Skip to content

বুধবার- ৪ জুন, ২০২৫

ঘুষের বিনিময়ে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা

ঘুষের বিনিময়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার ভান্ডারজুড়ি পানি প্রকল্পের ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার পাইপলাইনের একটি কাজ পছন্দের ঠিকাদারকে পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী, তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (প্রকৌশল) বিরুদ্ধে।

এজন্য ৮ লাখ টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতি করে সুকৌশলে ওই দরপত্রে অস্বাভাবিক, কঠিন সব শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে বাদ পড়েছেন কম দামে কাজটি করতে আগ্রহী ১৪ জন তালিকাভুক্ত ঠিকাদার। এমন ঘটনায় চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে গত ১৯ জুন লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ওয়াসা কন্ট্রাকটর এসোসিয়েশন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া শাকিল ওয়াসার অনিয়মিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এন মোহাম্মদ এন্টারপ্রাইজকে কাজটি পাইয়ে দিতে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়েছেন। আর এ কাজে তাকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রকৌশল) বিষ্ণু কুমার সরকার।

পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে দরপত্রে অস্বাভাবিক সব শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যা অন্য কারও পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়। এ দরপত্রে ওয়াসার মোট ১৪ জন ঠিকাদার অংশ নিলেও শর্তের বেড়াজালে ফেলে কোনো ধরণের নোটিশ বা ক্লারিফিকেশন ছাড়াই সবাইকে বাদ দিয়ে কাজের জন্য মেসার্স এন মোহাম্মদ এন্টারপ্রাইজকে চূড়ান্ত করা হয়েছে।

প্রকল্পের কাজের চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে ওয়াসার এমডির কাছেও ফাইল পাঠিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। এতে ওয়াসা ৮ লক্ষ টাকারও বেশি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী ভান্ডারজুড়ি-২ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মৌখিকভাবে এসোসিয়েশনকে আশ্বস্ত করেন যে দরপত্রে শর্তগুলো শিথিল করা হবে। সেই অনুযায়ী ১৪ জন ঠিকাদার দরপত্রে অংশ নেয়। কিন্তু গত ২৪ মে দরপত্র খোলার পর দেখা যায় শর্তাবলী শিথিল দূরে থাক উল্টো সবাইকে বাদ দিয়ে এন মোহাম্মদকে কাজ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। যেই প্রতিষ্ঠানটি ওয়াসায় তালিকাভুক্ত হওয়ার পর আজ পর্যন্ত কোনো দরপত্রে অংশ নেয়নি।

ঠিকাদার এসোসিয়েশনের অভিযোগ, প্রকৃতপক্ষে এন মোহাম্মদ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান মেসার্স এন মোহাম্মদকে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার কাজটি পাইয়ে দিতে কঠিন ও অস্বাভাবিক সব শর্ত দেওয়া হয়েছে দরপত্রে। প্রমাণ হিসেবে দেখা যায়, এন মোহাম্মদ এন্টারপ্রাইজ ০.১০ শতাংশ কম মূল্যে দরপত্রটি দাখিল করলেও তাদেরকে কাজটি দেওয়া হচ্ছে। অথচ দরপত্রে অংশ নেয়া ১৪ জন ঠিকাদার দরপত্রটি ৫ শতাংশ কমে দাখিল করেছেন। হিসাব করে দেখা যায়, অন্যান্য ঠিকাদারের তুলনায় এন মোহাম্মদ ০.১০ শতাংশ কমে দরপত্র দাখিল করেছেন। সেই হিসেবে ১৪ জন ঠিকাদার কাজটি ১ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার ৭৩৬ টাকায় করতে চাইলেও এন মোহাম্মদ এন্টারপ্রাইজ করতে চাচ্ছে ১ কোটি ৭০ লাখ ৮৮ হাজার ৯৩১ টাকায়। যেখানে রাষ্ট্রের ক্ষতি হবে ৮ লাখ ৩৮ হাজার টাকারও বেশি।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ওয়াসার তালিকাভুক্ত ঠিকাদারদের সক্ষমতার বিষয় ও দরপত্রের শর্তাবলী, দাখিলকৃত দর ও সার্বিক বিষয় বিবেচনা করলে পুরো বিষয়টি খোলাসা হবে। এতে আরও উল্লেখ করা হয় এলটিএম পদ্ধতিতে দরপত্র খোলার পর পিপিআর-৮ অনুসারে দরপত্রে ওপেনিং দেওয়ার নিয়ম থাকলেও এক দরপত্রের ক্ষেত্রে ওপেনিং দীর্ঘদিন দেওয়া হয়নি। এসব কারসাজি রুখতে বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা করে পুনঃদরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন ঠিকাদাররা।

ওয়াসার ঠিকাদাররা জানান, অস্বাভাবিক শর্তে যদি দরপত্র আহব্বান করা হয় তাহলে ওয়াসা ওপেন টেন্ডারে করতে পারতো। সেক্ষেত্রে আরও ১৭ লাখ টাকা বেশি লাভ হতো ওয়াসার। কিন্তু এই দরপত্রে একজনকে কাজ দিতে গিয়ে কঠিন শর্তাবলী দেওয়া হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে। ফলে ওয়াসাকে আরও ৮ লাখ টাকা বেশি দিতে হবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।

চট্টগ্রাম ওয়াসা কন্ট্রাক্টর এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবছার উদ্দিন সেলিম বলেন, প্রায় দেড় মাস আগে দরপত্রটি আহ্বান করা হয়েছে। এক মাস আগে আমরা সাবমিট করি। অনেক কালক্ষেপণের পর গত ২৪ মে দরপত্রটি ওপেন করা হয়। আমাদেরকে বলা হয়েছিল শর্তাবলী শিথিল করা হবে এবং চাইলে আমরা একটা একটা পূরণ করতে পারি। কিন্তু কাউকে কোনো কিছু না জানিয়ে কোনো ধরণের ক্লারিফিকেশন ছাড়াই সবাইকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আমরা ওয়াসার এমডিকে অভিযোগ দিয়েছি। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন ব্যবস্থা নেবেন।

জানতে চাইলে ওয়াসার ভান্ডারজুরি পানি প্রকল্পের পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া শাকিল বলেন, আমি এ বিষয়ে কথা বলার জন্য দায়িত্বশীল ব্যক্তি নয়। আপনি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহবুবুল আলমের সঙ্গে কথা বলুন। পরবর্তীতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রকৌশল) বিষ্ণু কুমার সরকার বলেন, আপনি দপ্তরে এসে এমডি স্যারের সঙ্গে কথা বলুন। বোর্ড মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত মতে গণমাধ্যমের সঙ্গে আমরা কথা বলতে পারব না।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, এ বিষয়ে আমি জানি না। না জেনে তো কিছুই বলা যাবে না। আপনি পড়ে ফোন দেন।

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page