
চলনবিলের পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শস্যভান্ডার গুমাই বিল। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় এই বিলের অবস্থান। এ বিলের প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে প্রতিবছর বোরো আবাদ হয়। আমন চাষাবাদও হয় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে।
প্রতি বছরের মতো চলতি বোরো মৌসুমেও এখন বাতাসের সঙ্গে দোল খাচ্ছে বিলভর্তি পাকা ধান। যা দেখে কৃষকের চোখে-মুখে বইছে সিমাহীন আনন্দ। কারণ ফলন ভাল হয়েছে। একই সাথে কপালে পড়েছে চিন্তার ভাজও। কারণ এসব ধান কেটে ঘরে তোলার শ্রমিক পাচ্ছেন না কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, গত দুই দশক আগেও এই বিলে ধান পাকার সময়ে দেশের সবচেয়ে কর্মহীন এলাকা রংপুর, রাজশাহী, দিনাজপুর, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিক আসত। কিন্তু গত দুই দশক ধরে শ্রমিকরা কম আসা শুরু করে। ফলে ক্রমেই ধান কাটা শ্রমিকের সংকট তৈরী হয়। আর বর্তমানে এসব এলাকা থেকে শ্রমিক না আসায় সংকট আরও গভীর হয়েছে। ফলে ধান পাকলে এ বিলের কৃষকের কপালে চিন্তার ভাজ পড়তে শুরু করে।
বিলের উত্তরাংশে অবস্থিত মরিয়ম নগর ইউপির কৃষক কামাল উদ্দিন বলেন, গুমাই বিলে আমার দেড় একর জমির বোরো ধান পেকেছে। মাশাল্লাহ ফলনও ভাল হয়েছে। কিন্তু এই ধান কাটার শ্রমিক পাচ্ছি না। ফলে এই ধান কিভাবে ঘরে তুলবো তা নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায় রয়েছি। একই কথা বলেছেন চন্দ্রঘোনা ইউপির কালুগোট্টা গ্রামের কৃষক মাহবুবুল আলমও।
তিনি বলেন, আমার এক একরের চেয়ে একটু বেশি জমির বোরো ধান পেকেছে। ফলন ভাল হওয়ায় ভালো লাগছে। কিন্তু ধান কেটে ঘরে তোলার শ্রমিক পাচ্ছি না। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কিছু শ্রমিক আসলেও তারা সংকট বুঝে মজুরি হাকাচ্ছে বেশি। একেকজন শ্রমিক একদিন ধান কাটার জন্য দেড় থেকে দুই হাজার টাকা মজুরি দাবি করছে। যা আগে এত ছিল না। গত বছরও এই মজুরি ছিল ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।
সোমবার (১ মে) দুপুরে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রোয়াজারহাটে বসা শ্রমিকের হাটে কাজের অপেক্ষায় ছিলেন ২৫-৩০ জন শ্রমিক। যারা ধান কাটতে একদিনের মজুরি হাঁকছেন দুই হাজার টাকা। তম্মধ্যে কুষ্টিয়া থেকে আসা শ্রমিক বিল্লাল হোসেন বলেন, দুই হাজার টাকায়ও শ্রমিক মিলছে না। গুমাই বিলের ধান কাটতে যেখানে ৪-৫ হাজার শ্রমিকের দরকার সেখানে আমরা ২০-২৫ জন আছি।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় এবার ৮ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে গুমাইবিলে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ছক্কা, টিয়া, সুরভী-১, তেজগুল্ড, হিরা-২, হিরা-৬, ই¯পাহানি-৮, সিনজেন্টা ১২০৩ এবং ১২০৫, জনক রাজ, উফশী জাতের ব্রি ধান ৮৮, ২৯, ৭৪, ৮৪, কাটারী জাতের ধানের আবাদ হয়েছে।
উপজেলার অন্যান্য কৃষি জমিতে ব্রি-ধান ২৮ এ নেক ব্লাস্ট রোগে ক্ষতি হলেও গুমাইবিলে এই জাতের চাষাবাদ কম হওয়ায় এবং আগাম ব্যবস্থা নেওয়ায় তেমন রোগবালাই দেখা যায়নি। ফলে গুমাই বিলে ভাল ফলন হবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
সরেজমিনে গুমাই বিলে গিয়ে দেখা যায়, সোনালি ধানে ভরে গেছে মাঠ। কৃষকদের কেউ ধান কেটে ঘরে আনছেন, কেউ কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গুমাইবিলে এবার মধ্যমেয়াদী ব্রি ধান ৮৮ জাতের চাষাবাদ বেশি হওয়ায় কৃষকরা দ্রুত বোরো ধান কাটতে পারছেন। ইতোমধ্যে গুমাই বিলের চন্দ্রঘোনা, মরিয়মনগর, ব্রহ্মোত্তর অংশে এ জাতের ধান কাটা শুরু করেছেন কৃষকরা।
এ বিষয়ে গুমাইবিলে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, আমরা কৃষকদেরকে বোরো ধান চাষে ব্রি কর্তৃক উদ্ভাবিত ব্রি ধান ৮৮, ৯২ সহ হাইব্রিড ধান চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করেছি বেশি। কৃষকরা এ জাতগুলো এবার বেশি চাষাবাদ করেছেন গুমাইবিলে। ব্রি ধান ৮৮ জাতটি অন্যান্য জাতের চেয়ে ৭১০ দিন আগাম হওয়ায় এখন গুমাইবিলে এ জাতটির কর্তন শুরু হয়েছে। ফলনও আশানুরূপ হয়েছে। নমুনা শস্য কর্তন করে ৬৬.৩ টন পর্যন্ত হেক্টর প্রতি ফলন পাচ্ছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, চলন বিলের পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল হচ্ছে রাঙ্গুনিয়ার ‘গুমাই বিল’। এই বিলে এখন পাকা বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। আগামী সপ্তাহের দিকে পুরোদমে কাটা শুরু হবে। আশা করি, এবারও ধানের উৎপাদন বরাবরের মতো রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।