চট্টগ্রামের চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর এলাকায় নির্মাণাধীন একটি ডকইয়ার্ডে স্যান্ড ব্লাস্টিং বা বালির বিস্ফোরণ পরিবেশকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে। ধুলোয় ঢেকে যাচ্ছে আশপাশ, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকার মানুষ। এমন অভিযোগ স্থানীয় ভুক্তভোগীদের।
ভুক্তভোগীরা জানান, এ বিষয়ে অভিযোগের পরও স্থানীয় প্রশাসন কার্যত নীরব। পরিবেশ অধিদপ্তর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে স্যান্ড ব্লাস্টিং করেই চলেছে ডকইয়ার্ডের মালিকপক্ষ। ফলে ধুলো-বালি ও শব্দদূষণে অতিষ্ঠ শত শত মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে ডকইয়ার্ডের পাশে বিক্ষোভ করেছেন।
বিক্ষোভকারীরা জানান, সরকারি খাস জমি ও জনগণের চলাচলের রাস্তা দখল করে প্রান্তিক গ্রুপ নামে একটি কো¤পানি অবৈধভাবে ডকইয়ার্ড নির্মাণ করছে। ভারী যানবাহনের চাপের কারণে দুর্ঘটনায় অতীতে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এখন তারা জাহাজের রং-জং তোলার জন্য স্যান্ড ব্লাস্টিং মেশিন চালাচ্ছে, যা থেকে ধুলো-বালি ও বিষাক্ত কণা ছড়িয়ে মারাত্নক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
তারা জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা ধরে চলা স্যান্ড ব্লাস্টিংয়ে আশপাশের ঘরবাড়ি ও গাছপালা ধুলোয় সাদা হয়ে যায়। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মাস্ক পরেও সুরক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। বিষাক্ত বাতাস শ্বাসের সঙ্গে শরীরে ঢুকছে। যা সইতে না পেরে শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে ধুলো-বালি ও শব্দদূষণে অতিষ্ঠ শতাধিক মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে ডকইয়ার্ডের পাশে বিক্ষোভ করেছেন।
তাদের দাবি, জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। এর আগে গত ৮ আগস্ট এলাকাবাসী গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন বলে জানান স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহমুদুল হক সুমন।
তিনি বলেন, প্রান্তিক কো¤পানিকে বারবার বললেও তারা নিয়ম মানছে না। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন ফয়সাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু স্যান্ড ব্লাস্টিং বন্ধের কোন নির্দেশনা তিনি দেননি।
এ বিষয়ে জানতে পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রামের উপপরিচালক মো. মোজাহিদুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং তাদের কাজ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা উপেক্ষা করেই তারা রাতভর কাজ করছে। অফিসিয়াল প্রক্রিয়া অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্যানেল চেয়ারম্যান আবু তাহের বলেন, ইউএনও অফিসে এ বিষয়ে একবার বৈঠক হয়েছে, আবারও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। আশা করি শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব কান্তি রুদ্র বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরও কেন তারা কাজ চালাচ্ছে, সেটি আমরা খতিয়ে দেখছি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রান্তিক ডকইয়ার্ড কো¤পানির চেয়ারম্যান মো. গোলাম সরওয়ার সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর বলেন, আমি ব্যস্ত আছি। এ বিষয়ে কথা বলতে পারছি না এখন। এ কথা বলেই তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেন। এরপর মুঠোফোন বিজি করে রাখেন তিনি।
পরিবেশবিদরা সতর্ক করেছেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এভাবে স্যান্ড ব্লাস্টিং চলতে দেওয়া ভয়ংকর পরিবেশগত ঝুঁকি তৈরি করছে। প্রশাসনের উদাসীনতায় ডকইয়ার্ড মালিকরা দায়মুক্ত থেকে যাচ্ছে। এ দায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিতে হবে। এদিকে ভুক্তভোগীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে তারা উচ্চ আদালতে রিট করবেন।
You cannot copy content of this page