রবিবার- ২০ এপ্রিল, ২০২৫

চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহের সুখবর দিল কেজিডিসিএল

তবে ভোগান্তি কমছে না আজও

চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহের সুখবর দিল কেজিডিসিএল

“ত্রুটি কাজ সংস্কার শেষ করে এলএনজি টার্মিনালের সাথে পাইপলাইনের সংযোগ দেয়ার চেষ্টা চলছে। তবে এতে কতক্ষণ সময় লাগবে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না। পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ শুরু হলেও চট্টগ্রাম পর্যন্ত সেই গ্যাস এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কয়েক ঘণ্টা লেগে যাবে। এতে করে আজ গ্যাস সরবরাহ আদৌ শুরু কিংবা স্বাভাবিক হবে কিনা তা নিয়ে কর্মকর্তারা সংশয়ে রয়েছেন।”

গত দুই দিন ধরে নারকীয় যন্ত্রণার পর অবশেষে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহের সুখবর কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কো¤পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) কর্মকর্তারা। তারা জানান, শনিবার সকাল থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হতে পারে। তবে মহেশখালী থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত গ্যাস আসা এবং প্রবাহ স্বাভাবিক হতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে।

আর তাতে মনে হচ্ছে তৃতীয় দিনের মতো আজও গ্যাসের যন্ত্রণায় থাকতে হবে চট্টগ্রামবাসীকে। এমন তথ্য জানিয়েছেন কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক আমিনুর রহমান। তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর থেকে আনা এলএনজিবাহী জাহাজ (টার্মিনাল) মহেশখালীতে সাগরের তলদেশে পাইপলাইনে সংযোগ দেয়ার সময় গত বৃহ¯পতিবার বিপর্যয় ঘটে। জাহাজের সাথে পাইপের সংযোগ দেয়া সম্ভব না হওয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

চট্টগ্রাম পর্যন্ত ৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনের গ্যাস দিয়ে কয়েক ঘণ্টা চললেও বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে অনেক এলাকার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। শুক্রবার ভোর রাত থেকে পুরো চট্টগ্রামের কোথাও গ্যাস ছিল না। তখন থেকে চট্টগ্রামের সর্বত্র গ্যাস প্রবাহ বন্ধ রয়েছে।

ফলে চট্টগ্রামের কাফকো এবং সিইউএফএল সার কারখানা, শিকলবাহা বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ গ্যাসনির্ভর সব শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাস নেই ৬৮টি সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনসহ কয়েক হাজার বাণিজ্যিক এবং ৬ লাখের বেশি আবাসিক গ্রাহকের সংযোগে। পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে রান্নার চুলা। গ্যাস না থাকায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন আবাসিক গ্রাহকরা।

সকালে গ্যাসের চুলা জ্বলতে না দেখে হোটেলে ছুটে যান অনেকে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় খাবার কম থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অনেকেই ফিরেছেন খালি হাতে। গ্যাস সংকটে রাস্তায় গাড়িও কমে গেছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর হওয়ায় সিলেট কিংবা কুমিল্লা অঞ্চলের গ্যাস এনেও জরুরি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সুযোগ নেই।

তবে শনিবার (২০ জানুয়ারি) সকালে গ্যাস সরবরাহের সুখবর দেয় কেজিডিসিএল কর্মকর্তারা। তারা জানান, ত্রুটি কাজ সংস্কার শেষ করে এলএনজি টার্মিনালের সাথে পাইপলাইনের সংযোগ দেয়ার চেষ্টা চলছে। তবে এতে কতক্ষণ সময় লাগবে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না। পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ শুরু হলেও চট্টগ্রাম পর্যন্ত সেই গ্যাস এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কয়েক ঘণ্টা লেগে যাবে। এতে করে আজ গ্যাস সরবরাহ আদৌ শুরু কিংবা স্বাভাবিক হবে কিনা তা নিয়ে কর্মকর্তারা সংশয়ে রয়েছেন।

কর্মকর্তারা আরও জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত ১০টা ১২ মিনিটে মার্কিন কো¤পানি এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনালের সাথে পাইপলাইনের সংযোগ দেয়া হয়েছে। ৪৮০ মিলিয়ন ঘনফুট করে এলএনজি সরবরাহ দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে চট্টগ্রামে গ্যাস পৌঁছাতে ৩-৪ ঘণ্টা সময় লাগবে। শনিবার সকালে নগরীসহ চট্টগ্রামের গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।

এদিকে শুক্রবার সকাল থেকে সারা দিন গ্যাস না থাকার যন্ত্রণায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নগরবাসী। ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা হচ্ছে। খুলশী এলাকার মণির উজ জামান খাবার কেনার বিড়ম্বনার কথা উল্লেখ করে বলেন, খাবার কিনতে গিয়ে নগরীর সব জায়গায় মানুষের ভিড় এবং হাহাকার দেখেছেন বলে জানান।

আল ফালাহ গলির বাসিন্দা নুরজাহান বেগম বলেন, পূর্ব ঘোষণা ছাড়া হুট করে এমন বিপর্যয় সব এলোমেলো করে দিয়েছে। বৃহ¯পতিবার চুলা টিম টিম করে জ্বলেছিল। শুক্রবার সকাল থেকে একদম বন্ধ। সকালে নাস্তাও করতে পারিনি।

নগরীর উইমেন কলেজ মোড়ের মালেক হোটেলের ম্যানেজার জানান, শুক্রবার সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে দিনভর খাবারের জন্য প্রচুর মানুষ এসেছেন। শনিবার সকালেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। গ্যাস না থাকায় আমাদেরও সমস্যা হয়েছে। সিলিন্ডার ব্যবহার করে রান্না করছি। তবে মানুষের প্রচুর চাপ থাকায় সবাইকে খাবার দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

আবদুল হামিদ নামে চকবাজারের এক বাসিন্দা বলেন, শুক্রবার রাতে বশিরের (ডিসি রোড, পশ্চিম বাকলিয়া) ভাতের হোটেল থেকে ৫০ টাকার ভাত কিনেছি। কোনোমতে খেয়েছি। শনিবার সকালের নাস্তা করতে পারি নাই। বাবা-মা, বউ-বাচ্চাসহ নাস্তা না করে সকাল শুরু করেছি। দুপুরও অনিশ্চিত।

গ্যাসের অভাবে অনেকে ছাদের উপর ইটের চুলা বানিয়ে রান্না সেরেছেন। কেউ কেউ তেলের চুলা কিনে এনেছেন। সবকিছু মিলে গ্যাসের অভাবে নগরজীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে বলে সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন।

অপরদিকে সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সিএনজি অটোরিক্সাসহ বিভিন্ন গণপরিবহন চলাচল কমে গেছে। দ্বিগুণ-তিন গুণ ভাড়া হাঁকা হচ্ছে সিএনজি ট্যাক্সিতে। গ্যাসের অভাবে ঘরে-বাইরে নাগরিক দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। আমদানিকৃত এলএনজি থেকে চট্টগ্রামে দৈনিক ২৭০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাস দেয়া হয়। এর মধ্যে কাফকো, সিইউএফএল সার কারখানা এবং শিকলবাহা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করছিল। বাকি গ্যাস জোড়াতালি দিয়ে চট্টগ্রামের ৬৮টি সিএনজি স্টেশন, কয়েক হাজার শিল্প ও বাণিজ্যিক গ্রাহক এবং ৬ লাখের বেশি আবাসিক গ্রাহকের গ্যাসের যোগান দেয় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page