আগামী বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) ঈদুল আজহা। অর্থাৎ কোরবানির ঈদ। আর ঈদ মানেই বিনোদনপ্রিয় মানুষের প্রাণবন্ত হয়ে উঠা। যা মাথায় রেখে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সি-বিচ, পারকি সমুদ্র সৈকত, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, ফয়েস লেকসহ দর্শনীয় স্থানসমুহে এখন সাজ সাজ রব চলছে।
কারণ ঈদের দিন থেকে এসব দর্শনীয় স্থানে জমবে মানুষের ভিড়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভিড় জমবে নগরীর পতেঙ্গা সি-বিচে। যেখানে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে। সোমবার (২৬ জুন) সকালে এমনটাই মত দিলেন পতেঙ্গা সি-বিচের তত্ত্ববধায়ক সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান বিন শামস।
তিনি বলেন, পতেঙ্গা সমূদ্র সৈকতে ঈদের দিন থেকে পরবর্তি এক সপ্তাহ পর্যন্ত মানুষের ভিড় জমবে। এ জন্যে পতেঙ্গা সি-বিচ ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু হয়েছে। প্রায় ৯-১০ কিলোমিটার পতেঙ্গা সি-বিচ এলাকাকে নতুন করে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে।
তিনি বলেন, গত ৫-৬ বছর ধরে পতেঙ্গা সি-বিচে অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এতে উন্নত বিশ্বের মতো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে পতেঙ্গা সি-বিচ। এরপর থেকে এই সি-বিচে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের আনা-গোনা বেড়েছে। করোনাকালীন সময়েও নগরীর সবস্থানে জনসমাগম ঠেকানো গেলেও সি-বিচে ঠেকানো যায়নি। পুলিশ ও র্যাবের মাধ্যমে কিছুটা হয়তো নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছিল।
তিনি বলেন, গত রমজানের ঈদেও পতেঙ্গা সি-বিচে উপচে পড়া ভিড় জমেছিল ভ্রমণ পিপাসু মানুষের। আশা করছি এই কোরাবানির ঈদেও তাই ঘটবে। এই ধারণা থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে পতেঙ্গা সি-বিচ এলাকার মার্কেট, হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁসমুহে খাবার সুবিধা নতুন করে গড়ে তোলা হচ্ছে। মার্কেটগুলোতে বেচাকেনার প্রয়োজনীয় পরিবেশ গড়ে তোলা হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকার জন্য সহযোগীতা চাওয়া হয়েছে।
একইভাবে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত পারকি সমূদ্র সৈকতেও ভ্রমণ পিপাসু মানুষের ঢল নামবে বলে জানিয়েছেন সৈকত কমিটির সাধারণ সম্পাদক বারশত ইউপি চেয়ারম্যান কাইয়ুম শাহ। তিনি বলেন, পতেঙ্গা সি-বিচের পাশাপাশি এই সৈকতে প্রতিবছর ঈদে অর্ধলাখেরও বেশি ভ্রমণ পিপাসু মানুষের ভিড় জমবে। যা এক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ীত্ব হয়। বিষয়টি মাথায় রেখে এবার ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ঈদে ভ্রমণপিপাসু মানুষের ভিড়ের বিষয়টি মাথায় রেখে পারকি সমূদ্র সৈকতকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। এখানে ঝাউবন রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর পর্যটকদের খাবার-দাবারসহ নিরাপত্তাজনিত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে এই সৈকতে রাতে অবকাশ যাপনের কোন সুযোগ নেই। এছাড়া এই সৈকতে প্রবেশে কোন ফিও নেওয়া হয় না।
এদিকে ঈদের মিলন মেলা বসার ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়ও। চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, প্রতি বছর ঈদে এই চিড়িয়াখানায় অন্তত ৩০-৪০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। রোজার ঈদেও ঘটেছিল। বিষয়টি মাথায় রেখে এবার কোরবানির ঈদেও চিড়িয়াখানাকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তত্ত্ববধানে পরিচালিত এই চিড়িয়াখানা গত দু‘দশক আগে প্রায় মৃত হয়ে পড়ে। সেখান থেকে তিলে তিলে টেনে তোলা হয়েছে এই লোকসানি প্রতিষ্ঠানকে। বর্তমানে এটি একটি লাভজন প্রতিষ্ঠান। এই চিড়িয়াখানায় এখন পশুর সংকট নেই। বাঘ, সিংহ, হরিণ, ভল্লুকসহ নানা প্রজাতির বন্যপশু এখন এই চিড়িয়াখানায় রয়েছে। যা দেখতে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ১০ হাজার মানুষ আসে। আর ঈদের সময় অর্ধলাখের মতো হয়। আর ভ্রমণ পিপাসু মানুষের জন্য এই চিড়িয়িাখানাকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে।
চিড়িয়াখানার পাশাপাশি নতুন সাজে সজ্জিত হয়েছে চট্টগ্রাম ফয়েস লেক। প্রতি বছর ঈদে এই লেকেও বসে অর্ধলাখ মানুষের মিলন মেলা। ফয়েস লেক কর্তপক্ষ বলছে, এবার মানুষের সমাগম আরো বাড়বে। কারণ এখন যে হারে গরম অনুভুত হচ্ছে, সেখান থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে প্রাকৃতিক এই লেকে ছুটে আসবে মানুষ।
আর বিষয়টি মাথায় রেখে এই দর্শনীয় স্থানের লেকটি আকর্ষণীয় করে তোলা হচ্ছে। লেকের চারপাশে থাকা উচু-নিচু পাহাড়ি টিলা ও গাছাপালা সাজানো হচ্ছে। যেখানে ছুটে আসা মানুষ নিশ্চিত প্রশান্তি অনুভব করবে বলে জানান ফয়েস লেকের তত্ত্ববধায়ক মো. বাহার উদ্দিন।
একইভাবে চট্টগ্রাম মহানগরীর মিনি বাংলাদেশ হিসেবে খ্যাত বহদ্দারহাট স্বাধীনতা কমপ্লেক্সও সাজছে নতুন সাজে। একইভাবে সাজছে চট্টগ্রাম শিশু পার্ক, জাম্বুরি মাঠসহ অন্তত ১০-১২টি দর্শনীয় স্থান। যেখানে ঈদেন দিন থেকে মানুষের মেলা জমবে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. খাইরুজ্জামান।
তিনি বলেন, ঈদের মিলন মেলার বিষয়টি মাথায় রেখে ইতোমধ্যে নগরীর দর্শনীয় স্থানসমুহকে বর্ণিল সাজে সাজানো হচ্ছে। চট্টগ্রামের মানুষ এমনিতে ভ্রমন পিপাসু। ঈদের নামাজের পর দিনের অর্ধেক সময় কোরবানির গোশত নিয়ে সামাজিক কর্মকান্ডে ব্যস্ত সময় কাটালেও বিকেল থেকে দর্শনীয় স্থানসমুহে ভিড় জমাবে। এ কারণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সিএমপির সার্বিক প্রস্তুতি ও সহযোগীতা চাওয়া হয়েছে।
সিএমপির কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ঈদের দিনে নগরীর বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানসমুহে যাতে মানুষের মিলন মেলা বসতে পারে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোন রকম ব্যাঘাত না ঘটে সেভাবে পুলিশ প্রশাসনেক প্রস্তুত রাখার কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি এসব স্থানের মিলন মেলায় কোন রকম ব্যাঘাত ঘটবে না।
You cannot copy content of this page