আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুই দিন আগে চট্টগ্রাম মহানগরের চান্দগাঁও থানা এলাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গুলিবর্ষণে দোকান কর্মচারী শহিদুল ইসলাম শহিদ নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকান্ডে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) আওতাধীন থানাগুলোতে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর প্রথম অভিযোগপত্র এটি।
অভিযোগপত্রে দন্ডবিধির ৩০২ ধারায় হত্যার অভিযোগে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ ২৩১ জনকে আসামি করা হয়েছে। সাক্ষী করা হয়েছে ১২৮ জনকে।
চান্দগাঁও থানার ওসি আফতাব আহমেদ শুক্রবার (১ আগস্ট) দিনগত রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মামলাটি তদন্ত করে গত বুধবার (৩০ জুলাই) আদালতের প্রসিকিশন শাখায় অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগরীর চান্দগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল হক। আসামিদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধি আইনের ৩০২ ধারায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিচারের আবেদন করা হয়েছে।
এসআই নুরুল হক জানান, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গত বছরের ৩ আগস্ট নগরীর চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাটে দু‘পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মো. শহিদুল ইসলাম শহিদ (৩৭)। এ ঘটনায় ১৫ আগস্ট তার ভাই শফিকুল ইসলাম নগরীর চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন।
আন্দোলনের সময় নিহত শহিদুল ইসলাম শহিদ হত্যা মামলায় তার ভাইয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শহিদ জুতার দোকানের কর্মচারী ছিলেন। গত বছরের ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় দোকান থেকে বেরিয়ে বাসায় যাওয়ার সময় দুষ্কৃতকারীদের গুলিবর্ষণে নিহত হন তিনি। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যাওয়ায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, অভিযোগপত্রটি প্রসিকিউশন শাখা থেকে বৃহ¯পতিবার (৩১ জুলাই) চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে দাখিল করা হয়। আদালত ২৫ আগস্ট বাদীর উপস্থিতিতে অভিযোগপত্রের ওপর শুনানির সময় নির্ধারণ করেছেন।
আসামিদের মধ্যে আরও আছেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, এম এ লতিফ, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভী, মহিউদ্দিন বাচ্চু, আবদুচ ছালাম, দিদারুল আলম দিদার, এস এম আল মামুন ও নোমান আল মাহমুদ, চসিকের সাবেক কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, এসরারুল হক, নুর মোস্তফা টিনু, পুলক খাস্তগীর, সলিমুল্লাহ বাচ্চু, জিয়াউল হক সুমন এবং নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীসহ যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার প্রবল গণআন্দোলনের মধ্যে গত বছরের ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় নগরীর ষোলশহর এলাকায় তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাসভবন এবং বহদ্দারহাট মোড় এলাকায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সেসময়কার মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটে।
সেসময় আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল, আন্দোলনে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুলিবর্ষণে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ নিহত হয়েছেন। তবে নগর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বহদ্দারহাটে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে মেয়রের বাসায় হামলা ঠেকাতে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছিলো। পুলিশ কোনো গুলি করেনি বলে দাবি করা হয়েছিল।
You cannot copy content of this page