রবিবার- ২০ এপ্রিল, ২০২৫

এম এ আজিজ স্টেডিয়াম এখন বাফুফের, সিজেকেএসের কি হবে?

এম এ আজিজ স্টেডিয়াম এখন বাফুফের, সিজেকেএসের কি হবে?

ন্তর্জাতিক ফুটবল স্টেডিয়াম হিসেবে তৈরির জন্য ১২ শর্তে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কাছে ‘লিজ’ দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) অধীনে বছরে অন্তত ৩২টি ইভেন্টের খেলা আয়োজন এবং ক্রিকেটসহ বিভিন্ন ইভেন্টের লিগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠকেরা।

জানা যায়, মাঠ সঙ্কট কাটাতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কাছে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম বরাদ্দ চেয়েছিল বাফুফে। গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকায় ব্যাডমিন্টনের এক অনুষ্ঠানে এসে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম বাফুফেকে দেওয়ার ব্যাপারটা প্রথম জানান যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তখন তিনি বলেছিলেন, স্টেডিয়ামটি ১০ বছরের জন্য বাফুফেকে দেয়া হয়েছে।

তবে সেদিনই বাফুফের তরফ থেকে জানানো হয়, ১০ বছরের জন্য স্টেডিয়াম নিয়ে কোনো লাভ নেই। কারণ ফিফার নিয়ম অনুযায়ী কমপক্ষে ২০ বছরের অধিকৃত না থাকলে সেখানে তারা বিনিয়োগ করে না। তাই ২৫ বছরের জন্য স্টেডিয়ামটি চেয়ে এনএসসিকে ফের চিঠি দেয় বাফুফে। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ বছরের জন্যই স্টেডিয়ামটি বাফুফেকে দিয়েছে সরকার।

গত ২ জানুয়ারি এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ২৫ বছরের জন্য ওই মাঠ বরাদ্দ পেয়েছে বাফুফে। এ বিষয়ে এনএসসির সচিব মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম প্রথমে ১০ বছরের জন্য বাফুফেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় বাড়ানো হয়েছে। ২৫ বছরের জন্য বাফুফেকে এই স্টেডিয়াম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’

বাফুফেকে দেয়া জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চিঠিতে ১২টি শর্তের কথা বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী, মাঠে কোনো সংস্কার ও মেরামত করতে হলে ক্রীড়া পরিষদকে অবহিত করে কাজের ব্যয়ভার বাফুফে বহন করবে। লিজ চলাকালে কোনো ক্ষতি হলে বাফুফে ক্ষতিপূরণ দেবে। স্টেডিয়ামের বিদ্যুৎ,পানিসহ সকল ধরনের ইউটিলিটি বিল, ভূমিকরসহ যাবতীয় রাজস্ব ব্যয় বাফুফে বহন করবে। ক্রীড়া পরিষদের অনুমতি ছাড়া স্টেডিয়ামের কোন মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করা যাবে না। ক্রীড়া পরিষদের অনুমতি ছাড়া বাফুফে মাঠটি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারবে না। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খেলায় ১৫ শতাংশ গেট মানি ক্রীড়া পরিষদের অনুকূলে দিতে হবে।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এ সিদ্ধান্তে চট্টগ্রামের খেলাধুলায় ‘সংকট সৃষ্টির’ আশঙ্কা করছেন চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠকেরা। তাঁরা বলছেন, ঢাকা ছাড়া দেশের অন্যান্য জেলার স্টেডিয়ামগেুলো জেলা ক্রীড়া সংস্থা তাদের খেলাধুলা এবং প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার করে। একইভাবে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা তাদের নিজস্ব ইভেন্টগুলো পরিচালনা করে। এম এ আজিজ স্টেডিয়াম আগে থেকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে তালিকাভুক্ত। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ে টেস্ট ম্যাচ হয়েছিল এ মাঠে, যেখানে প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। সে কারণে এ স্টেডিয়াম বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে স্মরণীয় একটি মাঠ।

ক্রীড়া সংগঠকদের ভাষ্য, প্রতিবছর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে ক্রিকেট ফুটবলের পাশাপাশি হ্যান্ডবল, হকি, ভলিবল, আর্চারি, রাগবিসহ নানা ধরনের আউটডোর ইভেন্ট হয়। জহুর আহমেদ ক্রিকেট স্টেডিয়াম চট্টগ্রামের ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট ভেন্যু। তার প্রাকটিস ভেন্যু হিসেবে এমএ আজিজ স্টেডিয়াম ব্যবহৃত হয়। সেই মাঠ ফুটবলকে বরাদ্দ দেওয়া হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টের কোনো দল আর অনুশীলন করতে পারবে না।

এ সংকটময় পরিস্থিতি এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এ মাঠটা মাল্টিপারপাস ইভেন্টের জন্যে। এখানে আমরা ছয় মাস ফুটবল ও ছয় মাস ক্রিকেট খেলি। এখানে প্রিমিয়ার ফুটবল, সেকেন্ড ডিভিশন, থার্ড ডিভিশন ছাড়াও এ মাঠেই আমরা হকি, অ্যাথলেটিকস, হ্যান্ডবল, ভলিবল, কোকো, কাবাডি সব গুলো খেলার আয়োজন করি। জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীন এটি একটি পুরোনো স্টেডিয়াম। প্রতিটি জেলাতেই জেলা ক্রীড়া সংস্থার একটা মাঠ আছে। আমাদের মাঠে আমরা এসব খেলাধুলা করি। এটা এক ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো, এখানে সব বিভাগ আছে।

আমার কথা হচ্ছে, আমরা অনেকদিন ধরে অনেকগুলো নিয়মিত খেলার আয়োজন করে আসছি। এ মাঠ থেকে নান্নু, আকরাম, শহীদ, মাসুম, তামিল ইকবাল, রুবেল, নাজিমউদ্দিন, নাফিজ ইকবালের মতো জাতীয় দলের খেলোয়াড়ের সৃষ্টি। আবার এখান থেকে হাতে খড়ি নিয়ে এ প্রজন্মের অনেকে ঢাকা প্রিমিয়ার, ফার্স্ট ডিভিশন, সেকেন্ড ডিভিশন খেলছে। একই সঙ্গে ফুটবলেও আশীষ, সুনীল, দীলিপ বড়ুয়া, কাওসার আহমেদ, ইউসুফ বলি, জসিমউদ্দিন খসরু, মান্নান, মিন্টু, কাওসার পারভেজ, আনোয়ার, ফরহাদ, আসাদ, জাহেদ পারভেজ, এরকম অনেক খেলোয়াড় এখান থেকে সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের এখানে ফুটবল, ক্রিকেট নিয়ে কোনো সংঘাত নেই। সরকার যদি মনে করে আমরা ফিফা থেকে আর্থিক সহযোগিতা পাবো। তাহলে সেই সহযোগিতা নিয়ে নতুন একটা বিশেষায়িত খেলার মাঠ গড়ে তোলা যেতে পারে। এতে কোনো অসুবিধা নাই।

তিনি বলেন, আমাদের এখানে তো ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক একটা ভেন্যু আছে। তাই বাংলাদেশের ঢাকা বাদে অন্য কোনো বিভাগীয় শহরে ফুটবলের জন্যে একটা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম গড়ে তোলা যেতে পারে। তাহলে তারাও এর একটা অংশীদার হওয়ার সুযোগ পেলো। সেখানের উন্নতি ঘটবে। আর চট্টগ্রামে এ ধরনের মাঠ করার চিন্তা থাকলে পলোগ্রাউন্ড মাঠ রয়েছে। সেখানে হতে পারে। অথবা চট্টগ্রামের টানেল এলাকায় হতে পারে। তাহলে আমাদের ক্রীড়া সংস্থার স্টেডিয়ামটা আমাদের থাকবে। বর্তমান সিদ্ধান্তটা পুনর্বিবেচনা করা উচিত।’

চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদ্য বিলুপ্ত কমিটির ক্রিকেট সম্পাদক আবদুল হান্নান আকবর বলেন, মনে হচ্ছে সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে কোনো গ্রাউন্ড ওয়ার্ক না করেই এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এছাড়া জাতীয় ক্রীড়া সংস্থার একটা নিয়মই আছে যে জেলা ক্রীড়া সংস্থা কি কি কাজ করবে, কি কি করতে পারবে, করা উচিত এটার একটা অবকাঠামো রয়েছে। এখন এখানে জেলা ক্রীড়া সংস্থার অবস্থা কি দাঁড়াবে সেটার কোনো উল্লেখ নেই।

পরিস্থিতির সুরাহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জেলা ক্রীড়া সংস্থার অবস্থান ঠিক রেখেকর্ণফুলী নদীর ওপারে টানেলের কাছাকাছি কোথাও মাঠ নির্বাচন করা যেতে পারে। ওখানে অনেক জায়গা আছে। এ ছাড়া সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর, ফৌজদারহাটের আশেপাশেও বহু জায়গা রয়েছে সেখানে ফুটবলের জন্যে এ ধরনের একটি বিশেষায়িত মাঠ গড়ে তোলা যেতে পারে। তাহলে আমাদের ইভেন্টগুলো বাঁচবে। তা নাহলে অন্যান্য ইভেন্টগুলো শেষ হয়ে যাবে। চিটাগাংয়ে আর কোনো খেলাধুলা থাকবে না। আর বাফুফের কাজ তো সারা বছর থাকবে না। বাকি সময় কি হবে। আমার মনে হয়, আগে যেভাবে চলতো সেভাবে হলে ভালো হবে।’

চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (সিডিএফএ) সভাপতি এস এম শহীদুল ইসলাম বলেন, এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে সিজেকেএসের ফুটবল, ক্রিকেট, হকি হ্যান্ডবল, ভলিবল সব খেলাই হয়। এখানে যদি ফুটবলের জন্যে বাফুফে এ মাঠটা নিয়ে যায় তাহলে আরেকটা ভেন্যু বের করতে হবে। এ ধরনের কোনো ভেন্যু তো চট্টগ্রামে নাই।

বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক এবং পাইরেটস অব চিটাগং ও টিম সিএসসিএল (চায়না-সিঙ্গাপুর-চায়না-লন্ডন) এর প্রতিনিধি আহসান ইকবাল চৌধুরী আবির তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ফিফার আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় নদীর ওপারে এ ভিলেজ গড়ে তোলা যেতে পারে। সরকারি জায়গা লিজ নিয়ে এটা গড়ে তোলা যেতে পারে। শহরের মাঝখানে এ ভিলেজ গড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটা হতে পারে পটিয়া, সীতাকুণ্ড এলাকার কোথাও। সব সময়ে ইন্টারন্যাশানাল ভেন্যুর একটা ব্যাকআপ ভেন্যু প্রয়োজন হয়। বিপিএল টিমগুলো প্র্যাকটিস করে, সাতটা-আটটা টিম তো আর জহুর আহমেদ চৌধুরীতে প্র্যাকটিস করতে পারবে না। এতে করে এ স্টেডিয়ামের ওপর চাপ সৃষ্টির পরিস্থিতি দিকে হাঁটছি আমরা।

ঈশান/মখ/মসু

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page