
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে ২০২৪ সালের জুলাই মাসের শুরু থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে ক্যাম্পাস। কিন্তু সেখান থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন।
সেদিন ছিল ৭ জুলাই। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে সেদিনই শিক্ষার্থীরা শুরু করে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি। করা হয় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ। সেই কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো যোগ দেয় চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা।
ছাত্র-ছাত্রীদের অবস্থান ছিল চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রধান সড়ক কালুরঘাট শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর সড়কের ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশন, দুই নম্বর গেইট, মুরাদপুর, জিইসির মোড়। ফলে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় চট্টগ্রাম মহানগরীর অভ্যন্তরীণ যানবাহন চলাচল।
এমনকি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, কাপ্তাই, বান্দরবানসহ দুরপাল্লার সবধরণের যানবাহনও বন্ধ হয়ে যায়। দেখা দেয় চরম অস্থিরতা। এভাবে দানা বেঁধে উঠে আন্দোলন। এমন স্মৃতিচারণ করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন ছিলেন এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক জোবেইরুল হাসান আরিফ। তিনি জানান, বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির আগেরদিনও অর্থাৎ ২০২৪ সালের ৬ জুলাই চট্টগ্রাম নগরীতে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা শুধু বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়েছিল। এর মধ্যে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র পুনর্বহাল রাখাসহ চার দফা দাবিতে ৬ জুলাই রাতে ঢাকার শাহবাগ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনর ব্যানারে সারাদেশে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
পরদিন ৭ জুলাই দুপুর আড়াইটার শাটল ট্রেনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যা¤পাস থেকে দলে দলে শিক্ষার্থীরা পৌঁছেন নগরীতে। বিকেল ৪টার দিকে প্রথমে নগরীর ষোলশহর রেলস্টেশন থেকে মিছিলের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীদের রেলস্টেশনের মূল ফটকেই আটকে দিয়েছিল পুলিশ।
এ সময় শিক্ষার্থীরা পুলিশের উদ্দেশ্যে ভুয়া ¯ে¬াগান দেন। কিছুক্ষণ পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কির পর শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে দুই নম্বর গেট এলাকায় যান। শিক্ষার্থীরা সেখানে কোটাবিরোধী বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান করেন। প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থা নিয়ে তারা কোটাবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর দুই নম্বর গেট থেকে মিছিল নিয়ে লালখান বাজার এলাকায় গিয়ে সন্ধ্যায় সেদিনের মতো কর্মসূচি শেষ করেন কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা। সেই কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নগরীর বিভিন্ন কলেজসহ আরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের যোগ দিতে দেখা গিয়েছিল প্রথমবারের মতো।
সেই বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির মধ্য দিয়েই চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর এলাকা কোটাবিরোধী থেকে বৈষম্যবিরোধী এবং একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আন্দোলনের মূল ক্ষেত্র হয়ে ওঠে বলে মত প্রকাশ করেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের (বাগছাস) কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি।