি ফেরত পেতে যখন আমরা আদালতের দারস্থ হলাম তাতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের উপর হামলা আর মামলার পর মামলা দেয়। এতে আমাদের এক ভাইকে জেল খাটতে হয়। এ সময় রাঙ্গুনিয়া থানার পুলিশকে সে যা করতে বলেছে, তাই করেছে। আর কথায় কথায় হুমকিসহ নানা নির্যাতন করেছে।
তার প্রতারক বাবা মৌলভি ছাবের আহমদের পথ ধরে কয়েকধাপ এগিয়ে আব্বাস হোসাইন মামলার ভয়, হুমকি, জেলে পাঠানো, চিহ্নিত অপরাধী বানিয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে। চলাচলের পথ বন্ধ করেছে বলে জনগণের সস্তা সহানুভূতি কাজে লাগিয়ে ষোলকলা পূরণ করেছে ভুৃঁইফোড় হলুদ সাংবাদিক আব্বাস হোসাইন ওরফে আব্বাস হোসাইন আফতাব।
এ নিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিস্টের দোসর কিছু ভুঁইফোড় সাংবাদিকদের দিয়ে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি ও হুমকি দিয়েছি বলে পত্রিকায় মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে সামাজিকভাবে হেয় করা হয়। পতিত আওয়ামী লীগের পতনের পর হাছান মাহমুদের পলায়নে হুশ ফিরে তার। নতুন বাংলাদেশে ষড়যন্ত্রের দিন শেষ বুঝতে পেরে একদিকে হুমকি আবার অন্যদিকে আপোষের প্রস্তাব দিতে থাকে বারবার।
এ বিষয়ে সৈয়দবাড়ি এলাকার সামাজিক গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে পঞ্চায়েতে সমঝোতার প্রস্তাব দেয়। সেখানে পঞ্চায়েতের সামনে নিজের দোষ স্বীকার করে আত্নসমর্পণ করে আব্বাস হোসাইন। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও মানবিক দিক বিবেচনা করে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে উভয়পক্ষ একটি সমঝোতা চুক্তিতে ঐক্যমত হই।
এতে সিদ্ধান্ত হয় যে, আমাদের বিরুদ্ধে সকল হয়রানীমূলক মিথ্যা ফৌজদারী মামলা আপোষের মাধ্যমে বাদীগণ প্রত্যাহার করে নিবে। এবং জায়গা সংক্রান্ত অংশনামার ভাগ বাটোয়ারা মামলা আদালতের মাধ্যমে নিস্পত্তি হবে বলে নিশ্চিত করেন।
স্থানীয়রা জানান, জমি জবর দখল নিয়ে প্রতারণা ও মিথ্যা মামলা দিয়ে শুধু আশ্রয়দাতাকে নিংস্ব করেনি ভুঁইফোড় হলুদ সাংবাদিক আব্বাস হোসাইন। জনগণের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত সাবমার্সিবল গভীর নলকুপও বসিয়েছেন জবরদখল করা ওই বসতভিটায়। যা সম্পুর্ণ ব্যক্তিগতভাবে পাকাবাড়ির ছাদে পানির ট্যাঙ্ক বসিয়ে স্থায়ী ঘেরা-বেড়া দিয়ে রেখেছেন। অথচ এই সাবমার্সিবল নলকুপ হতদরিদ্রদের জন্য বিতরণ করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবর দখলকারী আব্বাস হোসাইনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। ফলে নিউজ সংক্রান্ত কোন মতামত নেওয়া সম্ভব হয়নি।
You cannot copy content of this page