
চাকুরির অবসরকালীন সময় এলপিআরে যাবেন আগামী মাসে। এর মধ্যে মেতে উঠেছেন ঘুষ বানিজ্যে। করছেন কমিশন বাণিজ্যও। এতে বনে গেছেন বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক। সর্বশেষে পূরণ করেছেন বিদেশ ভ্রমণের শখও।
এমন অভিযোগ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবোর) চট্টগ্রাম অঞ্চলের চিফ ইঞ্জিনিয়ার স্বপন কুমার বড়ুয়ার বিরুদ্ধে। যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। তিনি বলেন, বাপাউবোর প্রকল্প কাজের ঠিকাদারের সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। তাতে ঘুষ নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। আর আমার কোন অর্থ-সম্পদও নেই।
তবে বিদেশ সফরের সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, বাপাউবোর চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে প্রয়োজনীয় মেশিনারিজ ক্রয়ে জার্মান সফর করেছি। এটা অফিসিয়াল সফর। আর এই সফরে আমি তো একা যায়নি। বাপাউবো চট্টগ্রাম পওর বিভাগের দুই নির্বাহী প্রকৌশলীও গেছেন।
এর মধ্যে জনৈক নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, নভেম্বর মাসের শেষের দিকে বাপাউবোর প্রকল্প কাজের ট্রেনিং গ্রোগ্রামে জার্মান গিয়েছিলাম আমরা। বাপাউবোর এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকারি একটি সংস্থা।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বাপাউবোর অনেক কর্মকর্তা বিদেশ সফরে গেছেন, আমরাও বিদেশ সফরের কথা বলায় জার্মান সফরের ব্যবস্থা করে দেয় সরকারি ওই সংস্থা। এতে বিদেশ সফরে যাওয়ার শখও পূরণ হল। কিছু অভিজ্ঞতাও অর্জন করলাম। আর বিদেশ সফর নিয়ে দুই কর্মকর্তার দু‘রকম মতামতে ব্যাপক কৌতুহল সৃষ্টি হয় বাপাউবোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে।
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, স্বপন কুমার বড়ুয়া বাপাউবো চট্টগ্রাম দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পান চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে। দায়িত্ব পেয়ে তিনি প্রকল্প কাজের বরাদ্দ থেকে কমিশন হাতিয়ে নেওয়া শুরু করেন। অভিযোগ রয়েছে, কমিশন ছাড়া তিনি ফান্ড ছাড় দেন না।
পটিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, সন্দ্বীপ, কর্ণফুলী, হালদা, সীতাকুন্ড, মিরসরাই অর্থনৈতিক জোন বেড়িবাঁধ প্রকল্প থেকে ৮-১০% হারে কমিশন হাতিয়ে নেন তিনি। এসব প্রকল্প শতকোটি থেকে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যেখান থেকে তিনি শতকোটি টাকা হাতিয়েছেন বলে দাবি ঠিকাদারদের।
ঠিকাদাররা জানান, একদিকে কমিশন অন্যদিকে প্রকল্প সুপারভিশনে গিয়ে ঠিকাদারদের সাথে খারাপ আচরণ করতেন। নানা দোষ-ত্রুটি দেখিয়ে খরচ হিসেবে হাতিয়ে নিতেন লাখ টাকা। এভাবে গত কয়েকমাসে তিনি শতকোটি টাকা হাতিয়েছেন।
শুধু ঘুষ বা কমিশন বাণিজ্য নয়, অফিসের কর্মচারীদের বদলি বাণিজ্যও করছেন চিফ ইঞ্জিনিয়ার স্বপন কুমার বড়ুয়া। অনৈতিক বদলি বাণিজ্য করতে গিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ না দেওয়ায় বাপাউবো চট্টগ্রাম পওর-২ কার্যালয়ের এক কর্মচারীকে চাকুরি থেকে বরখাস্তও করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কর্মচারী আক্ষেপ করে বলেন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার স্বপন কুমার বড়ুয়া সরকারি কর্মকর্তা হয়েও ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের তাবেদারি করতেন। ২০১২ সালে তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।
পক্ষান্তরে আমি বিএনপির সমর্থন করতাম বলে তিনি অফিসিয়াল হাজিরা খাতায় আমার স্বাক্ষরের পাতা ছিড়ে সম্পূর্ন মিথ্যা-বানোয়াট অভিযোগ এনে আমাকে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করেছেন। এ ঘটনায় আমি মামলা করেছি। রায় আমার পক্ষে গেলেও তিনি এখনও আমার পাওনা নিয়ে হুলিখেলা খেলছেন। পাওনা নিয়ে অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও আমি কোনরকম পরিত্রাণ পাচ্ছি না। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে আমি মানবেতর জীবন যাপন করছি।
ওই কর্মচারী আরও বলেন, স্যার ঘুষ ও কমিশন বাণিজ্য করে এখন শতকোটি টাকার মালিক। স্যারের স্ত্রী পরলোক গমণ করেছেন। চট্টগ্রামের হেমসেন লেনে শ্বশুড় বাড়ি এলাকায় থাকেন তিনি। স্যারের বাড়ি মূলত পটিয়ায়। হেমসেন লেনের বাড়িটি স্যারের নিজের তৈরী। ওই জমিও তিনি কিনেছেন। এই বাড়ি ও জমির বর্তমান বাজার মূল্য ১০ কোটি টাকারও বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে কোটি টাকা খরচে সেখানে ছেলেকে বিয়েও করিয়েছেন তিনি।
এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী এলাকায় স্যার প্লট কিনেছেন ১০ কোটি টাকায়। পটিয়ায়ও বাড়ি নির্মাণ করেছেন। কিনেছেন বিপুল জমি। নগরীর বিভিন্ন ব্যাংকে স্যারের কোটি টাকা জমা রয়েছে। আত্নীয় স্বজনের নামেও কিনেছেন বহু ফ্ল্যাট ও জমি। যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে এসব সম্পদের পাহাড়।
ঘুষ ও কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চিফ ইঞ্জিনিয়ার কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, স্যার তো ঘুষ বা কমিশন নেন না। তিনি খুব ভাল লোক। তবে কিছু চা-পানির খরচ নেন, আর কি? সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে একাধিক বাড়ি-জমি থাকতেই পারে।
(বি: দ্র: বাপাউবো চট্টগ্রাম অঞ্চলের চিফ ইঞ্জিনিয়ার স্বপন কুমার বড়ুয়ার দূর্নীতির দ্বিতীয় প্রতিবেদন প্রকাশ হবে শীঘ্রই। প্রিয় পাঠক চোখ রাখুন দৈনিক ঈশানের অনলাইন ও প্রিন্ট ভার্সনে)