সোমবার- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫

ধারাবাহিক প্রতিবেদন-২

চট্টগ্রামে রেলের শতকোটি টাকার স্ক্র্যাপের গোপন ভান্ডার

চট্টগ্রামে রেলের শতকোটি টাকার স্ক্র্যাপের গোপন ভান্ডার

# ক্রমান্বয়ে পাচার হচ্ছে ময়লার গাড়িতে
# সাম্প্রতিক অভিযানে ধরা পড়েছে ৪ কোটি টাকার স্ক্র্যাপ
# কারসাজিতে সরঞ্জাম শাখার পরিদর্শক সাজ্জাদ চক্র

ট্টগ্রামে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের শতকোটি টাকার মালামাল ও স্ক্র্যাপের গোপন ভান্ডার গড়ে তোলা হয়েছে। রেলওয়ের পাহাড়তলি ক্যারেজ ও ওয়াগন কারখানায় সম্প্রতি এক অভিযানে এমন প্রায় ৪ কোটি টাকার মালামাল ধরা পড়েছে। ওই কারখানায় ১৬টি বিকেসি গাড়িসহ গোপনে মজুদ করা হয়েছে আরও শত শত টন স্ক্র্যাপ।

যা প্রতিদিন ক্রমান্বয়ে ময়লার গাড়িতে করে পাচার করা হচ্ছে। যার সাথে জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তর (সরঞ্জাম শাখা) পরিদর্শক সাজ্জাদুল ইসলাম, পাহাড়তলি ক্যারেজ ও ওয়াগন কারখানার প্রাক্তন কর্মব্যবস্থাপক আমির উদ্দিন, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সংঘবদ্ধ একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারি জড়িত রয়েছে।

যাদের দূর্নীতি আড়াল করতে এই ক্যারেজ ও ওয়াগন কারখানায় সাংবাদিক প্রবেশে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা জারী করে রেখেছে। যদিও ঠিকাদার-সাপ্লাইয়ার থেকে রাজনৈতিক নৈতাকর্মীসহ অন্য কারো সেখানে প্রবেশে কোন বাঁধা নেই।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর শনিবার রেলওয়ের সরঞ্জাম শাখা ও ক্যারেজ কারখানার একাধিক কর্মচারি এমন তথ্য জানিয়েছেন। যারা ক্যারেজ ও ওয়াগন কারখানা থেকে ডিজেল সপ কারখানায় আসা যাওয়ার পথের পশ্চিমে গোপন ভান্ডারে লুকানো এসব স্ক্র্যাপের ছবি ও স্ক্রাপ ভর্তি বিকেসি গাড়ির নাম্বারসহ তথ্য প্রদান করেন। যারা খুব কঠিনভাবে নাম প্রকাশ না করার শর্ত আরোপ করেন।

তারা বলেন, ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে চট্টগ্রাম জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরের (সরঞ্জাম শাখা) পরিদর্শক সাজ্জাদুল ইসলাম দায়িত্ব গ্রহণের পর ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে যেভাবে স্ক্র্যাপ ও ডিপোর মালামাল লুটপাট হয়েছে তা রেলের ইতিহাসে কখনো হয়নি। এই লুটপাট এখনো অব্যাহত আছে।

সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, দূর্নীতির মহাগুরু হলেও সাজ্জাদুল ইসলাম তার নিয়ন্ত্রণকারী উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মুখে যেন একজন দেবতা। তার মতো সৎ অফিসার নাকি রেলে আর কেউ নেই। এর নেপথ্যে চুরির ভাগ পৌছে যায় দূর্নীতিবাজ এসব কর্মকর্তার কাছে। আবার একই কথা শুনা যায় কতিপয় সুবিধাভোগী ঠিকাদার-সাপ্লাইয়ার ও স্ক্র্যাপ পাচারকারীর মুখেও।

অথচ ২০২১ সালে সাজ্জাদুল ইসলাম যখন জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তর (সরঞ্জাম শাখা) পরিদর্শক পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন তিনি ছিলেন আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর। আর ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের পর তিনি হয়ে যান বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত অফিসার।

আর তিনিই ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংঘবদ্ধ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে গত এক দশকে সবচেয়ে বড় স্ক্র্যাপের টেন্ডার দেওয়ার অনুমতি পান। আর এই টেন্ডার নিয়েই দূর্নীতির মহাকান্ড ঘটিয়ে দেন সাজ্জাদুল ইসলাম। সূত্র মতে, এই টেন্ডারে ৮ আইটেমের ১৪০৯ দশমিক ০১৫ মেট্রিক টন স্ক্র্যাপ (দরপত্র প্যাকেজ নং সেল/২২/২০২৩) টেন্ডার মুলে বিক্রয় করা হয়।

যার সাথে প্রায় ৬০ টন মূল্যবান স্ক্র্যাপ ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যাই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। যা ডিপো থেকে বের হওয়ার পর সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। সেনাবাহিনী তখন ট্রাকভর্তি স্ক্র্যাপ রেলওয়ে পুলিশের কাছে অর্পণ করে। আর এই ঘটনায় রেলওয়ের তৎকালীন কর্মকর্তা সরদার শাহাদাত হোসেন (বর্তমানে এলপিআরে) ওয়ার্কশপের তৎকালীন ব্যবস্থাপক আমির উদ্দিন, ডিপোর সহকারী গোলাম রাব্বানী ও নজরুল ইসলাম স্ক্র্যাপ বোঝাই করার দায়িত্বে ছিলেন। ফলে তারা সকলে মিলে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

আরও পড়ুন :  নির্বাচন কমিশন প্রতীকের সংখ্যা বাড়াতে-কমাতে পারে : সিইসি

এক পর্যায়ে ঘটনা প্রকাশ না করতে চট্টগ্রামে চাঁদাবাজ তৈরীর কারখানা খ্যাত একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের রেলবিটের এক সাংবাদিককে ১০ লাখ এবং ঢাকা থেকে সম্প্রচারিত স্বনামধন্য একটি টেলিভিশন চ্যানেলের এমডিকে ২৫ লাখ টাকা ঘুষ প্রদান করা হয়। এ ঘটনায় সরদার শাহাদাত হোসেনের ডিজির পদোন্নতি ৬ মাসের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। আর সাজ্জাদুল ইসলাম স্কেল হেল্ডাপের দন্ড পান। আর শাস্তিমুলক বদলি পান আমির উদ্দিন, গোলাম রাব্বানী ও নজরুল ইসলাম। কিন্তু ওই চেয়ারে এখনও আসীন আছেন সাজ্জাদুল ইসলাাম।

যারা ক্রমান্বয়ে পাহাড়তলি রেলওয়ের ক্যারেজ কারখানা ও ডিজেল সপ কারখানায় স্ক্রাপের গোপন ভান্ডার গড়ে তোলেন। যেখান থেকে ক্রমেই ময়লার গাড়িতে করে পাচার করা হচ্ছে এসব স্ক্র্যাপ। গত ১৬ জুলাই এই কারখানা থেকে ময়লার গাড়ির আড়ালে মূল্যবান যন্ত্রাংশ ও স্ক্র্যাপ পাচারের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ওই গাড়িচালককে আটক করে খুলশী থানার পুলিশ। পরে ওই গাড়ি চালক মো. রাসেলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারখানার তৎকালীন কর্মব্যবস্থাপক রাজীব কুমার দেবনাথ মালামাল চুরির এবং চালক বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রাসেল রেলওয়ের নিয়মিত গাড়িচালক। প্রতিদিন সে কারখানা থেকে ময়লা অপসারণ করে। এ সুযোগে সে স্ক্র্যাপ ও সরঞ্জাম চুরি করে বলে স্বীকার করে। ফলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

তবে এসব স্ক্র্যাপের গোপন ভান্ডার সম্পর্কে আমার জানা নেই। কারণ আমি গত ২-৩ মাস আগে এখানে জয়েন্ট করেছি। এসব বিষয়ে জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তর, সরঞ্জাম শাখার পরিদর্শক জানার কথা। তিনিই মূলত এই স্ক্র্যাপের দায়িত্বে রয়েছেন।

এ বিষয়ে সিএমপির খুলশী থানার ওসি মো. আফতাব হোসেন জানান, মালামালগুলো রেলের স্ক্র্যাপ বলেই কর্মকর্তারা শনাক্ত করেছেন। তবে এ ঘটনায় মামলা না করে উল্টো সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে মালগুলো রাবিশ উল্লেখ করে পুলিশকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যা সত্যিই বিস্ময়কর।

স্ক্র্যাপ পাচারের ঘটনা শুধু এখানে নয়, গত বছর ৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে রেলের সিজিপিওয়াই ইয়ার্ড থেকে তিন ট্রাক স্ক্র্যাপ চুরি করে পাচার করা হয়। ট্রাকগুলো ঢাকায় যাওয়ার পথে মিরসরাই থানা পুলিশ আটক করে। এর আগে ১৪ আগস্ট রেলের ওয়ার্কশপ থেকে সরঞ্জাম ও স্ক্র্যাপ চুরির ঘটনা ঘটে। যার মুল্য কোটি টাকারও বেশি।

এভাবে প্রায়ই প্রতিমাসে রেলওয়ের নিউ ডিপো, সেল ডিপো, ক্যারেজ, ওয়ার্কশপ, সরঞ্জাম ক্রয় স্টোরসহ বিভিন্ন স্টেশনে রাখা কোটি কোটি টাকার স্ক্র্যাপ চুরির ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে কয়েকটি ঘটনা পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর প্রকাশ পায়। নতুবা স্ক্র্যাপ পাচার গোপনেই থেকে যায়।

আরও পড়ুন :  সিএমপির ‘মানিলন্ডারিং’ তালিকায় ১৪৫ নেতা ও মন্ত্রী-এমপির নাম

চাঞ্চল্যকর এমন আরেকটি ঘটনা ঘটে খোদ পাহাড়তলি রেলওয়ের সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরে। যেখানে গড়ে তোলা গোপন ভান্ডার থেকে উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় চার কোটি টাকার মালামাল। দীর্ঘদিন ধরে লুকিয়ে রাখা এসব মালামাল গোপন রেখে পরিদর্শক সাজ্জাদুল ইসলাম ও অনুসারি সংঘবদ্ধ অসাধু কর্মচারীরা।

কিন্তু এক চালানের লাইট সরবরাহ তদারকির সময় ধরা পড়ে নিখুঁত কারসাজি। যা ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে দরপত্র আহ্বান করে বেচে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল তারা। কিন্তু বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর অভিযানে নামে সাজ্জাদুল ইসলাম। তিনিই এসব মালামাল উদ্ধারের কথা বলে লালিত সাংবাদিকদের দিয়ে তা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যা সাজানো নাটক বলে দাবি করেন কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরের অধীনে ২৫ ওয়াটের ১২৮৪ পিস এলইডি লাইট সরবরাহের দরপত্র পায় মেসার্স এন জে ট্রেডার্স। লাইট প্রতিটি মূল্য ছিল ৭৫৪ টাকা। ৯ লাখ ৭০ হাজার ৭০৪ টাকায় এই কার্যাদেশ পায় প্রতিষ্ঠানটি।

তবে ঠিকাদরি প্রতিষ্ঠান দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা তাফসীর নামে ওই ব্যক্তি এ কাজে আরেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সামারা এন্টারপ্রাইজর স্বত্বাধিকারী পারভেজের সহযোগিতা চান। পারভেজ তাকে এসব লাইট সরবরাহ করার বিষয়ে আশ্বাস দেন।

কথা অনুযায়ী ১২ জুলাই লাইট বুঝিয়ে দেওয়া কথা জানান পারভেজ। কিন্তু সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তিনি লাইট পৌঁছাননি। পরে জানান, লাইট অলরেডি ডিপোতে জমা হয়ে গেছে। এ সময় নিশ্চিত হকে তাফসীর ফোন দেন ডিপো এইচ এর ইনচার্জ নাছির উদ্দিনকে। তিনি লাইট বুঝে পেয়েছেন বলে জানান।

পরদিন নিজের চোখে লাইট দেখতে যান তাফসীর। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন ৮০০টি লাইট নতুন, অপর ৪৮৪টি পুরাতন। এছাড়া নতুন লাইটগুলোর ম্যানুফেকচারিং ব্যাচের সঙ্গে পুরাতনগুলো তারিখে ফারাক আছে। এরপর তিনি এ বিষয়টি জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরে জানান।

এ ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের গিয়ে প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরের (ইন্সপেকশন) সহকারী পরিদর্শক রফিক উল্লাহ সরঞ্জাম শাখা ডিপোর এইচ ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন। তিনি দেখেন, সরবরাহ করা ৮০০ লাইটের ইনডেন্ট নম্বর ROP NDP1,২০২৪/৩৯৫ , ইনভেন্টর তারিখ- ৬/১০/২০২৪। এসব লাইটের সিরিয়াল, ব্যাচ একই। কিন্তু ৪৮৪ লাইট পুরাতন। পুরাতন এসব লাইটের মূল্য সাড়ে ৩ লাখের বেশি।

এরপর জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তর (সরঞ্জাম শাখা) পরিদর্শক সাজ্জাদুল ইসলামসহ ১০টি ডিপোর সাতটিতে অভিযান চালায়। অভিযানে পাওয়া মালামালগুলোর মধ্যে এনার্জি লাইট, হ্যালোজি, এলইডি, টিউব লাইটসহ বিভিন্ন আইটেমের প্রায় ২৪ হাজার লাউট আছে। আরও আছে ট্রেনের দরজার মেইন ডোর লক, হিংস ডোর লক, এসি কোচের জানালার চায়না গ্লাস, আমদানি করা ফিল্টার ডায়েসসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সামারা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী পারভেজ এলইডি লাইট ব্যবস্থা করে দেওয়া কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, আগে ট্রান্সকম ইলেক্ট্রনিক্সের কর্মচারী ছিলেন তিনি। সে সুবাদে তাফসীরের অনুরোধে এসব লাইট সরবরাহ করেছেন তিনি। কত পিস লাইট সরবরাহ করেছেন এবং সরবরাহ দেওয়ার সময় তাফসীরকে জানাননি কেন, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আগেও আমি ১৮০০ পিস লাইট সরবরাহ করেছি।

আরও পড়ুন :  সিএমপির ‘মানিলন্ডারিং’ তালিকায় ১৪৫ নেতা ও মন্ত্রী-এমপির নাম

এ ঘটনায় তুলকালাম কান্ড শুরু হয় রেলওেেয় পূর্বাঞ্চলে। সমালোচনার মুখ থেকে বাচতে এবং নিজেকে সাধু সাজাতে তড়িঘড়ি করে বদলির আবেদন করেন জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সরঞ্জাম শাখা) পরিদর্শক সাজ্জাদুল ইসলাম।

বদলির আবেদন করার কারণ জানতে চাইলে সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, এখানে চাকরির ৩ বছর হয়েছে। তাই স্বেচ্ছায় বদলির আবেদন করেছি। এক্ষেত্রে স্ক্র্যাপ ও মালামাল পাচারের বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি। একপর্যায়ে ব্যস্ততা দেখিয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) কমান্ড্যান্ট শহীদ উল্লাহ বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়েছি সম্প্রতি। তাই আমি অনেক কিছুই জানি না। আপনি বলেছেন যখন খোঁজ নিব। অনিয়ম কিছু পেলে আমি সোজা ফায়ারড করে দিব, এই বিশ্বাসটুকু আমার উপর রাখতে পারেন। এ সময় তিনি মুঠোফোনে ক্যারেজ ও ওয়াগন কারখানায় থাকা আরএনবির সদস্যদের কাছ থেকে এসব বিষয়ে নানা তথ্য জানার চেষ্টা করেন।

সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা কেন হবে। এটি রেলের কারখানা হওয়ায় সর্বসাধারণের প্রবেশে বিধিনিষেধ আছে। কিন্তু শুনছি, বিধিনিষেধ কেউ মানে না। আর সাংবাদিকরা তো অনুমতি নিলে প্রবেশ করতে পারার কথা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক বেলাল উদ্দিন বলেন, স্ক্র্যাপ পাচারের ঘটনায় সাজ্জাদ জড়িত ছিল না। ভুল বুঝাবুঝির কারণে বিভাগীয় দন্ড হিসেবে তার স্কেল হেল্ডাপ হয়েছিল। তবে স্ক্র্যাপ পাচারের ঘটনাগুলো মাঠ পর্যায়ে হওয়ায় অনেক কিছু আমাদের নজরে আসে না। বিষয়টি আমি দেখছি।

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার এখানে এখন অফিসার সংকট। একেকজন অফিসার একাধিক দপ্তরে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছে। তাছাড়া এসব বিষয়ে সাজ্জাদুল ইসলাম নিজেই বদলির জন্য আবেদন করে বসে আছে। আপনাদের এসব কারণে অফিসার না থাকলে আমি দপ্তরগুলো তো অচল হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কারখানায় প্রতিবছর সাড়ে ৯০০ যাত্রীবাহী ও প্রায় ৭ হাজার মালবাহী বগির রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত কাজ হয়। ফলে এখানে বিপুল পরিমাণ যন্ত্রাংশ ও স্ক্র্যাপ জমা থাকে, যা চক্রের মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে।

ঈশান/মখ/মউ

(বি: দ্র: রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল, চট্টগ্রাম জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরের সরঞ্জাম শাখার পরিদর্শক প্রকৌশলী সাজ্জাদুল ইসলামের নানা অনিয়ম ও দূর্নীতি নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে। প্রিয় পাঠক এবার প্রতিবেদন-৩ দেখতে চোখ রাখুন দৈনিক ঈশানের অনলাইন ও প্রিন্ট ভার্সনে)

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page