
ইসরায়েলের সামরিক গবেষণা কেন্দ্র ‘ওয়েইজম্যান বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট’ গুড়িয়ে দিয়েছে ইরান। যেখান থেকে পরিচালিত হত ড্রোন প্রযুক্তি, এয়ারস্ট্রাইক কন্ট্রোল সিস্টেম এবং যুদ্ধক্ষেত্রের মেডিকেল টেকনোলজির গবেষণা — যা বহুবার গাজা, লেবানন, ইয়েমেন ও সম্প্রতি ইরানের ভূখণ্ডে পরিচালিত হামলায় ব্যবহৃত হয়েছে।
মধ্য ইসরায়েলের রেহোভোতে অবস্থিত এই সামরিক গবেষণাগার কেন্দ্র সোমবার (১৭ জুন) রাতে ইরানের এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইরান এ হামলাকে তাদের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর পরিচালিত ইসরায়েলি হামলার জবাব হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের এই হামলা ইসরায়েলের পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবেও দেখা যেতে পারে।
ইসরায়েলের হিব্রু ভাষার প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম হারেৎজ গ্রুপের আওতাধীন দৈনিক দ্য মার্কার জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির একাধিক ভবনে সরাসরি আঘাত লাগে এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কমপ্লেক্স সম্পূর্ণভাবে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
এই গবেষণাগারগুলোতে জীবনবিজ্ঞান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং অণুজীববিজ্ঞানের ওপর অত্যাধুনিক গবেষণা চলত। ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউটকে অনেক সময় ‘ইসরায়েলের বৈজ্ঞানিক ও সামরিক মস্তিষ্ক’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়।
ধ্বংসপ্রাপ্ত গবেষণাগারগুলোর মধ্যে একটি পরিচালনা করতেন ইসরায়েলি অধ্যাপক এলদাদ জাহোর। তিনি আণবিক কোষ জীববিদ্যার একজন প্রবীণ গবেষক। অপরদিকে অধ্যাপক এরান সেগালের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণাগারেও সরাসরি আঘাত লেগেছে।
তিনি জানান, মিলিয়ন ডলারের যন্ত্রপাতি পানিতে ও কাঠামোগত ক্ষতিতে একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। তার গবেষণাগার মূলত যুদ্ধক্ষেত্রের রিয়েল-টাইম সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নজরদারি অ্যালগরিদম উন্নয়নে কাজ করত।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিগুলোতে দেখা গেছে আগুনে পুড়ে যাওয়া ল্যাবের ভেতর, ধসে পড়া মেঝে, পুড়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক লাইন ও সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কাঠামো। সূত্রগুলো বলছে, এটি ছিল ইরানের একটি নির্ভুল (precision) হামলা।
দ্য মার্কার তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ইরানের এই হামলা কোনো ‘এলোমেলো’ হামলা নয়, বরং খুবই সচেতনভাবে বাছাইকৃত একটি আঘাত। কারণ এই ইনস্টিটিউটটি বহু বছর ধরে সামরিক গবেষণাকে বৈজ্ঞানিক ছদ্মবেশে চালিয়ে আসছিল।
গবেষণাগারের অধ্যাপক শ্যারেল ফ্লেইশম্যান বলেন, লাইফ সায়েন্সের গবেষণাগারগুলোতে এমনসব উপাদান থাকে, যেগুলো সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে বহু বছর লাগে। এগুলো ধ্বংস হয়ে গেলে তা আর ফিরে পাওয়া যায় না।
অপর গবেষক অধ্যাপক ওরেন শুল্ডিনার বলেন, মনে হচ্ছে যেন গোটা ল্যাবটাই বাতাসে মিলিয়ে গেছে। এটি পুরোপুরি পুনর্গঠন করতে কমপক্ষে দু`বছর সময় লাগবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।













































