Skip to content

বুধবার- ৪ জুন, ২০২৫

চট্টগ্রামে সিনেমাবিমুখ দর্শকদের হলে ফেরাল মুজিব

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে নির্মিত মুজিব: একটি জাতির রূপকার চলচ্চিত্রটি সাড়া ফেলেছে চট্টগ্রামে। চলচ্চিত্রটি দেখতে গত পাঁচ দিন ধরে হলে ছুটছেন সিনেমাবিমুখ দর্শকরা। নগরীর তিন প্রেক্ষাগৃহে চলছে চলচ্চিত্রটি। প্রায় প্রতিটি প্রেক্ষাগৃহের প্রতিটি শো হাউজফুল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরীর ফিনলে স্কয়ারের সিলভার স্ক্রিন সিনেপ্লেক্সের কর্মকর্তা মো. শাহেদ মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে বলেন, সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার পর থেকে প্রতিটি শো হাউজফুলই ছিল। দর্শকদের ভিড় লেগেই আছে প্রেক্ষাগৃহে। বরং অনেকে টিকেট নিতে এসে না পেয়ে চলে গেছে।

তিনি বলেন, গত কয়েক যুগ ধরে বাংলা চলচ্চিত্রে দর্শকদের খড়া লেগেই আছে। দর্শকদের অভাবে চট্টগ্রামের সবগুলো সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সিনেমা হল সিলভার স্কিন সিনেপ্রেøক্স প্রতিষ্ঠা করেও দর্শক তেমন মিলছিল না। সেখানে মুজিব : একটি জাতির রুপকার চলচ্চিত্রটি দর্শকদের হলমুখি করে তুলেছে। এতে আশার সঞ্চার হচ্ছে। আশা করছি এ ধরণের চলচ্চিত্র নির্মাণ হলে দর্শকদের ধরে রাখা সম্ভব হবে।

একই কথা বলেছেন, নগরীর চকবাজার এলাকায় বালি আর্কেড মার্কেটে প্রতিষ্ঠিত স্টার সিনেপ্লেক্সের জনসংযোগ কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, সিনেমাটি নিয়ে আমাদের হলে বেশ সাড়া পাচ্ছি। দর্শকরা সিনেমাটি দেখছেন। তাদের ভালো লাগছে। প্রায়ই শো হাউজফুল থাকছে। তবে সকালে দর্শক একটু কম থাকে।

স্টার সিনেপ্লেক্সের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের ৮৫ আসনের হলে প্রতিদিন তিনটি শো দেখানো হয়। সকাল ১১টা, বিকেল ৩টা ও সন্ধ্যা ৭টায়। এসব শো-তে আগে তেমন দর্শক মিলত না। মুজিব দেখতে শুরু থেকে দর্শক উপচে পড়ছে। সকালে দর্শক কিছু কম থাকলেও বিকেল ও সন্ধ্যার শো সবসময়ই হাউজফুল থাকে। অনেকে আগেভাগে টিকেট কিনতে হলে হাজির হচ্ছে। আবার আগেই বুকিং হয়ে যাওয়ায় কাউকে কাউকে ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। কারণ বিকেল ও সন্ধ্যার শো দেখার জন্য আগেই টিকিট কেটে রাখছেন দর্শকরা।

সুগন্ধা সিনেমা হলের স্বত্বাধিকারী সাইফ হোসাইন বলেন, রিলিজ হওয়ার দিনেই আমাদের হলে সিনেমাটি হাউজফুল ছিল। সব শোতেই দর্শকদের ভিড় ছিল। এখানে ২১৬টি সিট আছে। সিনেমাটি আমাদের আরও এক মাস চালানোর ইচ্ছা আছে। আমাদের একটিমাত্র সিংগেল স্ক্রিন। আরেকটি থাকলে আরও বেশিদিন দেখাতাম।

সিনেমাটি কারা দেখতে আসছেন জানতে চাইলে সাইফ হোসাইন বলেন, সব বয়সের মানুষই সিনেমাটি দেখতে আসছেন। ফ্যামিলি বা করপোরেট গ্রুপ নিয়েও আসছেন অনেকে। তরুণ-তরুণী ও শিক্ষার্থীরা আসছে। বলতে গেলে সবার দেখার মতো একটি সিনেমা।

মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) হলগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, দর্শকদের অধিকাংশই তরুণ-তরুণী, এদের বেশির ভাগই আবার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। চাকরিজীবীরাও যাচ্ছেন, কেউ একা, কেউ বন্ধু-বান্ধব কিংবা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। মুজিবের বায়োপিক দেখে কেউ আবেগে ভেসেছেন, কেউ বঙ্গবন্ধুর চরিত্র ও ইতিহাসের নির্মোহ রূপায়ন নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

সুগন্ধা সিনেমা হলে মুজিব বায়োপিক দেখলেন বেসরকারি প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ইসলামিক ইতিহাসের মাস্টার্স পড়ুয়া একদল শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে আদনান আয়াত হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, সিনেমা ভালো লেগেছে। তবে ইতিহাসের অনেক কিছুই বাদ পড়েছে। বিশেষ করে জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীকে সিনেমাটিতে দেখানো হয়নি। ১৬ ডিসেম্বর আত্নসমর্পণের ইতিহাস বাদ পড়েছে। এরকম আরও অনেক বিষয় আছে। এগুলো হয়তো সাধারণ মানুষ নাও বুঝতে পারে। তবে যারা মোটামুটি ইতিহাস জানেন, তাদের সবার মনে এসব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন জাগবে।

স্টার সিনেপ্লেক্সে মুজিব দেখতে যাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইকবাল হোসেন বলেন, কয়েকজন বন্ধু মিলে সিনেমাটি দেখলাম। ভালোই লেগেছে। ছোটবেলা থেকে বইয়ে বঙ্গবন্ধু স¤পর্কে পড়ছি। কয়েকটি সিনেমাও হয়েছে তাকে নিয়ে।

দর্শকদের মতে, টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেওয়া শেখ মুজিব কীভাবে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছেন, কীভাবে জাতির পিতাতে পরিণত হয়েছেন, সেই ইতিহাসই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সিনেমাটিতে। তবে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে আরেফিন শুভকে মানানসই মনে হয়নি। সে-ও হয়তো মানিয়ে নিতে পারেনি। জাতির জনকের বায়োগ্রাফি যেহেতু, নির্মাতাদের আরও চিন্তা করা উচিত ছিল। অন্য চরিত্রগুলো বরং ভালো লেগেছে। বিশেষ করে খন্দকার মোশতাক, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের চরিত্রগুলো ভালো লেগেছে।

এর আগে শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) দেশের ১৫৩টি প্রেক্ষাগৃহে মুজিব: একটি জাতির রূপকার মুক্তি পেয়েছে। চট্টগ্রামে মুক্তি দেয়া হয়েছে তিনটি প্রেক্ষাগৃহে। এগুলো হলো- বালি আর্কেড মার্কেটের স্টার সিনেপ্লেক্স, কাজির দেউড়ির সুগন্ধা সিনেমা হল এবং ফিনলে স্কয়ারের সিলভার স্ক্রিন সিনেপ্লেক্স।

বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবিটির পরিচালক ভারতের খ্যাতিমান নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল। বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ ও ভারতের ৪০ শতাংশ ব্যয়ে নির্মিত এ বায়োপিকের শুটিং ২০২১ সালের ২২ জানুয়ারি ভারতের মুম্বাই ফিল্ম সিটিতে শুরু হয়। শেষ হয় একই বছরের ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশে। গত বছরের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে চলচ্চিত্রটির প্রথম পোস্টার, ৩ মে দ্বিতীয় পোস্টার ও ১৯ মে ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটির ট্রেইলার রিলিজ করা হয়।

ভারতের অতুল তিওয়ারি ও শামা জায়দির ইংরেজি চিত্রনাট্য থেকে আসাদুজ্জামান নূরের তত্ত্বাবধানে বাংলায় রূপায়িত এই ঐতিহাসিক সিনেমায় প্রায় দেড়শ চরিত্রের মধ্যে শতাধিক চরিত্রে বাংলাদেশি শিল্পী অভিনয় করেছেন। মুম্বাইয়ের দাদাসাহেব ফিল্ম সিটি, গোরেগাঁও ফিল্ম সিটিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি, টুঙ্গিপাড়ার গ্রামের বাড়ির আদলে সেট সাজিয়ে দৃশ্য ধারণ করা হয়।

ছবিতে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ। শেখ হাসিনা চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ফারিয়া এবং বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের চরিত্রে নুসরাত ইমরোজ তিশা। তাজউদ্দীন আহমদের চরিত্রে রিয়াজ আহমেদ অভিনয় করেছেন।

অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন দিলারা জামান, চঞ্চল চৌধুরী, সিয়াম আহমেদ, জায়েদ খান, খায়রুল আলম সবুজ, ফেরদৌস আহমেদ, প্রার্থনা ফারদিন দীঘি, রাইসুল ইসলাম আসাদ, গাজী রাকায়েত, তৌকীর আহমেদ ও মিশা সওদাগরসহ দেশের শতাধিক শিল্পী।

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page