
চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটডের (সিইউএফএল) জেটির একটি বড় অংশ ধসে পড়েছে কর্ণফুলী নদীতে। ভয়াবহ এই ধসের ঘটনায় চট্টগ্রাম থেকে অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন রুটে সার পরিবহন বন্ধ হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে অযত্ন-অবহেলায় সংস্কারবিহীনভাবে পড়ে থাকা বহুল আলোচিত সিইউএফএল জেটি ধসে পড়তে শুরু করায় বন্দর চ্যানেল নিয়েও দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। জেটিতে বিশাল এক গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় কর্মরত শ্রমিকদের মাঝেও দেখা দিয়েছে আতংক।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন রুটে সার পরিবহনের সিইউএফএল জেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই জেটি থেকেই মূলত লাইটারেজ জাহাজে দেশের নানা অঞ্চলে সার পরিবাহিত হয়। দশ ট্রাক অস্ত্র খালাসের ঘটনায় বহুল আলোচিত এই জেটির মালিক সিইউএফএল হলেও এটি থেকে কাফকোতে উৎপাদিত সারও পরিবহন করা হয়।
১৯৮৪ সালে সিইউএফএল কারখানার কাছে কর্ণফুলী নদীতে নির্মিত এই জেটির দৈর্ঘ্য ১৮০ মিটার। এই জেটিতে একই সাথে পাঁচটি লাইটারেজ জাহাজ কিংবা একটি বড় জাহাজ ভিড়ানোর সুযোগ রয়েছে। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত সার নিয়ে আসা বড় জাহাজ এই জেটিতে নোঙর করে সার খালাস করে।
সার পরিবহনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের অন্যতম মাধ্যম হলেও দীর্ঘদিন ধরে এই জেটি অত্যন্ত অযত্ন-অবহেলায় পড়ে রয়েছে। দিনে দিনে জেটিতে ফাটল এবং নিচের মাটি সরে যাওয়ার ঘটনা ঘটলেও কোনো ধরনের সংস্কার বা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। ফলে দিনে দিনে জেটিটির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক হয়ে উঠে।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে জেটির তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছিল। বিভিন্ন সময় ভূমিকম্প এবং জোয়ার–ভাটার টানে জেটির নিচের রিটেইনিং ওয়াল ফেটে যাওয়ায় মাটি সরে যায়। একই সাথে নষ্ট হয়ে গেছে জেটির নিচের স্থাপন করা বল্লি ও প্লেট। এতে করে জেটির নিচের সব মাটি জোয়ারের টানে সাগরে চলে গেছে। জেটির আরসিসি স্ট্রাকচার থাকলেও মাটি সরে যাওয়ায় শুধুমাত্র খুঁটির উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে জেটি।
সূত্র জানিয়েছে, সিইউএফএল জেটিতে লাইটারেজ জাহাজে পণ্য হ্যান্ডলিং করার জন্য পাঁচটি পয়েন্ট রয়েছে। অথচ ঝুঁকিপূর্ণ জেটিতে তিনটি পয়েন্ট বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বর্তমানে এই জেটির দুইটি পয়েন্টে জাহাজে পণ্য বোঝাই করা হয়। বাকি তিনটি পয়েন্টে কোনো জাহাজ ভিড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। গেল সপ্তাহে ঘটে যাওয়া ধসের ঘটনার পর এই জেটিতে আর জাহাজ ভিড়িয়ে সার জাহাজীকরণ সম্ভব হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
সিইউএফএল এর একাধিক কর্মকর্তা জেটি ধসের কথা স্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে এই জেটি সংস্কারের জন্য বিসিআইসিকে চিঠি লেখা হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয়নি। ফলে জেটি সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। দ্রুত এই জেটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া না হলে বড় ধরনের অঘটন ঘটবে বলেও তারা আশংকা প্রকাশ করেছেন।
এই ব্যাপারে সিইউএফএল–এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, জেটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা একটি প্রাক্কলন তৈরি করে পরীক্ষা–নিরীক্ষার জন্য চুয়েটে পাঠিয়েছি। ওখান থেকে মতামত পেলেই আমরা টেন্ডার আহ্বান করব। জেটি সংস্কারের বিষয়টি খুবই জরুরি বলেও তিনি স্বীকার করেন।