Skip to content

শুক্রবার- ৬ জুন, ২০২৫

চট্টগ্রাম ওয়াসায় কর্মচারীদের শীতকালীন কাপড়েও প্রকৌশলীর ভাগ

চট্টগ্রাম ওয়াসায় ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের শীতকালীন কাপড় বরাদ্দের অর্থেও ভাগ বসিয়ে লুটপাট চালাচ্ছেন প্রকৌশলী কেয়া চৌধুরী। ঘাটতি পূরণের নামে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। ফলে কর্মচারীদের কপালে জুটে নিম্নমানের শীতের কাপড়। তাও আবার শীতে মেলেনা শীতের এই কাপড়।

চলতি শীত মৌসুমের শেষপ্রান্তে এসেও শীতের কাপড় জুটেনি কোন কর্মচারীর। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী কর্মচারীদের। এই শীতবস্ত্র হাতে পেতে আরও দু’মাস লাগতে পারে। তখন গরমকাল চলে আসবে বলে জানান কর্মচারীরা।

কর্মচারীরা জানান, চট্টগ্রাম ওয়াসায় ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির মোট কর্মচারী সংখ্যা ৪৬৮ জন। এরমধ্যে নারী কর্মচারীর সংখ্যা ২৫ জন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ হয় ১০ লাখ টাকা। বরাদ্দে নারীদের জন্য শাল এবং পুরুষদের জন্য শার্ট-প্যান্ট রাখা হয়।

এক্ষেত্রে নারীদের শীতের শাল কেনার জন্য ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয় জনপ্রতি ১১০০ টাকা। সেই হিসেবে ২৫ জনের জন্য মোট ক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু তাদের জন্য বরাদ্দ দেখানো হয়েছে ৪ লাখ ৬ হাজার ২৬৫ টাকা। যেখানে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৭৬৫ টাকা লাপাত্তা।

এর আগে গত বছরও নারীদের শাল দেওয়া হয়। কিন্তু সেগুলো ছিল উলেনের, যার ক্রয় মূল্য ছিল প্রতিটি ২৫০-৩০০ টাকা। সেসব শাল নিতে অনেক নারীকর্মী অস্বীকৃতি জানালে তাদের গড়ে ৪০০ টাকা করে দেওয়া হয়। তবে অনেক নারী কর্মচারীর কপালে সেই টাকাও জোটেনি।

এছাড়া ৪৪৩ জন পুরুষ কর্মচারীর জন্য শীতকালীন পোশাকে ফুল স্লিভ সাফারি শার্ট ও প্যান্ট মিলে ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৮৬৫ টাকা। প্রতি পিস শার্টে প্রতিগজ কাপড়ের দাম ধরা হয় ১৮৫ টাকা। প্রতি পিচ শার্টে লাগবে ১ দশমিক ৭৫ গজ। শার্টের মজুরি ধরা হয় ৩০০ টাকা। প্যান্টের উচ্চতায় হবে ৫৬ থেকে ৫৮ ইঞ্চি। প্রতিপিস প্যান্টে লাগবে ১ দশমিক ২৫ গজ কাপড়।

এই কাপড়ের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৮৬৫ টাকা এবং সেলাইয়ের জন্য ১ লাখ ৩২ হাজার ৯০০ টাকা। মোট টাকার পরিমাণ ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৭৬৫ টাকা। কিন্তু ১০ লাখ টাকা হিসেবে নারীদের ৪ লাখ ৬ হাজার ২৬৫ টাকা বাদ দিলে পুরুষদের জন্য বরাদ্দ দাঁড়ায় ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৭৩৫ টাকা। সেই হিসেবে পুরুষদের জনপ্রতি ১৩৪০ টাকা। সেখানেও ২ লাখ ১৪ হাজার ৯৭০ টাকা সরিয়ে রাখা হয়েছে। এবারও একই পথে হাটছে শীতকালীন কাপড় বরাদ্দ নিয়ে।

এছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কর্মচারীদের জন্য জুতা ও মোজার ক্রয়মূল্য ধরা হয়েছে জনপ্রতি ১৮০০ টাকা। ৪৪৩ জন কর্মচারীর জন্য জুতা কেনা হয়েছে ৯ লাখ ৮৪ হাজার ৯০০ টাকা বরাদ্দে। এসব জুতা ও মোজার জন্য ২০২৩ সালের ৫ জুলাই দরপত্র আহ্বান করা হলে চুক্তি সম্পাদিত হয় আগস্টে। চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহ চুক্তি সম্পাদনের শেষ সময় ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর হলেও এখনও চলমান রয়েছে সরবরাহ কার্যক্রম। কিন্তু প্রতিজোড়া জুতা ও মোজা কেনা হয়েছে ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকার মধ্যে।

একইভাবে শীতবস্ত্র ক্রয়মূল্যের ওপর ভিত্তি করে দরপত্র আহ্বান করা হয় গত বছরের ২৩ অক্টোবর। ডিসেম্বরে টেন্ডার উন্মুক্ত করে দরদাতা নির্বাচিত হওয়ার পর ডিসেম্বরের মধ্যেই চুক্তি অনুযায়ী শীতের পোশাক সরবরাহ করার কথা থাকলেও জানুয়ারিতেও তা সম্ভব হয়নি। এসব পোশাক কর্মচারীদের হাতে পৌঁছাবে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে।

তবে ওয়াসার ৩য় ও ৪র্থ কর্মচারীদের নির্ধারিত পোশাক পড়ে অফিসে আসেন না। পায়ে দেন না বরাদ্দ করা জুতাও। এর কারণ জানতে কথা হয় একাধিক কর্মচারীর সঙ্গে। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, যে মানের শার্ট দেওয়া হয়েছে, সেই কাপড় পুরোটাই পলিস্টার ও মোটা, অনেকটা চটের মতো। এ কাপড় গায়ে দিলে শীতে গরমের বদলে অস্বস্তি বেশি লাগে। আর যে জুতা দেওয়া হয়, মাস দুয়েক না যেতেই সেটির সোল্ড খুলে যায়, চামড়া উঠে যায়। তাছাড়া যে জুতাজোড়া দেওয়া হয় তার দাম ৬০০ টাকার বেশি হবে না। বড়জোড় হতে পারে ৭০০ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রকিউরমেন্ট বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী কেয়া চৌধুরী বলেন, পুরুষদের জন্য নির্ধারিত ফুল স্লিভ সাফারি শার্ট ও প্যান্টের হিসেবে প্রতি পিস শার্টে প্রতিগজ কাপড়ের দাম ধরা হয়েছে ১৮৫ টাকা। প্রতি পিস শার্টে লাগবে ১ দশমিক ৭৫ গজ। সাফারি শার্ট ও প্যান্ট উচ্চতায় হবে ৫৬ থেকে ৫৮ ইঞ্চি। শার্টের মজুরি ধরা হয়েছে ৩০০ টাকা। প্রতি পিস শার্ট ও প্যান্টের সেলাই খরচ বাবদ খরচ পড়ছে ৮৬৫ টাকা।

প্রতিপিস প্যান্টে লাগবে ১ দশমিক ২৫ গজ কাপড়। এ হিসেবে শার্ট ও প্যান্টের জন্য কাপড়ের দাম ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৮৬৫ টাকা। সেলাই ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৯০০ টাকা। এই খাতে মোট টাকার পরিমাণ ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৭৬৫ টাকা।

বরাদ্দের টাকা বণ্টনে গরমিলের বিষয়ে জানতে চাইলে কেয়া চৌধুরী বলেন, বরাদ্দের পর বণ্টন শেষে বাড়তি টাকা আমরা রেখে দিই। পরে কোথাও ঘাটতি হলে তা দিয়ে পূরণ করি। তবে দরপত্র ঠিকভাবেই হয়ে থাকে। আর শার্ট-প্যান্টের যে বরাদ্দ থাকে, তা থেকে রিডিউস দামে আমরা আমাদের ক্রয় সম্পাদন করি।

দরপত্র আহ্বানের বিষয়ে জানতে চাইলে কেয়া চৌধুরী বলেন, দরপত্র আহ্বান হলেও উন্মুক্ত করা হয়নি। দরদাতা ক্রয় সম্পাদন শেষ করলে শাল সরবরাহ হতে পারে ফেব্রুয়ারির শেষে অথবা মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে।

নিম্নমানের কাপড় দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কেয়া চৌধুরী বলেন, ‘নিম্নমানের শালের বিষয়ে কোনো নারীকর্মী আমাকে লিখিত অভিযোগ জানাননি। তাহলে আপনি কেমনে জানেন (উত্তেজিত স্বরে)। শার্ট ও প্যান্টের কাপড় এবং জুতার বিষয়েও কেউ কখনও অভিযোগ দেয়নি।

কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ওয়াসা হচ্ছে আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্থ একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে কোনো স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নেই। আর ওয়াসার যিনি প্রধান মানে এমডি, তার নিয়োগই তো অবৈধ। তাহলে সেরকম একজন ব্যক্তি ওয়াসার মত এত বড় প্রতিষ্ঠানে কিভাবে স্বচ্ছতা আনবে?

তিনি আরও বলেন, সরকারি কেনাকাটায় অবশ্যই সরকারি কিছু নিয়ম-কানুন থাকে। কিন্তু শুরু থেকেই আমরা ওয়াসার বিভিন্ন প্রকল্পসহ প্রতিটি স্তরে অনিয়মের হদিস পেয়েছি।

এ বিষয়ে জানতে কথা হয় চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি তো কর্মচারীদের রিসিভ করা কপিতে স্বাক্ষর করি। কেউ তো কখনও আমাকে অভিযোগ জানায়নি। অভিযোগ না জানালে সমস্যা বুঝব কি করে?

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page