
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ট্রানজিটের ট্রায়ালে প্রথমবারের মতো পণ্য গেল ভুটানে। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের বাংলাদেশ সফর করে যাওয়ার একদিন পর দেশটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১৫ টনের একটি চালান নিয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দর হয়ে এবং ভারতের ভূখন্ডের উপর দিয়ে ভুটানে যাবে।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে এই তথ্য নিশ্চিত চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক। তিনি বলেন, ট্রায়াল রান সফলভাবে শেষ হলে দক্ষিণ এশিয়ার এই স্থলবেষ্টিত দেশটি চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ৬৮৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নিয়মিত পণ্য পরিবহন করতে পারবে।
ভুটানি পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ইতিমধ্যে লিখিত সম্মতি প্রদান করা হয়েছে। এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর এইচ আর হেরা জাহাজে করে চালনটি চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। পরদিন ২৫ তারিখ চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি ইয়ার্ডে নামে।
ভুটানের রাজধানী থি¤পুর প্রতিষ্ঠান এবিট ট্রেডিং ওই ২০ ফুটের কনটেইনারে থাইল্যান্ড থেকে ১৫টন খাদ্যসামগ্রী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করেছে। পণ্য চালানটি পরিবহন ও খালাস কাজের জন্য শিপিং এজেন্ট হিসেবে টিআইটু শিপিং বাংলাদেশ লিমিটেড এবং ফ্রেইট ফরোওয়ার্ডার্স হিসেবে সাদেক মাল্টি ট্রেড কাজ করছে।
তবে আনুষ্ঠানিকতার জন্যই মূলত চালানটি দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে ছিল। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের বাংলাদেশ সফরে এসে গত শনিবার (২২ নভেম্বর) বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করে ওই পণ্য চালানটি পরিবহনের (ট্রানজিট) প্রথম পরীক্ষামূলক কার্যক্রম বা ট্রায়াল রান উদ্বোধন করেন।
ওমর ফারুক আরো বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে আমরা অনেক আগে থেকেই ট্রানজিট পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে প্রস্তুত ছিলাম। এর আগে ভারতের দুই চালান সফলভাবে খালাস হয়েছিল। এবার ভুটানের চালানটিও খালাস হচ্ছে। এতে বিভিন্ন শুল্ক করের মাধ্যমে বাংলাদেশ লাভবান হবে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ২২ মার্চ বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে এগ্রিমেন্ট অন দ্য মুভমেন্ট অব ট্রাফিক-ইন-ট্রানজিট চুক্তি ও প্রটোকল সই হয়। গত বছরের এপ্রিলে ভুটানে অনুষ্ঠিত বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছিল যে, পার¯পরিক সুবিধাজনক সময়ে দুটি ট্রায়াল রান স¤পন্ন হওয়ার পর চুক্তিটি কার্যকর হবে।
এর আগে ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ভারতের সাথে ট্রানজিট চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ চারটি ট্রায়াল রান স¤পন্ন করেছিল। চুক্তিটি বাস্তবায়নের দিকে এগোনোর কথা থাকলেও সরকার পরিবর্তনের পর এ বিষয়ে আর কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ভারত কর্তৃক চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের ট্রানজিট ফি ও চার্জ আগে একটি আন্তঃসরকারি কমিটির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছিল। ভুটান চুক্তির অধীনে একটি যৌথ কারিগরি কমিটির চার্জ ও ফি নির্ধারণ করার কথা ছিল।
তবে কমিটি গঠনের আগেই এবং চার্জ চূড়ান্ত হওয়ার আগেই ভুটান ট্রায়াল রানের অনুরোধ জানায়। যেহেতু চালানটি ইতিমধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে, তাই বন্ধুত্বপূর্ণ নিদর্শন হিসেবে বাংলাদেশ এই ট্রায়াল পরিচালনায় রাজি হয়েছে।
ভুটানের এই ট্রায়াল ট্রানজিটের জন্য বাংলাদেশ ফি ও চার্জের একটি তালিকা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছেÑপ্রতি চালানে ডকুমেন্ট প্রসেসিং ফি ৩০ টাকা, ট্রান্সশিপমেন্ট ফি প্রতি টন ২০ টাকা, নিরাপত্তা চার্জ প্রতি টন ১০০ টাকা, এসকর্ট ফি প্রতি কনটেইনারে কিলোমিটার প্রতি ৮৫ টাকা, প্রশাসনিক চার্জ প্রতি টন ১০০ টাকা এবং স্ক্যানিং ফি প্রতি কনটেইনারে ২৫৪ টাকা। এছাড়া সড়ক টোল এবং করিডোর ব্যবহারের ফি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করবে।
You cannot copy content of this page