
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালসহ (এনসিটি) বিভিন্ন স্থাপনা বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়ার প্রতিবাদে বন্দর এলাকায় অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বন্দর রক্ষা পরিষদ ও শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) নামে দুটি সংগঠন।
চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষা পরিষদ সোমবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বন্দরের আশপাশে তিনটি ¯পটে এ কর্মসূচি পালন করবে বলে জানিয়েছে। আর বন্দর শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) ২৬ নভেম্বর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বন্দরের সকল প্রবেশমুখে অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে।
রবিবার (২৩ নভেম্বর) এ তথ্য জানান গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য হাসান মারুফ রুমী। অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে হাসান মারুফ রুমী বলেন, আমরা সিরিজ কর্মসূচি দেব না। তবে আগামী ২৪ নভেম্বর সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বড়পোল, আগ্রাবাদ, সিম্যান্স হোস্টেল এলাকায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করব আমরা। শান্তিপূর্ণ অবস্থান ধর্মঘট করবো। কেউ উসকানিমূলক কিছু করলে পরিণতি ভালো হবে না। আমরা নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিচ্ছি।
বন্দর নিয়ে পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকার বাস্তবায়ন করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বিচারের রায়ের দিন বন্দরের দুটি স্থাপনা ইজারার চুক্তি দূরভিসন্ধিমূলক। এটা কাবিননামা নয় যে, গোপনে করবেন। দেশের স¤পদ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তা জানার অধিকার বাংলাদেশের মানুষের আছে। জুলাই সনদেও এটা উল্লেখ আছে।
সরকার যখন বলে বন্দরে দুর্নীতি হয়, তখন তাদের কাজ তদন্ত কমিটি করা। তিনটি কাজ সরকারের, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন। চট্টগ্রাম বন্দর অর্থনীতির লাইফলাইন। আগে তদন্ত করেন বন্দরের কোথায় কোথায় দুর্নীতি আছে। তার পর সংস্কার করেন কীভাবে দুর্নীতিমুক্ত বন্দর পরিচালনা করতে হয়। বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে সিসিটি, এনসিটি দেওয়ার পরিষ্কার বিরোধিতা করতে চাই আমরা। লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনালে সম্ভাব্য বিনিয়োগের ৫৪০০ কোটির মধ্যে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ইক্যুইপমেন্ট লাগবে। এ টাকা দেশে ঢুকবে না।
এদিকে একই দাবিতে ২৬ নভেম্বর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের সকল প্রবেশমুখ অবরোধের ঘোষণা দেয় শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)।
শনিবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে স্কপের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ স¤পাদক কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার।
তিনি বলেন, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), লালদিয়ার চর ও পানগাঁও টার্মিনাল বিদেশিদের কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্কপসহ বিভিন্ন সংগঠন ইতিমধ্যে আন্দোলন করছে। নিউমুরিং টার্মিনাল নিয়ে মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও আদালতের নির্দেশনা মানা হচ্ছে না।
আমরা খবর পাচ্ছি, কেউ কেউ গোপনে মিটিং করছেন। আমাদের ¯পষ্ট দাবি, বন্দরের কোনো টার্মিনাল বিদেশিদের কাছে ইজারা দেওয়া যাবে না। লালদিয়ার চর ও পানগাঁও টার্মিনাল নিয়ে যে চুক্তি হয়েছে তা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
অবরোধ কর্মসূচি স¤পর্কে কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার বলেন, বুধবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত আগ্রাবাদ, বড়পোল ও মাইলের মাথা এলাকায় বন্দরমুখী সড়ক অবরোধ করা হবে। পাশাপাশি বিভাগীয় সব জেলায় বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। আমরা বাধ্য করব বন্দর বিদেশিদের না দিতে।
বিভাগীয় শ্রমিক দলের সদস্য মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, কিছু মানুষের স্বার্থসিদ্ধির জন্য বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বিদেশিদের দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দিয়েছে। আমাদের তৈরি করা স¤পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে পারি না। এখন যে প্রোফিট হচ্ছে তা বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া। যখন বিদেশ থেকে কনটেইনার আসে তখন শিপিং এজেন্ট আইজিএম সাপোর্ট করে। শিপিং এজেন্ট কর্মচারী ভুল করলে সংশোধনের পন্থা রাখেনি কাস্টমস ও এনবিআর। ম্যানুয়ালি সংশোধন করতে ১৫-১৬ দিন সময় লাগে। তার বিরুদ্ধে কথা নেই। যার দোষ তাকে বলুন।
সাংবাদকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের কোনো কর্মচারী দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নয়, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি। আমি অনুরোধ করব, আমরা দোষ করলে আমাদের বিরুদ্ধে লিখেন। কিন্তু এনসিটি-সিসিটি বিদেশিদের হাতে না দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করুন।
সম্মেলনের প্রধান অতিথি শ্রম সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, শ্রমিকেরা ন্যায্য অধিকারের দাবিতে আন্দোলন করছেন, কিন্তু তাঁদের দাবি মানা হচ্ছে না। বন্দর বিদেশিদের দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে করতে হবে।
সম্মেলনে স্কপের পক্ষ থেকে ৯ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে শ্রমিকদের সংগঠন ও ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমে স্বাধীনতা, অভিন্ন শ্রম আইন প্রণয়ন, অযৌক্তিক ছাঁটাই ও হয়রানি বন্ধ, ন্যুনতম মজুরি ৩০ হাজার টাকা নির্ধারণ, মহার্ঘ ভাতা চালু, বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প পুনরায় চালু, আউটসোর্সিং বন্ধসহ রেশন, আবাসন, পেনশন, হাসপাতাল, নারীদের ডরমিটরি ও বেকার ভাতা নিশ্চিত করা।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ তপন দত্ত, আবদুল কাদের হাওলাদার, মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, আনোয়ার হোসেন, সাইফুজ্জামান বাদশা, আহসান হাবিব, এ এ এম ফয়েজ হোসেন, মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমুখ।
You cannot copy content of this page