রবিবার- ২০ এপ্রিল, ২০২৫

মোখার প্রভাবে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ

চট্টগ্রামে জ্বলছে না চুলা, চলছে না গাড়ি বেড়েছে লোডশেডিং

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে কক্সবাজারের মহেশখালীর দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখায় শুক্রবার রাত ১১টা থেকে চট্টগ্রামে মিলছে না গ্যাস। এতে নগরীর বাসাবাড়িতে জ্বলেনি চুলা।

ফলে খাবার সংকটে হোটেল-রেস্টুরেন্টে ছুটোছুটি শুরু করে মানুষ। এ সুবাধে খাবারের দাম দ্বিগুণ আদায় করেন হোটেল-রেস্টুরেন্টের মালিকরা। রবিবার (১৪ মে) পর্যন্ত এই অবস্থা বিরাজ করছে। একইসাথে ফিলিং স্টেশনগুলোতেও গাড়িতে গ্যাস মিলছে না। ফলে রাস্তায় সিএনজিচালিত যানবাহনও কমে যায়।

চালকদের ভাষ্য, গ্যাস সরবরাহ বন্ধের ব্যাপারে আমাদের আগেই জানানো দরকার ছিল। এখন আমরা গ্যাস নেব কিভাবে? গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি, মালিককে তো টাকা দিতেই হবে। কিন্তু গাড়ি চালাতে না পারলে টাকা কোথা থেকে দেব? নিজেকেও তো না খেয়ে থাকতে হবে।

শুধু চালক নয়, যাত্রীরাও সড়কে গাড়ি না পেয়ে নানা ভোগান্তির কথা জানান। এরমধ্যে নগরীর লালখান বাজারের অবস্থিত একটি আবাসিক হোটেলের কর্মচারী সোহরাব মিয়া বলেন, গাড়ি না পেয়ে নগরীর বহদ্দারহাট থেকে চার কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে অফিসে যেতে হয়েছে। তাও আবার গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যে। অর্ধেক ভিজে এখন আমার শরীর অসুস্থ লাগছে।

গাড়ি না পেয়ে নগরীর ব্যবসায়ীরাও এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে না পারার কথা জানান। এরমধ্যে নগরীর মুরাদপুর সুন্নিয়া মাদরাসা এলাকার বাসিন্দা নুুর মোহাম্মদ বলেন, নগরীর জুবিলী রোডে আমার হার্ডওয়ারের দোকান আছে। সকালে সেখানে যেতে রাস্তায় এসে দেখি গাড়ি নেই। পরে একটি রিকশায় ৮০ টাকা ভাড়া দিয়ে দোকানে যায়। গ্যাসের কারণে সড়কে গাড়ি কমে যাওয়ায় নগরীর বহু মানুষ দিনভর ভোগান্তিতে পড়েছে বলে জানান তিনি।

শুধু সড়কে নয়, গ্যাস না থাকায় সবচেয়ে বড় হাহাকার চলছে নগরীর বাসাবাড়িতে। শনিবারের মতো রবিবারও সকাল থেকে নাস্তা ও দুপুরের খাবারের জন্য মানুষ নিকটস্থ হোটেল-রেস্টেুরেন্টগুলোতে ছুটতে থাকে। এ সুবাধে হোটেল-রেস্টেুরেন্টের মালিকরাও খাবারের দাম দ্বিগুণ আদায় করছে।

নগরীর চকবাজার এলাকার বাসিন্দা ও সরকারি মুসলিম হাই স্কুলের শিক্ষক জাহেদুল আলম বলেন, গ্যাস না থাকার সুবাধে সিলিন্ডার গ্যাস দিয়ে খাবার তৈরী করে বিক্রী করছে হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো। রবিবার দুপুরে সাদিয়া কিচেন নামে একটি হোটেলে দেড় প্লেট ভাত সিঙ্গেল মুরগির মাংস ও ডাল কিনতে গিয়ে গুণতে হলো ৬০০ টাকা। যা আগে ২৭০ টাকায় বিক্রয় করা হতো। এছাড়া চকবাজারের বিভিন্ন হোটেলে ১০ টাকার একটি পরোটা বিক্রয় করা হচ্ছে ৩০ টাকায়। ৫০ টাকার সবজি বিক্রয় করা হচ্ছে ১০০ টাকায়।

এদিকে সবচেয়ে বড় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে মধ্যবিত্ত ও অসচ্ছল পরিবারগুলোকে। গ্যাস না থাকার কারণে তাদেরকে বাসা-বাড়ির ভেতর বা ছাদে এমনকি আশপাশে মাটি বা ইট দিয়ে চুলা বানিয়ে রান্না করে খাবার তৈরী করতে হয়েছে। ফলে এসব পরিবারের গৃহিনীদের ভোগান্তি উঠেছে চরমে।

নগরীর খুলশী থানার ঝাউতলার মুরগির ফার্ম এলাকার বাসিন্দা ফেরদৌস আকতার জানান, গ্যাস না থাকায় গত শনিবার থেকে দু‘দিন চুলায় আগুন জ্বলেনি। বাসার ভেতরে ইটের চুলা তৈরী করে ভাত-তরকারি রান্না করেছি। কবে যে গ্যাস আসবে সেই অপেক্ষায় আছি।

ভুক্তভোগীরা জানান, গ্যাসের সাথে বিদ্যুতের লোডশেডিংও বেড়েছে চট্টগ্রামে। ঘুর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগেও রাতের বেলা প্রায় অন্ধকারে থাকতে হচ্ছে। এতে চলমান এসএসসি ও আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতেও ব্যাপক প্রভাব পড়ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারি প্রকৌশলী কে এম সামশুল আরফিন বলেন, দুর্যোগকালীন বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থা নানাভাবে ব্যাহত হয়। ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে ইতোমধ্যে মহেশখালীর দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গত শুক্রবার রাত ১১টায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা অঞ্চলে শনিবার থেকে গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। পরবর্তীতে ঝড়ের পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্রত গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করা হবে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) সূত্র জানায়, শনিবার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১২ হাজার ৮০ মেগাওয়াট, উৎপাদন হয় ১০ হাজার ৭৪৯ মেগাওয়াট। এ সময় বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল এক হাজার ৯৫৯ মেগাওয়াট।

বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড ক¤পানি অব বাংলাদেশ সূত্র বলছে, এলএনজি সরবরাহ বন্ধের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন সাড়ে ৯ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। তাই সব বিতরণ সংস্থাকে ন্যাশনাল লোড ডেসপাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) নির্দেশনা মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছে তারা।

গ্যাস সরবরাহের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পাানী লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) উপ মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ ও সমন্বয়) মীর মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, ঘুর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে মহেশখালীর দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে সরবরাহ বন্ধ থাকায় পাইপলাইনে গ্যাস সঞ্চালন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এ জন্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।

কেজিডিসিএলর বিপণন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (উত্তর) প্রকৌশলী মো, শফিউল আজম খান বলেন, গ্যাস সরবরাহে সংকট কখন কমবে সেটা এই সঠিকভাবে বলতে পারছি না। এক সপ্তাহ লাগতে পারে, এর বেশিও লাগতে পারে। তবে কিভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হবে, সেটা মন্ত্রণালয়ে উর্ধ্বতনরা চিন্তাভাবনা করছেন। শিগগরিই মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page