রবিবার- ২০ এপ্রিল, ২০২৫

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড

ঘুষ নিয়ে ধরা, প্রতিষ্ঠানের কোডে জমা দিয়ে বাঁচার চেষ্টা

প্রশ্ন করতেই ক্ষিপ্ত সচিব রেজাউল করিম

টেন্ডারের আওতায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড থেকে ১ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকার বিল পায় মাষ্টার সিমেক্স পেপার লিঃ শিট সরবরাহকারী নামক প্রতিষ্ঠান। গত ৮ জুন ওই বিল পাওয়ার সময় ঘুষ হিসেবে নগদ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন শিক্ষাবোর্ডের সচিব প্রফেসর রেজাউল করিম।

আর বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর ঘুষের ওই টাকা অন্তত ৬ দিন পর গত ১৫ জুন তড়িঘড়ি করে শিক্ষা বোর্ডের ৫৯১ কোডে জমা দিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। এমন অভিযোগ শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। অভিযোগটি স্বীকার করেছেন খোদ শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর কামরুল আখতারও।

বিষয়টি নিয়ে শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে তুমুল আলোচনা-সমালেচনা চললেও নির্ভার শিক্ষাবোর্ডের সচিব প্রফেসর রেজাউল করিম। এ বিষয়ে জানতে সম্প্রতি প্রফেসর রেজাউল করিমের মুখোমুখি হন এই প্রতিবেদক। বিষয়টি প্রশ্ন করতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন তিনি।

তিনি বলেন, ঘটনাটি নিয়ে প্রথম আলো, আজাদীর মতো পত্রিকায় নিউজ হয়েছে, তাতে আমার কিছুই হয়নি। আর আপনার পত্রিকায় নিউজ করলে কী হবে, বলেন তো দেখি। আর ঘটনাটি হয়েছে প্রায় এক মাস আগে। এখন এসব বিষয়ে আমি আপনার সাথে কথা বলতে রাজী না। যান আপনারা বেরিয়ে যান।

ঘটনাটির আপডেট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিসের আপডেট, আমি বলেছি না এ বিষয়ে কোন কথা বলব না। বিষয়টা সমাধান হল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা স্যাটেলড বিষয়। টাকাটা শিক্ষাবোর্ডের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে, ব্যস এনাফ।

কোন খাতে জমা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি কি পুলিশ, আপনাকে বলব কেন, কোন খাতে জমা হয়েছে। আপনি জানেন কার সাথে কথা বলছেন, একজন সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার সাথে কথা বলছেন! আপনার সেই কান্ডজ্ঞানও নেই, আপনি কিসের সাংবাদিক। আপনাকে বলছি না, বেরিয়ে যেতে!

এরপরও জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষাবোর্ডের ৫৯১ কোডে এই টাকা জমা হয়েছে। কোডের খাতের নাম কি জানতে চাইলে বলেন, এসএনজি খাত। বিষয়টি পরিষ্কারভাবে জানতে চাইলে বলেন, সেটা আপনি বুঝে নেন। আর কিছুই বলা যাবে না। এ সময় তিনি শিক্ষাবোর্ডের উপসচিব বেলাল হোসেন আছে কি না অধিনস্ত একজন কর্মচারীর কাছে জানতে চান। তিনি চলে গেছেন বলার পর বলেন, উনাদের এখান থেকে বের করে দেন।

বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, টেন্ডারের আওতায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড থেকে ১ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকার বিল পায় মাষ্টার সিমেক্স পেপার লিঃ শিট সরবরাহকারী নামক প্রতিষ্ঠান। গত ৮ জুন ওই বিল পাওয়ার সময় ঘুষ হিসেবে নগদ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন শিক্ষাবোর্ডের সচিব প্রফেসর রেজাউল করিম। কিন্তু বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। এ নিয়ে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান মহোদয় সার্চ করেন সচিব মহোদয়কে। এরপর তিনি ওই টাকা শিক্ষাবোর্ডের মেরামত খাতে জমা দেন। এখন তিনি বলছেন, ট্রাক থেকে মাল লোড-আনলোডের সময় ক্ষতিগ্রস্থ ফ্লোরের ক্ষতিপূরণ বাবদ ওই টাকা নেওয়া হয়েছে। আর এ নিয়ে বোর্ডের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাঝে চরম কানাঘুষা চলছে।

কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আরো জানান, মাল লোড-আনলোডের সময় ক্ষতিগ্রস্থ ফ্লোর শিক্ষাবোর্ডের টাকায় অনেক আগেই সংস্কার/মেরামত করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লোরের ক্ষতিপূরণ বাবদ কোন টাকা নেওয়ার অনুমোদনও ছিল না। আর ক্ষতিপূরণের টাকা নিলেও নগদ টাকা গ্রহণের কোন নিয়ম নেই শিক্ষাবোর্ডে। বোর্ডের সকল কাজে ব্যাংক হিসাবে খাতওয়ারী টাকা জমা নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। যে টাকাই হোক না কেন তিনি নগদ টাকা গ্রহণ করে দূর্নীতি করেছেন।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, সচিব রেজাউল করিম শিক্ষাবোর্ডে আসার পর সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট গড়ে তোলে বোর্ডের নানা কাজে অনিয়ম-দূর্নীতি করে চলেছেন। এর নেপথ্যে রয়েছেন বোর্ডের উপসচিব মোহাম্মদ বেলাল হোসেন। টেন্ডারের আওতায় বিল পাওয়ার পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নগদ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার ঘটনা তাদের অন্যতম কারসাজি। এছাড়া নাম সংশোধনের নামেও তারা অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে। যার কিছু তথ্যপ্রমাণ সংরক্ষিত রয়েছে।

টাকা প্রদানের বিষয়ে জানতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পরিচালক শেখ ইমরান হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর কামরুল আখতার বলেন, আমি কি বলব, এ ঘটনায় আমি হতভম্ব। তিনি এই টাকা কেন নিয়েছেন আমি বুঝে উঠতে পারছি না। কারণ শিক্ষাবোর্ডে নগদ টাকা গ্রহণের কোন নিয়ম নেই। যাহার যে কাজের টাকা তিনি সেই খাতে নিজের হাতে ব্যাংকে জমা দেন।

প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালামাল লোড-আনলোডের সময় ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লোরের মেরামত বোর্ডের টাকা দিয়ে করা হয়েছে। এতে ৩০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। তাহলে তিনি ৫০ হাজার টাকা নিলেন কেন? তাও আবার নগদে কেন? তাও আবার বিল পাওয়ার দিন কেন? ক্ষতিপূরণের টাকা আদায় সংক্রান্ত বোর্ডের কোন আনুমোদনও তো নেই। এই টাকা আবার মেরামত খাতে জমা হলো কেন? মেরামত তো ব্যয়ের খাত, আয়ের খাত নয়। তাহলে ওই টাকা কিসের টাকা। এ নিয়ে সচিবের বরাবরে কারণ দর্শানোর নেটিশ দেয়া হয়েছে। তিনি জবাবও দিয়েছেন। কিন্তু তা সন্তোষজনক নয়। বিষয়টি বিভাগীয়ভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

(দ্রষ্টব্য : চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে ধারবাহিক প্রতিবেদন আসছে, পাঠকদের চোখ রাখার অনুরোধ রইল)

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page