
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার জন্য চীন সরকারের এডুকেশন ফাউন্ডেশন, ইউনান মিনজু বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ত্রি-পক্ষীয় চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।
ইনস্টিটিউটটি চালু হলে চীনা ভাষা শিক্ষা, যৌথ গবেষণা, উচ্চশিক্ষায় বিনিময় কার্যক্রম এবং দুই দেশের ভাষা-সংস্কৃতির আদান-প্রদানের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে আশা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
চুক্তি ও অবকাঠামো:
চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, চুক্তি অনুযায়ী চবির পক্ষ থেকে ০.৫ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হবে। সেখানে ইউনান মিনজু বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব অর্থায়নে একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আবাসিক অবকাঠামো নির্মাণ করবে। প্রাথমিকভাবে তারা তিন-চারটি কক্ষে ক্লাস, অফিস ও লাইব্রেরি কার্যক্রম শুরু করবে।
ইনস্টিটিউট পরিচালনায় বাংলাদেশ ও চীন মিলিয়ে ১২ সদস্যের বোর্ড অব ডিরেক্টরস থাকবে, যার প্রধান থাকবেন চবির উপাচার্য। প্রতিবছর অন্তত একটি ফিজিক্যাল বা অনলাইন মিটিংয়ের মাধ্যমে কর্মপরিকল্পনা, অগ্রগতি ও সফলতা মূল্যায়ন করা হবে।
বাংলাদেশে প্রথম ‘বাইল্যাঙ্গুয়াল’ ইনস্টিটিউট:
চবির উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন জানান, চবির কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট হবে দেশের প্রথম দ্বিভাষিক (বাইল্যাঙ্গুয়াল) ইনস্টিটিউট। এখানে শুধু চীনা ভাষাই নয়, বাংলাদেশে কর্মরত চীনা নাগরিকদের বাংলা ভাষাও শেখানো হবে। এছাড়া দুই দেশের সংস্কৃতির ওপরও সমান গুরুত্ব দেওয়া হবে।
তাঁর মতে, ইনস্টিটিউটে তিনটি মূল কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এক. ভাষা শিক্ষা: বাংলাদেশিরা চীনা ভাষা শিখবে, চীনা নাগরিকরা শিখবে বাংলা। দুই. যৌথ গবেষণা: উভয় দেশের শিক্ষকরা একে অপরের দেশে গবেষণায় অংশ নেবেন। তিন. উচ্চশিক্ষা বিনিময়: চবির শিক্ষার্থীরা স্কলারশিপ নিয়ে চীনে যেতে পারবে, আর চীনা শিক্ষার্থীরা চবির মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামে পড়তে আসবে। এসবের পুরো অর্থায়ন করবে চীন সরকার ও ইউনান মিনজু বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রাথমিকভাবে ইউনান মিনজু বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগ ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধীনে মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী পাঠাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আগামী এক বছরের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালুর লক্ষ্য রয়েছে। নতুন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ইনোভেশন হাবের পাশে অস্থায়ীভাবে কার্যক্রম শুরু করা হবে।
উপ-উপাচার্য জানান, কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের আয়-ব্যয়ের কাঠামোও নির্ধারণ করা হয়েছে। চবির কোনো খরচ হবে না। তবে আয় হবে সমান ভাগে। ইনস্টিটিউটের পরিচালনায় চবি ও ইউনান মিনজু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুইজন পরিচালক থাকবেন।
বিনা খরচে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশাল সুযোগ:
চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার বলেন, কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট চালুর মাধ্যমে চবি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং গবেষণার সুযোগ অনেক বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, “আমাদের একটি টাকাও খরচ হবে না। বরং আমরা আয় করবো। তারা শুধু ০.৫ একর জায়গা চেয়েছে, আর পুরো অবকাঠামো তারা নিজেরাই করবে। শিক্ষার্থীরা স্কলারশিপ নিয়ে চীনে যেতে পারবে। এটা বড় সুবিধা। বিদেশি শিক্ষার্থী আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংও বাড়বে।”
চীন এ বছরই একজন শিক্ষার্থীকে চবিতে বাংলা বিষয়ে মাস্টার্স এবং একজনকে পিএইচডিতে পাঠাতে আগ্রহী বলেও জানান উপাচার্য।












































