
দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় মোখা শক্তি আরও বাড়িয়ে শুক্রবার (১২ মে) সকালে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। ঘুর্ণিঝড়টি আগামী রোববার দুপুর নাগাদ ঘন্টায় ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার গতিতে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
আবহাওয়ার এমন বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুন্ড, সন্দ্বীপ, মিরসরাই উপকুলসহ সবকটি উপজেলার মানুষের মাঝে এখন চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কায় রয়েছেন উপকুলের সব মানুষ। আর ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। যা দেখে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে উপকুলবাসী।
আনোয়ারা উপকুলবর্তি জুঁইদন্ডি এলাকার পারভেজ হোসেন বলেন, অতিতের সবকটি ঘুর্ণিঝড়ের সময় জুঁইদন্ডির বিস্তীর্ণ এলাকা উচু জলোচ্ছ্বাসে ডুবে গিয়েছিল। এবারও সেই আতঙ্ক বিরাজ করছে মানুষের মনে। জলোচ্ছ্বাস হলে এলাকার অনেক অপরিপক্ক বোরো ধান নষ্ট হয়ে যাবে। নষ্ট হবে শত শত একরের সবজি ক্ষেত। মারা যাবে গরু-ছাগল। এছাড়া এই উপকুলের অনেক মানুষ মাছ ধরতে গিয়ে এখনো সাগর থেকে ফিরেনি। তাদের ভাগ্য কি হবে এ নিয়ে মানুষ বেশ চিন্তিত।
একই কথা বলেছেন বাঁশখালী উপকুলের গন্ডামারা ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুল জব্বার। তিনি বলেন, মোখার প্রভাবে আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। ঘুর্ণিঝড়ের আঘাতে এলাকার শত শত হেক্টর জমির লবণের মাঠ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। নষ্ট হতে পারে অপরিপক্ক বোরো ধান। তাছাড়া এলাকার কয়েক হাজার জেলে সাগরে মাছ ধরার উপর নির্ভরশীল। তাদের অনেকে এখনো ফিরেনি।
এদিকে সীতাকুন্ড উপকুলের বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. ইউসুপ জানান, উপজেলার প্রায় ২৪ কিলোমিটার উপকুলে অনেক চাষাবাদ হয়েছে। রয়েছে সবজি ক্ষেত। যা মোখার আঘাতে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ভুগছে এলাকার মানুষ।
তবে আশার আলো হচ্ছে এর আগের সবকটি ঘুর্ণিঝড়ের সময় উপকুল ছিল অরক্ষিত। এবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের ফলে অনেকটা সুরক্ষিত। কিন্তু মোখা যদি প্রবল আঘাত হানে ওই বাঁধ তো উপরে যেতে পারে। আর জলোচ্ছ্বাস হলে তো ব্যাপক ফসলহানি ও প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।
ফসলহানির বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আতিক উল্লাহ খান বলেন, চলতি মৌসুমের ৯০ শতাংশ বোরো ধান কাটা হয়ে গেছে। আগাম জাতের বোরো ফসলের চাষ করায় এবার ধান আগাম পেকেছে। বাকি ১০ শতাংশ ধানও আশা করি আজকালের মধ্যে কাটা হয়ে যাবে। কৃষি অফিসের কর্মীরা এ বিষয়ে মাঠে করছেন। আর ধান এখন অপরিপক্ক থাকার কথা নয়।
আর প্রাণহানিসহ ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাত ও জানমাল রক্ষায় চট্টগ্রামের উপকূলীয় পাঁচ উপজেলাসহ জেলার ১৫ উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন। শুক্রবার (১২ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাত ও জানমাল রক্ষায় চট্টগ্রামের উপকূলীয় পাঁচ উপজেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩৮৮টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ৭ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। দুর্যোগ পরবর্তি পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রাথমিক চাহিদা মিটানোর জন্য ১৫টি উপজেলায় ত্রাণ হিসেবে চাল ও নগদ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।