ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগরে বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র ডাল লেকের কয়েকটি হাউজবোটে অগ্নিকাণ্ডে নিহত তিনজনই চট্টগ্রামের বাসিন্দা।

তারা হলেন, চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার অনিন্দ্য কৌশল (৪৮)। তিনি রাঙামাটি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী।

অপরজন রাউজানের বিনাজুরি এলাকার ইমন দাশ গুপ্ত (৩৮)। তিনি গণপূর্ত চট্টগ্রাম-২ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী। নগরীর আসকার দীঘির পাড়ে সপরিবারে থাকেন ইমন।

আরেকজন হলেন রাউজান উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের মধ্যম কদলপুরে গ্রামের মইনুদ্দিন চৌধুরী (৪৭)। তিনি একজন ঠিকাদার।

রোববার (১২ নভেম্বর) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন গণপূর্ত চট্টগ্রাম-২ এর এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মোমেন মল্লিক ।

তিনি বলেন, শুনেছি তারা সেখানে বেড়াতে গিয়েছেন। সাফীনা নামের একটি হাউজ বোটে তারা ছিলেন। সেখানে আগুন লেগে তাদের মৃত্যু ঘটে। এ বিষয়ে ভারতীয় পুলিশের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।

সূত্র জানায়, শনিবার ভোরে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগরে বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র ডাল লেকে কয়েকটি হাউজবোটে আগুন লেগে তিন বাংলাদেশি পর্যটকের মৃত্যু হয়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, লেকের নয় নম্বর ঘাটের কাছে আগুনের সূত্রপাত হয়। প্রথমে একটি হাউজবোটে আগুন লাগে এবং পরে তা পাশে নোঙ্গর করে রাখা আরো চারটি হাউজবোটে ছড়িয়ে পড়ে।

পুড়ে যাওয়া পাঁচটি হাউজবোটের মধ্যে একটিতে তিন বাংলাদেশি পর্যটক অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় আরো সাতজন আহত হয়েছেন।

স্থানীয় পুলিশের এক বিবৃতির বরাতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছেন, নিহত তিন বাংলাদেশির নাম অনিন্দ্য কৌশল, ইমন দাশ গুপ্ত এবং মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন। তারা সাফীনা নামের একটি হাউজ বোটে ছিলেন। তাদের পরিচয় পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ নমুন সংগ্রহ করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

ওই তিনজনের মধ্যে অনিন্দ্য কৌশল রাঙামাটি গণপূর্ত কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী, ইমন দাশ গুপ্ত একই বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী এবং মাইনুদ্দিন একজন ঠিকাদার বলে গণপুর্ত কর্মকর্তাদের ধারণা।

গণপূর্তের রাঙামাটি কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী জয় বড়ুয়া বলেন, অনিন্দ্য কৌশল স্যার গত ৩ নভেম্বর ভারতে গেছেন। তিনি আজমীর শরীফ যাওয়ার কথা। সেখান থেকে কাজ শেষে কাশ্মীরে যাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু এটা কি ঘটল কিছুই বুঝতে পারছি না। এছাড়া ইমন ও মাইনুদ্দিনকেও চিনতেন বলে জানিয়েছেন জয়।

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোশারফ হোসেন খান বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী ভারতে আছেন সেটা জানি। তিনি খুবই ভালো মানুষ। এমন ঘটনা শুনে খুব খারাপ লাগছে।

রয়টার্স লিখেছে, প্রাথমিক তদন্তে ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক তার থেকে আগুনের সূত্রপাত হওয়ার কথা জানিয়েছেন কাশ্মিরের কর্মকর্তারা।

কাশ্মীর বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের কাছে বরাবরই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে শ্রীনগরের ডাল লেক। বহু পর্যটক ডাল লেকে হাউজবোটে থেকে লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করেন।

সরকারি তথ্য অনুসারে ২০২২ সালে এক কোটি ৬২ লাখের বেশি পর্যটক জম্মু ও কাশ্মীরে বেড়াতে গেছেন। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনমুক্ত হওয়ার পর যা এক বছরে সর্বোচ্চ পর্যটকের আগমন।

অঞ্চলটি তুষার ঢাকা হিমালয় পর্বত, দ্রুত প্রবাহমান নদী, তৃণভূমি এবং সুন্দর হ্রদ ঘিরে কাঠের হাউজবোটের জন্য পর্যটকদের কাছে প্রিয়।

কাশ্মীরে কয়েক দিন আগেই এ মৌসুমের তুষারপাত শুরু হয়েছে। যা দেখতে এরইমধ্যে যেখানে লাখ লাখ পর্যটক জড়ো হয়েছেন।

ঈশান/খম/সুপি